বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

আফজাল গুরুর সেই বিখ্যাত চিঠি: দর্পনে কালের মুখ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সময়টা তৃতীয় সহস্রাব্দের গোড়ার। ২০০১ সাল। এ বছরই ঘটে মহাদেশ কাঁপিয়ে দেয়া ঘটনা। ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলা৷ সন্দেহভাজনের তালিকায় উঠে আসে আফজাল গুরু শহীদের নাম। এমনকি তাকে ফাঁসির কাষ্টে পর্যন্ত ঝুলতে হয়। ঘটনাটা আজ থেকে ৭ বছর পূর্বের। সালটা ২০১৩। ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ। এই দন্ডবিধি কার্যকর হয় তার।

বর্তমানে তার নাম গ্রন্থিত। তার কারণ এটাই— কিছুদিন পূর্বে কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেভিন্দর সিং কর্তৃক দুইজন সন্ত্রাসীর সাথে গ্রেফতার করা হয় আফজাল গুরুকেও। পরবর্তীতে আফজাল গুরু তার একটি চিঠিতে সেই ঘটনার অনুপুঙ্খ বয়ান নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।

চিঠিটি তিনি তিহার জেল থেকে তার উকিল সুশীল কুমারকে লিখেন। সেই চিঠির চম্বুকাংশ The Print পত্রিকা ১৩ জানুয়ারি তাদের স্টোরিতে প্রকাশ করে। চিঠিটির সারসংক্ষেপ কয়েকটা পয়েন্টে তুলে ধরেন আহমাদ ইলিয়াস নুমানী। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য বাংলায় ভাষান্তর করেছেন তরুণ লেখক জাবির মাহমুদ


একদিন৷ সময় তখন সকাল দশটা। আমি আমার স্কুটারে করে কোথাও যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাকে এসটিএফের কিছু কর্মকর্তা অপহরণ করে। তারা আমাকে বুলেটপ্রুফ একটি কালো গাড়িতে বসিয়ে শিবিরে নিয়ে যায়। যেখানে আমাকে চরম কষ্টপ্রদায়ী পন্থায় নির্যাতন করা হয়।

আমাকে বলা হয় যে, আমি নাকি খুব বড় রকমের মরণঘাতি অস্ত্র রপ্তানি করেছি! আমাকে আরো বলা হয়— যদি আমি তাদের দশ লাখ রুপি দিই— তাহলে তারা আমাকে বেকসুর খালাস দিতে পারে। এরপর আমাকে হামহামাহ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যেখানে ডিএসপি দেভিন্দর সিং আমাকে অতি নিকৃষ্ট পন্থায় নির্যাতন করে। তার একজন টর্চার ইনস্পেক্টর আমাকে তিন ঘন্টা নগ্ন করে রাখে। কারেন্টের শক দেয়া হয় আমাকে৷ এবং এই কাজের উপরও তখন চাপ দেয়া হয় যে, যখন আমাকে কারেন্টের শক লাগানো হবে— তখন আমি পানি পান করব!

এই আজাবের পর আমি অঙ্গিকারাবদ্ধ হই— আমি তাদের প্রার্থিত মূল্য পরিশোধ করব। আমার স্ত্রী তার সমস্ত অলঙ্কার বিক্রি করে দেয়। যাত্থেকে একহাজার রুপি হস্তগত হয় তার। মাত্র তিন মাস পূর্বে কেনা আমার স্কুটিও বিক্রি করে দেয়া হয়। তখন গিয়ে একলাখ রুপি পূর্ণ হয়৷ নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের পর আমি মুক্তি পাই।

এই হামহামাহ ক্যাম্পেই তারিক নামী আমার মতো একজনের সাথে আমার পরিচয় হয়। সে আমাকে পরামর্শ দেয় যে, যদি আমি স্বস্থির জীবন কামনা করি— তাহলে আমাকে এসটিএফ কর্মকর্তারদের সমর্থন করতে হবে৷ অন্যথায় তারা আমাকে ধারাবাহিকভাবে কষ্ট দিতেই থাকবে৷ এবং কর্মময় জীবনে ফিরে যেতে দিবে না কোনোদিনই৷

১৯৯০ সালে আমি দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষা সমাপন করে ফিরে আসি৷ বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানোর কাজে লেগে যাই। আলতাফ হুসাইন নামী এক ব্যক্তি— যিনি বাডগামের এসপির ভাই সম্পর্কীয় ছিলেন৷ আমাকে তার বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানোর প্রস্তাব দেন৷

ধীরে ধীরে আলতাফের সাথে আমার সম্পর্ক খুব গভীর হয়ে যায়৷ এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই তিনি আমাকে ডিএসপি দেভিন্দর সিংয়ের কাছে নিয়ে যান৷ দেভিন্দর আমাকে একটি ছোট্ট কাজ করে দিতে বলেন৷ কাজটা এই— আমি এক ব্যক্তিকে নিয়ে দিল্লি চলে যাব। এবং তার জন্য একটি ঘর ভাড়া করে দিব।

আমি সেই লোককে চিনতাম না! কিন্তু আমার সাথে তার দেখা হওয়ার পর যখন সে কাশ্মীরি ভাষায় কথা বলছিলো না— তখনই আমার সন্দেহ হয় যে, সে কাশ্মীরি না৷ কিন্তু আমি তখন দেভিন্দরের আদেশ পালনে নিরুপায় ছিলাম।

আমি তাকে নিয়ে দিল্লি যাই৷ তাকে ভাড়ায় ঘরও ঠিক করে দেই। এই পুরো সময় জুড়েই আমার এবং ওই লোকের (মুহাম্মদ) দেভিন্দরের সাথে ফোনের যোগাযোগ অব্যাহত থাকে৷ (খুব সম্ভব ওই মুহাম্মদ নামী ব্যক্তিই আমার কেনা গাড়ি দিয়ে পার্লামেন্টে হামলা করেছিলো!)

সে আমাকে হাদিয়াস্বরূপ ৩৫ হাজার রুপি দেয়। আমি আমার কাশ্মীরে কাটানো জীবনের উপর তৃপ্ত ছিলাম না৷ এজন্য আমি দিল্লিতে বসবাসের ইচ্ছা করে ফেলি। এবং ইন্দিরা বিহারে একটা ঘর ভাড়ায় নিয়ে নেই। যাতে নিজের পরিবারের সাথে একত্রে সেখানে বসবাস করা যায়।

ঈদ সন্নিকটেই ছিলো। আমি কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। যাতে সেখানে ঈদ উদযাপন করতে পারি৷ এবং পরবর্তীতে পরিবারকেও নিয়ে আসতে পারি৷ শ্রীনগর থেকে আমি তারিকের সাথে যোগাযোগ করি৷ এবং তাকে জানাই যে, আমি মাত্র একঘন্টা পূর্বেই কাশ্মীর পৌঁছেছি। (ওই ব্যক্তি যার সাথে আফজাল গুরুর সাক্ষাৎ হামহামাহ ক্যাম্পে হয়েছিলো।)

পরদিন সকালে যখন আমি শ্রীনগর বাস ষ্টেশন থেকে সোপুরগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলাম। তখন পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। তাদের পরম্পরা ষ্টেশনে নিয়ে যায় আমাকে। সেখানে এসটিএফের সাথে তারিকও ছিলো। তারা আমার থেকে ৩৫ হাজার রুপি নিয়ে নেয়। আমাকে মারধর করে। অতঃপর আমাকে এসটিএফের হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আমার চোখে পট্টি বেঁধে দিল্লি নিয়ে আসা হয়।

দিল্লিতে এসে আমি নিজেকে পুলিশের স্পেশাল টর্চার সেলে আবিষ্কার করি। টর্চার সেলে আমি তাদেরকে মুহাম্মদ (এবং দেভিন্দর সিং) এর সম্পূর্ণ ঘটনা বলে দেই। কিন্তু তারা আমাকে বলে যে, পার্লামেন্টে হামলার চক্রান্তকারীদের মধ্যে আমিও নাকি একজন৷

আমাকে এই বলে ধমকিও দেয়া হয়— আমার ভাইকেও নাকি এখানে উত্থাপিত করা হয়েছে। যদি আমি তাদের সহযোগিতা না করি অর্থাৎ, তাদের আরোপিত সব অপবাদ যদি স্বীকার না করি। এবং তাদের নির্মিত মনগড়া কাহিনী নির্লিপ্ত মেনে না নেই৷ তাহলে আমার বংশের অপরাপর সদস্যদেরও আমার মতোই পরিণাম ভোগ করতে হবে!

আমার থেকে এই মিথ্যা অঙ্গিকারও নেয়া হয়েছে যে, যদি আমি তাদের কথা মেনে নেই— তাহলে তারা আমার কেস দূর্বল করে দিবে। যাতে আমি পরবর্তীতে মুক্তি পেতে পারি। এমনকি আমাকে আদালতে কখনোই নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয় নি!

চলবে...

আরএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ