যে কারণে হজ না করেই বাড়ি ফেরেন ইবনে মুবারক (রহ.)
প্রকাশ:
০১ মে, ২০২৫, ০৮:৩৭ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) ছিলেন একজন তাবে-তাবেঈ অর্থাৎ সাহাবিদের পরের প্রজন্মের পরের প্রজন্মে তার জন্ম। তিনি সরাসরি সাহাবিদের দেখেননি। তাদের অনুসারী তাবেঈদের দেখেছেন। তার জন্ম হয়েছিল উমাইয়া খলিফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকের খেলাফতকালে ১১৮ হিজরিতে অর্থাৎ নবিজির (সা.) হিজরতের একশত আঠারো বছর পর। তার বাবা ছিলেন তুর্কি আর মা ছিলেন খাওয়ারিজম অঞ্চলের বাসিন্দা। ইসলামের ইতিহাসে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) আলেম ও মুহাদ্দিস হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। তাকে আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস বা হাদিস শাস্ত্রে মুমিনদের নেতা বলা হয়। তিনি সুফিয়ান আস-সাওরি (রহ.) ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও ইমাম মালেক ইবনে আনাসের (রহ.) ছাত্র ছিলেন। আয-যুহদ ওয়ার রাকায়েক ও কিতাবুল জিহাদ তার রচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। তিনি বড় ব্যবসায়ী ও অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। আল্লাহর পথে ও দীন দরিদ্র মানুষের সাহায্যে প্রচুর সম্পদ ব্যয় করতেন। তার অনন্য দানশীলতার অনেক গল্প মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। নির্ভরযোগ্য সূত্রেও তার দানশীলতার অনেক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ইবনে কাসির (রহ.) আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের (রহ.) জীবনীতে লিখেছেন, একবার তিনি হজের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে তাদের সঙ্গে থাকা একটি পাখি মারা যায়। তিনি নির্দেশ দেন সেটিকে সেখানকার এক ময়লার স্তূপে ফেলে দিতে। পরে তার সঙ্গীরা সামনে এগিয়ে যান, আর তিনি পিছনে পড়ে যান। যখন তিনি সেই ময়লার স্তূপের কাছে এলেন, তখন দেখলেন, একজন তরুণী পাশের একটি বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে সেই মৃত পাখিটি তুলে নিলো এবং সেটিকে কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ফিরে যাচ্ছে। তিনি ওই তরুণীর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন সে মৃত পাখিটি নিয়েছে? তরুণী বললো, আমি ও আমার ছোট ভাই এই ঘরে থাকি, আমাদের কোনো সম্পদ নেই, শুধু এই একটি কাপড় ছাড়া। আমাদের খাওয়ার জন্যও কিছু নেই, শুধুমাত্র এই ময়লার স্তূপে যা ফেলা হয়, তা থেকেই খেয়ে বেঁচে আছি। আমাদের জন্য এখন মৃত জন্তুও হালাল হয়ে গেছে। আমাদের বাবা একসময় সম্পদশালী ছিলেন, কিন্তু তার ওপর জুলুম করা হয়, তার সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তাঁকে হত্যা করা হয়। এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) এগিয়ে গিয়ে তার সফরসঙ্গীদের যাত্রা থামাতে বললেন। তার অর্থ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কাছে কত সম্পদ আছে? তিনি বললেন, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা। তিনি বললেন, এর মধ্য থেকে বিশটি স্বর্ণমুদ্রা রেখে দিন যেন আমরা মার্ভ শহরে ফিরে যেতে পারি। আর বাকি সব স্বর্ণমুদ্রা ওই তরুণীকে দিয়ে দিন। এই কাজটি আমাদের এ বছরের হজের চেয়ে উত্তম। তারপর তিনি হজ না করেই ফিরে যান। সূত্র: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া এনএইচ/ |