|| মুফতি মুহাম্মাদ জাকারিয়া ||
শীতকাল ভ্রমণের উপযোগী সময়। ভ্রমণবিলাসীরা এ সময় পছন্দনীয় স্থান ও দেশ ঘুরে বেড়ান।
ইসলাম ধর্ম মানুষকে ভ্রমণ করতে উৎসাহ জোগায়। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিরহস্যের নানা উপকরণ। প্রতি মুহূর্তে মানুষকে তা হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মন প্রফুল্ল রাখতে ও শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে এবং জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। তাইতো প্রতিনিয়ত মানুষ বিশাল এ ধরিত্রীর নানা অংশে ছুটে যায় সৃষ্টির বিশালতা আর প্রকৃতির রূপকে আপন করে দেখতে।
কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ভ্রমণের মাধ্যমে তাঁর অসীম ক্ষমতা ও সৃষ্টির বিশালতা অবলোকন করে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীজুড়ে বিশ্বাসীদের জন্য আছে অসংখ্য নিদর্শন।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২০)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কী হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশ বাণী।’ (সুরা আলে ইমরান : আয়াত ১৩৭-১৩৮)
বিনোদন ছাড়াও জীবনের নানা প্রয়োজনে আমাদের আবাসস্থল ছেড়ে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। অন্য সব বিষয়ের মতো ভ্রমণ সম্পর্কেও ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। কিছু নির্দেশনা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো—
■ সফরকালে নানা রকম বিপদাপদের আশঙ্কা থাকে। সেজন্য যানবাহন, আসবাবপত্র ও যাত্রাপথ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব ভালো করে খোঁজখবর নিন।
■সফরের সিদ্ধান্ত হলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে ভালো কিছু রেখে যায় না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, হাদিস : ৪৯১২)
■যতটা সম্ভব একাকী সফর পরিহার করুন। একাকী সফর নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই ভালো কাউকে সফরসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সঙ্গীহীনতায় কত কী সমস্যা! আমি যেমন জানি, তোমরাও জানলে রাতে একাকী কখনো সফর করার সাহস পেতে না। (বুখারি, হাদিস: ২৯৯৮)
■অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে গ্রুপ লিডার নির্বাচন করুন। যিনি পরামর্শের ভিত্তিতে সফরের দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করবেন। অন্যদের কাজ হবে তার নির্দেশনা মেনে চলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সফরে তোমরা যদি তিনজন হও, একজনকে আমির (গ্রুপ লিডার) নিযুক্ত করো। (আবু দাউদ, হাদিস, ২৬০৯)
■পরিচিত ও প্রিয়জনদের থেকে সুন্দরভাবে বিদায় নিন। বিদায় দানকারী বলবেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া-পরহেজগারি দান করুন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করুন আর যেখানেই থাকো তোমাকে তিনি কল্যাণ দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৪)
আর সফরকারী বলবেন, আল্লাহর নিরাপত্তায় তোমাকে অর্পণ করছি, তিনি অনন্য আস্থাভাজন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯২১৯)
■ সফরের জিকির এবং দোয়াগুলো পড়ুন। গাড়িতে উঠে পড়বেন, সুবহানাল্লাজি সাখখারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন।
অর্থ : মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যিনি একে (বাহন) আমাদের অধীন করে দিয়েছেন, অথচ আমরা একে অধীন করতে সক্ষম ছিলাম না। আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তনকারী।
আশা করা যায়, উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে সফরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টিরহস্য অবলোকনের মাধ্যমে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে প্রকৃতবোধ জাগ্রত হবে। ইনশাআল্লাহ
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া(মাদ্রাসা) বরিশাল
কেএল/