মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬


সমৃদ্ধ হোক আদ-দাওয়াতু ইলাল্লাহ’র পথ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাউসার লাবীব: ফেরাকে বাতেলা ও অমুসলিমদের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে দাওয়াতি কাজ করে যাচ্ছে খতমে নবুওয়াত মারকায ঢাকা। এছাড়া সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েও মানবতার পরিচয় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।  আজ আমরা আদ-দাওয়াতু ইলাল্লাহ’র কাজে নিয়োজিত এ প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসবো খতমে নবুওয়াত মারকাযের দায়ী মাওলানা মুমিনুল হকের কাছে থেকে-

ইসলামের সঙ্গে মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলতে আমরা বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। আলহামদুলিল্লাহ, রবের কৃপায় ভাল ফলাফল পাচ্ছি। পথ ভোলা মানুষকে চিনিয়ে দিতে পারছি স্রষ্টার পথ। তারা বুঝতে পারছে জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য। আমাদের কর্মপদ্ধতিগুলো হলো-

এক- অসহায়-গরিব মুসলিমদের আগলে রাখা। সাধারণত যারা বিভিন্ন এনজিও, মিশনারির টার্গেট হয়ে থাকে। তাদেরকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে, বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে ইসলামের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখা। ইসলাম শেখানো। বুঝানো।  বর্তমানে আমরা প্রায় চল্লিশটি পরিবারের নিয়মিত দেখাশোনা করছি। বিভিন্ন সময় তাদেরকে ফুডপ্যাক, শীতবস্ত্র তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।

দুই- যারা নতুন মুসমান হন। পূর্বের সমাজ, বাড়িঘর, আয়ের উৎস সব ছেড়ে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন। তাদের সহায়তা দেয়া। ভালবাসার পরশ মেখে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কার্যক্রমের একটা অংশ।

তিন- দাঈ প্রেরণ। কাদিয়ানি অধ্যুষিত এলাকায় কিছু মুসলিম দাঈ পাঠানো। যারা কাদিয়ানি হয়ে যাওয়া লোকদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবে। মুসলমান জনসাধারণের দ্বীনের চাহিদা পূরণ করবে। কাদিয়ানি ধর্মের স্বরূপ বুঝানো, ইসলামের সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য জানানো, ইসলামের ওপর উত্থাপিত প্রশ্নসমূহের সঠিক ও সুন্দর জবাব দেয়া ইত্যাদি কাজ আঞ্জাম দেবে।

চার- মসজিদ এবং মাদরাসা আবাদ করা। কাদিয়ানী প্রভাবিত অনেক এলাকায় মসজিদে মুসল্লি সংখ্যা কমতে কমতে মসজিদ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় মসজিদই নেই। মাদরাসাও নেই অনেক জায়গায়। কোথাও মাদরাসা আছে কিন্তু মাদরাসার পরিচালক অর্থ এবং প্রয়োজনীয় আসবাবের অভাবে চালাতে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। ঐ সব জায়গায় মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কিংবা প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় সাহায্য সহায়তা প্রদান করে যাওয়াও আমাদের কার্যক্রমের একটি অংশ। ইতোমধ্যে পঞ্চগড়ের তুলারডাংগায় একটি মসজিদ এবং একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান আছে।

পাঁচ- কাদিয়ানি প্রভাবিত বিভিন্ন এলাকায় সফর করে, নির্দিষ্ট কোন স্থানে স্থানীয় জন সাধারণকে জমায়েত করে, প্রজেক্টারের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি প্রদর্শন। যেন ইসলাম ও কাদিয়ানী ধর্ম তাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যায়। এছাড়া কোন সমাজ পাল্টাতে যেহেতু নারীদের ভুমিকা অনেক এবং কাদিয়ানিরাও তাদেরকে ব্যবহার করে থাকে। এজন্য মহিলাদের জন্য বিশেষ মজলিশের আয়োজন করা। তাদেরকে দাওয়াত দেয়া, বুঝানোর দায়িত্বে আমরা বদ্ধ পরিকর। শেষ যে মজলিশটি হয়েছিলো আহমদ নগরে, সেখানে নারী উপস্থিতির সংখ্যা ছিলো সাড়ে পাঁচশ এর বেশি।

ছয়- অমুসলিম হিন্দুদেরকে বিভিন্ন দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা। মানবতার দৃষ্টিতে বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কার্যক্রমের একটি অংশ।

সাত- শিক্ষা ও বাসস্থান বঞ্চিত বেদে পল্লির পুরুষ -মহিলা ও বাচ্চাদেরকে আল্লাহ রাসুল শেখানো। যারা নিজেকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পুর্ন বেখবর ছিল। আলহামদুলিল্লাহ এ পর্যন্ত আমরা এরকম বেশ কয়েকটি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

আট- সমাজের অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বীন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের এই শিক্ষা কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সব প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। তাঁর দীনের সাহায্যে সব মুসলমানকে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমাদের সমস্ত প্রয়োজন উনার অসীম খাজানা থেকে পুরা করে দিন।

খতমে নবুওয়ত মারকায ঢাকার অধিনে বর্তমানে আমাদের দুটি শাখা মারকায খোলা হয়েছে। একটি খতমে নবুওয়ত মারকায পঞ্চগড় আরেকটি হলো খতমে নবুওয়ত মারকায ঝিনাইদহ।  এ দু’টি মারকাযে নবমুসলিম, ফেরাকে বাতেলা থেকে সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া মানুষজন ও মুসলমানদের প্রাণাধিক সন্তানদের আমরা কোরআনী শিক্ষার আলো বিলিয়ে যাচ্ছি।

তবে এ মারকায দুটি থেকে আমাদের বড় পাওয়া হলো যেহেতু এতে কোরআনী শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষারও বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু হিন্দুদের সন্তানও রয়েছে যারা মুসলমান বাচ্চাদের সাথে শিক্ষা অর্জন করছে। কালিমা নামাজ শিখছে। এর বরকতে হয়তো তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে। খুঁজে পাবে প্রকৃত স্রষ্টাপ্রেম।


সম্পর্কিত খবর