দোয়া ইবাদতের মূল। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব। যে বান্দা আল্লাহর কাছে চায় আল্লাহ তাআলা তার উপর খুশি হোন। যে চায় না তার উপর অসন্তুষ্ট হোন। (তিরমিজি, হাদিস ৩৩৭৩)
জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে দুটি সময় আছে যখন আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন।
দোয়া হলো আল্লাহর সামনে বান্দার সমর্পণ। মহান আল্লাহর দরবারে বান্দার হীনতা ও দীনতা প্রকাশের উত্তম পন্থা দোয়া। তাই দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে দু’টি সময় আছে যখন আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘দোয়াই ইবাদত’। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই অহংকারবশে যারা আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরা: মুমিন, আয়াত: ৬০), তিরমিজি, হাদিস ২৯৬৯, আবু দাউদ, হাদিস ১৪৭৯, ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৮২৮)
দোয়া ইবাদতের মূল। আল্লাহ তায়ালা তার কাছে প্রার্থনা করা পছন্দ করেন। এতে তিনি বান্দার উপর খুশি হোন। তাইতো আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ প্রার্থনা করো’। (সুরা: নিসা, আয়াত: ৩২)
যদি রিজিক হালাল হয় আর গোনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া না করা হয়, তাহলে সে দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বান্দার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, হে নবী! আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন (আপনি তাদেরকে বলুন,) আমি এত নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি। সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক আর আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়। (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
শুক্রবারের দোয়া কবুলের আমল
আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের দোয়া কবুল করার ওয়াদা করেছেন। সব সময় সব অবস্থাতেই তিনি দোয়া কবুল করেন। তবে হাদিসে বিশেষভাবে জুমার দিনের দু’টি সময়ের কথা বলা হয়েছে, বান্দা তখন আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা দান করবেন। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জুমার দিনের আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, এইদিন একটা সময় আছে তখন কোনো মুসলিম নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট যা চাইবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দেবেন। (আবু হুরায়রা রা. বলেন,) এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন, ওই মুহূর্তটা অতি অল্প সময়। (বোখারি, হাদিস ৯৩৫, মুসলিম, হাদিস ৮৫২)
বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ মুসলিমের এক বর্ণনায় স্পষ্ট এসেছে ‘সে মুহূর্তটি খুব সামান্য সময়।’ (মুসলিম, হাদিস ৮৫২)
খুতবা শুরুর সময় থেকে নামাজ শেষ পর্যন্ত
আবু দারদা ইবনে আবু মুসা আশআরি রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুল সা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে বলেছেন, ইমামের মিম্বরে বসার সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়টিই সেই বিশেষ মুহূর্ত। (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৯) খুতবা শুরু হওয়ার পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অল্প একটু সময় পাওয়া যায় দুই খুতবার মাঝখানে। সে অল্প সময়টা দোয়া কবুলের সময়।
জুমার দিনের আসরের পরের আমল
জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এ মুহূর্তটি তোমরা আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ, হাদিস ১০৪৮)
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত আছে,
জুমাবারে এমন একটি সময় আছে, যেটাতে বান্দা আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে থাকেন। (মুসান্নাফ, হাদিস: ৫৫৮৮)
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন বারো ভাগ। (এর মধ্যে একটি সময় আছে, যাতে) কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে যা প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় তা দান করবেন। সে সময়টি তোমরা অনুসন্ধান কর আসরের পর দিনের শেষ অংশটিতে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস ১০৩২, আবু দাউদ, হাদিস ১০৪৮, নাসায়ি, হাদিস ১৩৮৯১)
এনএ/