মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬


জুমা ও জুমাবার: করুণাময়ের বিশেষ উপঢৌকন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা ইউসুফ নূর

ইসলামে জুমাবারের অনেক গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য রয়েছে।রাসূল সা: বলেছেন: সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আর দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদম (‘আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাঁকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে এবং এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয় আর জুমু'আর দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং,২০১৪)

জুমাবার অশেষ নেকী ও সওয়াবের দিন

জুমু'আর দিনে ভালভাবে পবিত্র হয়ে সুগন্ধি মেখে জুমু'আর নামাজে শরিক হলে বিপুল সওয়াব ও অসংখ্য নেকী পাওয়া যায়।রাসূল সা:ইরশাদ করেছেন:
যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার
করে (মসজিদের উদ্দেশ্যে) বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক করে অনাহুতভাবে না বসে, অতঃপর তার নির্ধারিত নামাজ আদায় করে এবং ইমাম খুত্‌বাহ দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত তার যাবতীয় (ছোট)গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮৮৩)

জুমুআর দিন দ্রুত মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করুন

জুমুআর ফজিলত লাভের জন্য সকাল থেকেই জুমু'আর নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ ও দ্রুত মসজিদে যাওয়ার চেষ্টাকরা উচিত। যে যত আগে মসজিদে উপস্থিত হবে সে তত বেশি সওয়াবের অধিকারী হবে।

জুমু’আর দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতাগণ অবস্থান নেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার পূর্বে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। অতঃপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। অতঃপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাঁদের খাতা বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ্ শুনতে থাকেন। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯২৯)

জুমাবারে বেশি বেশি দুরূদ পড়ুন

মানবতার অগ্রদূত বিশ্বসেরা ও সৃষ্টির গর্ব মুহাম্মদ সা:এর সমীপে প্রতিদিন দুরূদের নজরানা পেশ করা একজন মুসলমানের কর্তব্য। তবে জুমু'আর দিনে দুরূদের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। হাদিসে এর প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে।রাসূল সা বলেছেন তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উৎকৃষ্ট দিন হল জুমু'আর দিন। এ দিন আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করা হয় এবং এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়।এদিনই শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে এবং এদিনই কিয়ামাত সংঘটিত হবে।

অতএব তোমরা এদিন আমার প্রতি অধিক হারে দুরূদ ও সালাম পেশ করো। কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সামনে পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের দুরূদ আপনার নিকট কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা নবীদের দেহ ভক্ষণ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সুনানে ইবনু মাজাহ, হাদিস নং ১৬৩৬)

শুক্রবার দোয়া কবুল হয়

শুক্রবারের দিবা ও রজনীর মধ্যে এমন একটি সময় আছে যে,তখন আল্লাহর কাছে যা চাইবে তাই কবুল হবে।এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বিশেষ উপঢৌকন। রাসূল সা. বলেন জুমু‘আর দিনে অবশ্যই এমন একটি মুহূর্ত আছে যখন কোন মুসলিম আল্লাহর নিকট ভাল কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৮৫৮)

তবে দোয়া কবুল হওয়ার সময়টির স্পষ্ট বিবরণ আল্লাহ্ দেন নি, যাতে মানুষ বেশি সময় ইবাদত ও দোয়ার মধ্যে কাটায়।তবে কোন কোন বর্ণনা মতে এই বরকতময় মুহুর্তটি শুক্রবারের আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে থাকে। রাসূল সা. বলেছেন জুমু’আর দিনের যে মুহূর্তে (দোয়া কবুল হওয়ার) আশা করা যায় তা আসরের পর হতে সূর্যাস্তের মধ্যে তালাশ কর। তিরমিজি, হাদিস নং ৪৮৯

অতএব শুক্রবার পুরো দিন সম্ভব না হলেও অন্তত আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদত ও প্রার্থনায় লিপ্ত থাকা প্রয়োজন। জুমুআর এত মর্যাদা ও সুসংবাদ থাকার পরেও কেউ যদি তার প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে তবে এটা তার দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়। জুমার গুরুত্ব দেয়া ও এই দিন অধিকহারে দোয়া করা সকল মুসলিমের কর্তব্য। আল্লাহ্ তওফিক দিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর