বৃষ্টির মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতে প্রাণ সঞ্চার ও রিজিকের ব্যবস্থা করেন। আবার মানুষের অবাধ্যতায় অতিবৃষ্টি এবং অনাবৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়। যা মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এমন বৃষ্টি কারোই কাম্য নয়। বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচতে সুন্নাতের অনুসরণ করা যেতে পারে। তাহলো-
১. রহমত কামনা করা
অতিবৃষ্টি যেমন অবাধ্যতার কারণ আবার বৃষ্টি মানুষের জন্য রহমতও বটে। তাই বৃষ্টি শুরু হলে নবিজীর অনুসরণে কল্যাণের দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, বৃষ্টি হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا
উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।'
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।' (বুখারি, নাসাঈ)
২. আল্লাহকে ভয় করা
ঝড়-তুফান ও বৃষ্টি শুরু হলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারায় ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠতো। তিনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতেন। আবার (স্বাভাবিক) বৃষ্টি হলে তিনি খুশি হতেন; তার কোনো অস্থিরতা থাকতো না। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন- আমার আশঙ্কা হয় যে, আমার উম্মতের ওপর কোনো ‘আজাব’ এসে পতিত হয় নাকি। তিনি বৃষ্টি দেখলে বলতেন-
رَحْمَةً : ‘রহমাতান’- এটা (আল্লাহর) রহমত। (মুসলিম)
৩. ক্ষতিকর বৃষ্টিতে আল্লাহর কাছে দোয়া
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন (ক্ষতিকর বৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য) দুই হাত তুলে (এভাবে) দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা বেরিয়ে রোদে চলতে লাগলাম।’ (রাবী) শরিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম- এ লোকটি কি আগের সেই লোক? তিনি বললেন, আমি জানি না।’ (বুখারি)
৪. গুনাহ থেকে বিরত থাকা
মানুষের পাপের কারণেও ক্ষতিকর বৃষ্টি হয়। যেমনটি এসেছে কোরআনের বর্ণনায়-
‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৩০)
সুতরাং বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণে হাদিসে বর্ণিত এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-
اَللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَ لَا عَلَيْنَا- اَللَّهُمَّ عَلَي الْأَكَامِ وَ الْجِبَالِ والْاُجَامِ وَالظِّرَابِ وَالْأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা হাওয়াইলানা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল উঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশে বৃষ্টি বর্ষণ কর। আমাদের ওপরে করিও না। হে আল্লাহ! টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনাঞ্চলে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ (বুখারি)
অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা একজন মুমিনের কর্তব্য।
এনএ/