|| মুফতি জাকারিয়া হুসাইন ||
হিজরি বর্ষের অষ্টম মাসের নাম শাবান। এর পরের মাসই হলো- পুণ্যের বসন্ত পবিত্র রমজান মাস। রজব ও শাবান মাস থেকেই নবীজি সা. পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। এ মাসে বরকত হাসিল এবং রমজান মাসে ইবাদত করার সুযোগ ভিক্ষার জন্য দোয়া করতেন। দোয়াটি হলো-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান
অর্থ : হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ২৫৯)
এ মাসে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত রয়েছে। কুরআনের ভাষায় যাকে লাইলাতুম মুবারকা বলে। আমাদের দেশীয় পরিভাষায় ‘শবে বরাত’ বলা হয়ে থাকে।
মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৫৬৬৫)
পবিত্রতার সঙ্গে রমজানকে বরণ করে নেওয়ার জন্য পবিত্র হাদিস শরিফে শাবানের বেশ কিছু ফজিলত ও করণীয় বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো হলো-
হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শাবান মাসের রোজা সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল। ’ ( বায়হাকি: ৮৬৯১ )
হজরত আবু হুরায়রার রা. সূত্রে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘রমজান ঠিক রাখার জন্য শাবানের চাঁদ গণনা কর। ’ ( সুনানে তিরমিযি: ৬৮৭ )
হজরত আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেন, একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! কোন রোজার ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসে রাখা রোজার ফজিলত বেশি। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন দানের ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, রমজান মাসের দানের ফজিলত বেশি। ’ ( বায়হাকি: ৮৭৮০ )
হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বছরের অন্য কোনো মাসে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি। শাবান মাসে তিনি প্রায় সারা মাসই রোজা রাখতেন। খুব সামান্য কয়েক দিন বাদ যেত। ’ –( সুনানে তিরমিযি: ৭৩৬ )
হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের তারিখ এতটাই মনে রাখতেন যতটা অন্য মাসের তারিখ মনে রাখতেন না। শাবানের ২৯ তারিখ চাঁদ দেখা গেলে পরের দিন রমজানের রোজা রাখতেন। আর সেই দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান ৩০তম দিন পূর্ণ করে রমজানের রোজা শুরু করতেন। ’–( সুনানে আবু দাউদ: ২৩২৭ )
হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাস ব্যতীত আর কোনো সময় পূর্ণ মাসব্যাপী রোজা রাখতেন না এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজাও অন্য কোনো মাসে রাখতেন না। ’ – সহিহ বোখারি: ১৯৬৯
এই হাদিসসমূহের আলোকে শাবান মাসের কয়েকটি আমল প্রমাণিত হয়। সেগুলো হলো-
১. মনে-প্রাণে অধীর আগ্রহে রমজানের অপেক্ষা করতে থাকা।
২. শাবানের প্রতিদিন চাঁদের তারিখ মনে রাখা, ভুলে না যাওয়া। শাবানের চাঁদের তারিখ হিসাব করে রমজানের অপেক্ষা করা।
৩. শাবানের রোজাকে ভালোবাসা।
৪. যত বেশি সম্ভব শাবান মাসে রোজা রাখা। তবে ২৭ শাবানের পর রোজা রাখা যাবে না।
শাবান মাসে রোজা রাখার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো- রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে যে বেশি বেশি রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে তা নফল রোজা। ফরজ বা ওয়াজিব রোজার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই । কোনো ব্যক্তি যদি অসুবিধা কিংবা প্রয়োজনবশত শাবান মাসের রোজা রাখতে না পারে তাহলে শাবান মাসের রোজা পরবর্তী সময়ে পালন করা ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: তরুণ আলেম, আলোচক ও শিক্ষক
এনএ/