মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬


ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিষয়ে কী ভাবছেন ইসলামি চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞানীরা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম ।।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে একটি ঘটনায় ধর্ম ও বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। পাশাপাশি ধর্ম নিয়ে বাড়ছে অসহিষ্ণুতা। এ বিষয়ে কী ভাবছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা? বিজ্ঞানীরাই বা কী বলছেন? আসলেই ধর্ম আর বিজ্ঞান কি সাংঘর্ষিক? এ বিষয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন দুইজন ইসলামি চিন্তাবিদ এবং দুইজন বিজ্ঞানী।

বিজ্ঞান চর্চা করতে গিয়ে বা পড়াতে গিয়ে কখনও কি মনে হয়েছে ধর্ম আর বিজ্ঞান সাংঘর্ষিক? জবাবে ইউজিসি অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, “আমি কোনো দিনই সে সমস্যা পাইনি, একেবারেই না। কোনো রকম বিরোধ আমি দেখিনি এবং সে কথাটাই আমি প্রচার করি আমার ক্লাসে। আমি যে বিষয়টা পড়াই তার মধ্যে এ বিষয়টা টেনে আমি এটাই বোঝানোর চেষ্টা করি যে, এর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।”

এই যে বিজ্ঞানকে ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয় এটা কেন? এর জবাবে ড. খান বলেন, “এটা কারও স্বার্থে করা হয়। নিজের কোনো এজেন্ডা বা কিছু পাওয়ার জন্য এটা করে বলে আমার আগাগোড়া মনে হয়েছে। ধর্মকে এর মধ্যে নিয়ে আসার কোনো কারণ নেই। ধর্ম কখনও বিজ্ঞানের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা করেনি। বিজ্ঞান প্রমাণিত। আমি অনেক অনেক প্রমাণ দিয়ে ক্লাসে পড়াই।”

ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে কোনো সম্পর্ক বা দ্বন্দ্ব আছে কি-না? জানতে চাইলে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির পরিচালক মাওলানা আনিসুজ্জামান শিকদার বলেন, “না, প্রশ্নই আসে না। কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যদি কোনো দ্বন্দ্ব থাকে সেটা হল আমাদের অজ্ঞানতা। আমাদের বুঝতে না পারার কারণে দ্বন্দ্ব। এটা আমাদের বোঝার ভুল।”

তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ কোরআনকে বলেছেন বিজ্ঞানময় কোরআন। পরতে পরতে আল্লাহ বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিন থেকে রাত আর আসমান থেকে জমিন এর মধ্যে আল্লাহ জ্ঞানী লোকের জন্য অনেক উপকরণ রেখেছেন। আপনি যদি সৃষ্টিজগৎকে না চেনেন তাহলে তো আপনি স্রষ্টাকে তো চিনবেন না।”

ধর্ম ও বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. আ. ব. ম. ফারুক বলেন, “ধর্ম হল মানুষের নিজস্ব বিশ্বাসের বিষয়। বিজ্ঞানে অভিরুচির কোনো বিষয় না। এখানে যেটা সত্য সেটাই বলতে হবে। একজন একটা ওষুধ আবিষ্কার করেছেন এটা সত্য কথা। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে অসুখ যেমন দেন, অসুখের চিকিৎসাও দেন। আমার দায়িত্ব হল চিকিৎসা খুঁজে বের করা। এই বের করতে গেলে তো বিজ্ঞানকে লাগবে। সব ধর্মই বলছে, জ্ঞান অন্বেষণ করো। ইসলাম তো বলছে, জ্ঞান অন্বেষণ করতে সুদূর চীন দেশেও যাও। তখনকার সময়ে আরব দেশ থেকে চীনে যাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল। সুতরাং জ্ঞান অন্বেষণ হল এতটাই জরুরি।”

ধর্ম আর বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান নিজামী বলেন, “আরও আলোচনা করে, পড়াশোনা করে আগাতে হবে। তাহলে সব বিরোধ থেকে আমরা একটা গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছতে পারবো।”

এ প্রসঙ্গে মাওলানা শিকদার বলেন, “অভিযোগগুলো নিয়ে যদি আপনি বিচার করেন তাহলে দেখবেন কিছু স্বার্থান্বেষী লোক তাদের স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য এটা করেন।

ভারতবর্ষে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বসবাস করে। এর মধ্যে আগের ৭০০ বছরে তো কোনো বিরোধ ছিল না। বৃটিশরা যখন এখানে এল তখন হিন্দু-মুসলমান দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে দিল। তখনই শুরু হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। নিজেদের কর্তৃত্ব রাখার জন্য তারা এটা করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ পৃথিবীতে বিরল। এখানে যে দুইএকটা ঘটনা ঘটছে, সেটা একটা স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের হীন স্বার্থে ভাইতে ভাইতে গোলমাল লাগিয়ে দিচ্ছে।”

কুমিল্লার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেখানে তো প্রমাণ হলো, একটা স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য এই কারবার করেছে।

মাওলানা শিকদার আরও বলেন, “আপনি যদি কাউকে জাহান্নামী বলেন, এটা বলা যাবে না। কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে এটা আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি যাকে চান তাকে জান্নাতে নেবেন।” সূত্র: ডয়চে ভেলে

-এটি


সম্পর্কিত খবর