মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬


টানা ১১ বছর বেফাকে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আদিয়াত হাসান: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের ৪৫তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল ৩০ এপ্রিল শনিবার। বরাবরের মতো এবারও ঈর্ষণীয় ফলাফল করেছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় অবস্থিত জামিয়াতুস সুন্নাহ। প্রতিষ্ঠানটি এবার বেফাকে মোট মেধাস্থান পেয়েছে ৩৫৫টি। এর মাঝে ফজিলত মারহালায় ৮ টি। সানাবিয়া মারহালায় ১৬ টি। মুতাওয়াসসিতাহ ১০৩ টি। ইবতিদাইয়া ২০৬ টি। আর হিফজ মারহালায় ২২টি।

মেধা তালিকার শীর্ষে থাকা এ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘আমরা আল্লাহর শোকর আদায় করছি। আমাদের ছাত্র ও শিক্ষকদের যৌথ মেহনতের ফসল আজকের ফলাফল। আমরনা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেনো এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি তার জন্য বিশেষ দোয়া চাচ্ছি।’

টানা ১১ বছর নিজেদের প্রথম স্থানে ধরে রাখার মতো কঠিন বিষয়টি কিভাবে সম্ভব হলো? জানতে চাইলে জামিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ ফরিদী বলেন, মাদরাসার শিক্ষকগণ শতভাগ আবাসিক। তারা ছাত্রদের সার্বক্ষণিক নেগরানি করেন। শিক্ষকদের নিবিড় পরিচর্যা ও তত্ত্বাবধানই ভালো ফলাফলের মূল রহস্য।

‘সাথে সাথে আমাদের মাদরাসায় ঠিক মতো ক্লাস হয় এবং ক্লাসে সবক বুঝে নেয়া হয়। ছাত্ররাও শিক্ষকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিশ্রম করে।’- জানান, মাওলানা ফরিদী।

ভালো ফলাফলের জন্য ভালো ছাত্র নির্বাচন করা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ? উত্তরে তিনি বলেন, ভালো ফলাফল তো ভালো শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই হয়। ছাত্র নির্বাচন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যেক জামাতে ছাত্র ভর্তির সময় সবচেয়ে যোগ্য ছাত্রদের নির্বাচনের চেষ্টা করি। তবে শুধু পরীক্ষা ভালো করবে এমন ছাত্র খুঁজি না। বরং ভালো কিতাব বুঝে, আমল আখলাক ভালো এমন ছাত্রকেই আমরা প্রাধান্য দেই।

মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ ফরিদী জানান, জামিয়াতুস সুন্নাহ কিভাবে ছাত্রদের প্রস্তুত করে; বিশেষত পরীক্ষার জন্য। ‘ভর্তির জন্য যে ন্যূনতম মার্কস পাওয়া আবশ্যক, তা পেলেই আমরা ছাত্রদের ভর্তি করিয়ে নেই। তা কিন্তু একশো তে আশি নয়। এরপর ছাত্রদের পেছনে আমরা সর্বোচ্চ শ্রম ব্যয় করি। শিক্ষকদের শ্রম ও ছাত্রদের আন্তরিক চেষ্টায় একজন ছাত্র ধীরে ধীরে যোগ্য হয়ে ওঠে। একটি ছেলে যে মাকবুল (পাশ মার্কস পাওয়া) পর্যায়ের যোগ্যতা নিয়ে ভর্তি হওয়ার ছয় মাস পর তার যোগ্যতা জায়্যিদ জিদ্দান পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আলহামদুলিল্লাহ!’

তিনি মনে করেন, শ্রেণি কক্ষই একজন ছাত্রের যোগ্য হওয়ার মূল কারখানা। শ্রেণি কক্ষে দুর্বলতা থাকলে অন্য প্রচেষ্টায় ছাত্রদের যোগ্য হওয়া কঠিন। তাই তিনি শ্রেণি কক্ষের উপরই সবচেয়ে গুরুত্ব দেন। সময় মতো ক্লাস হওয়া, ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং পাঠদান ও গ্রহণ সন্তোষজনক হচ্ছে কিনা তিনি নিয়মিত খোঁজ নেন। মাদরাসার সার্বিক লেখাপড়া ও তরবিয়্যাত পর্যালোচনার জন্য প্রতি সপ্তাহে উস্তাদদের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।

বেফাকভূক্ত জামাতের জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টা আছে কিনা জানতে চাইলে জামিয়াতুস সুন্নাহ-এর প্রিন্সিপাল বলেন, ‘আমি যাওয়ার পূর্বে জামিয়ার একটি বদনাম ছিলো যে, বেফাকের জামাতে ভালো লেখাপড়া হয় এবং অন্য জামাতে তেমন হয় না। আমি এসে সব জামাতে যেনো সমান গুরুত্বে লেখা পড়া হয় তার উপর গুরুত্ব দেই। আলহামদুলিল্লাহ! সব জামাতে সমমানের লেখাপড়া হয়।’ তবে হ্যা, কোনো প্রস্তুতিই যে আলাদা করে নেয়া হয় না, তাও নয়। ‘সাধারণভাবে সব জামাতেই সাপ্তাহিক পরীক্ষা আছে। এর বাইরে বেফাকভূক্ত জামাতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার পর একটি মডেল টেস্ট হয়। এ টেস্টের পূর্বে ছাত্ররা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিলো জামিয়া মোহাম্মাদিয়া ফয়জুল উলুম। ২০০০ সালে আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বৃহৎ পরিসরে জামিয়ার বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। এরপর আল্লামা মাহমুদুল হাসানের তত্ত্বাবধান ও শিল্পপতি আলহাজ্জ বাদশাহ মিয়ার উদার সহযোগিতায় জামিয়ার আজকের মহীরূহ অবকাঠামো গড়ে উঠে।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বেফাকে ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছে। ফলাফলে দেখা যায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও তারা আছেন শীর্ষে। এ নিয়ে টানা ১১ বছর বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় নিজেদের প্রথম স্থানে ধরে রেখেছে মাদারীপুর জেলার জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর মাদরাসা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর