মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত রাষ্ট্রের দায়িত্বে কে যাবেন সেই ফয়সালা আল্লাহ করবেন : জামায়াতে আমির শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান অধ্যাপক আখতার ফারুক রহ.-এর জীবন-কর্ম আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হেফাজতের মহাসমাবেশ সফলে সাভারে উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত  কারাগারে পাঠানোর নির্দেশের পর জামিন পেলেন মাওলানা মাসউদুল করীম ইজতেমা মাঠের মামলায় মাওলানা মাসউদুল করীম কারাগারে নারী সংস্কার কমিশনের ত্রুটি জানানো হলো ঐকমত্য কমিশনকে

বক্তা হলেই কি মুফতি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী হাসান তৈয়ব ।।

আমাদের দেখা সময়ে ওয়াজ-মাহফিলের মতো উন্মুক্ত প্রোগ্রামে উপস্থিত প্রশ্নোত্তরপর্ব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মূলত ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. ও মুফতি কাজী ইবরাহিম সাহেবদের মাধ্যমে। তাদের দেখাদেখি এখন মাহফিলে সবাই ফতোয়া দিতে শুরু করেছে। এতদিন জনারণ্যে ধারণা ছিল, মাহফিলের বড় বক্তা মানেই বড় আলেম। তারপর ধারণা চালু হলো— যত লকব তত বড় হুজুর/শায়খ। এখন শুরু হয়েছে, বক্তা যে বড় আলেম তা বোঝাতে ওয়াজের পর প্রশ্নোত্তরপর্বের মুফতি হওয়া। কিয়ামত তুমি কত দূর!

দুঃখজনকভাবে ইসলামিক টিভি ও পিস টিভি বন্ধ। কিন্তু বন্ধ নয়, বহু গুণ বেড়েছে লাইভ প্রশ্নোত্তরের মুফতি। ইউটিউব টিভিতে, নিজের চ্যানেলে, ফেসবুকে ওয়ালে, এফএম রেডিওতে ও মাহফিলে লাইভ জবাবদাতা। জানি না ইসলামের ইতিহাসে কোনো কালে এভাবে ফতোয়া নিয়ে দায়িত্ব জ্ঞানহীন এত মানুষ ছিল কিনা।

বিল্লাহি, সবার শ্রদ্ধা রেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি, যে ছেলেটাকে দেখতাম আজীবন পরীক্ষায় ফেল করতে, সেও জবানের শক্তির জোরে বড় বক্তা কাম বড় আলেম। সবশেষ এখন বড় বক্তা হবার সুবাদে বড় মুফতি। যেমন দেখি এমন লোকদের নিজে মাদরাসাতুল বানাতের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হবার জোরে মুহাদ্দিস আর শাইখুল হাদিস হতে। কী সমৃদ্ধ তাদের ভিজিটিং কার্ড! তাতে লেখা : এখানে ফোনে মাহফিলের দাওয়াত নেওয়া হয়। ফোনে তদবিরের ফুঁ দেওয়া হয়! কিয়ামত তুমি কত দূর!

এইসব জাহেলদের সম্পর্কে সালাফরা অনেক কথা বলে গেছেন। কুরআন-সুন্নাহতেও এদের ফেতনা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। আমার মতো পাপীর ক্ষুদ্র জ্ঞানে খালি একটি কথা মনে হয় : আমাদের জবানে-কলমে ঘোষিত অনেক কাফের-ফাসেকের চেয়েও উম্মতের জন্য বড় ফেতনা এই আমরা। হ্যা আমরা।

উম্মে সালামা রা. বর্ণিত হাদিসটি মনে করি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হবার আগে আকাশ পানে তাকিয়ে একটি দোয়া পড়তেন—

«اللّٰـهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ».

অর্থাৎ— হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই যেন নিজেকে বা অন্যকে পথভ্রষ্ট না করি, অথবা অন্যের দ্বারা পথভ্রষ্ট না হই; আমার নিজের বা অন্যের পদস্খলন না করি, অথবা আমায় যেন পদস্খলন করানো না হয়; আমি যেন নিজের বা অন্যের উপর যুলম না করি অথবা আমার প্রতি যুলম না করা হয়; আমি যেন নিজে মুর্খতা না করি, অথবা আমার উপর মূর্খতা করা না হয়।' (আবু দাউদ : ৫০৯৪, সহিহ)।

এবার ভাবুন, পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ও মহত্তম মানব মাসুম (নিষ্পাপ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়া এমনি শেখাননি উম্মতকে। আমাদের আজকের অবস্থা দেখলে তিনি কী বলতেন! আহ, আমাদের রোজ ঘর থেকে বের হবার আগে তো বটেই, প্রতিবার কলম আর জবান খোলার আগে একবার অন্তত এ দোয়া দিল থেকে পড়ে নেওয়া দরকার।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

আরএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ