বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

এই শহরে কেউ বেঁচে নেই: কয়েকটি মৃত্যুর গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুনীর আশরাফ


'এই শহরে কেউ বেঁচে নেই' বইটি যেদিন সংগ্রহ করি সেদিনই প্রকাশককে দুষ্টুমির ছলে বলেছিলাম, এই শহরে কেউ বেঁচে নেই এটা কিভাবে সম্ভব? আজিব কথাবার্তা! আমরা সবাই এই শহরে বেঁচে থাকার পরও লেখক কেন বললেন- এই শহরে কেউ বেঁচে নেই? পরে এমন ভাবনা থেকেই প্রচন্ড কৌতুহল জাগে আর সে কৌতুহল মেটাতেই এই বইটি পড়া।

এই বইটি পড়ে আমার কাছে সত্যিই মনে হয়েছে, এই শহরে কেউ বেঁচে নেই। গল্পগুলো পড়ছিলাম আর মনের ভেতর কেমন যেন একটা হাহাকার বোধ জমা হচ্ছিল লেখক এই বইয়ে মোট চারটি গল্প একত্র করেছেন।

১. ইসরা একটি দেশের নাম, ২. চিঠি, ৩.একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি, ৪. শোভন'ইসরা একটি দেশের নাম' গল্পে উঠে এসেছে বাংলাদেশের একটি ছেলে আর ফিলিস্তিনের একটি মেয়ের প্রেমের গল্প। গল্পে গল্পে বাংলাদেশ আর ফিলিস্তিনের সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বর্ণনা! তাদের দু’জনের সে কী প্রেমের অনুভূতি!

কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জীবনে তো ভালবাসতে নেই, মানুষের সাথে প্রেমের অনুভূতি থাকতে নেই। তাদের জন্ম হয়েছে শাহাদাত কে ভালবাসতে। দেশের জন্য বেঁচে থাকতে, জীবন দিতে, ইসরায়েলিদের নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে। গল্পে গল্পে লেখক এই নির্মম নির্যাতনের কথা এক আলাদা ভঙ্গিমায় প্রকাশ করেছেন। তাদের ভালোবাসা সফল হয়নি। ইসরার দেয়া শেষ মেসেজটি আমাকে মুগ্ধ করেছে!

ইসরার শেষ মেসেজ- " আমার খুব ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশে যেতে; কিন্তু ফিলিস্তিনেই বোধহয় আমার দাফন হবে। মৃত্যুর পর তোমার হুরদের সরদার হবারও ইচ্ছে ছিল। তোমাকে যেমন ভালবাসি, তেমন জন্মভূমিকেও। আমি ছাড়া তুমি চলতে পারবে লেখক। কত মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে। তুমি একা নও; কিন্তু ফিলিস্তিন বড় একা। আমরা ছাড়া ওর কেউ নেই। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।"

বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন

'চিঠি' গল্পটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে লেখা। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারীতে কী হয়েছিল! আমরা কত কিছু শুনি! সময় ও নিজেদের প্রয়োজনে সবাই ইতিহাস বিকৃত করে। লেখক এই গল্পে ১৯৫২ সালে পড়া ঢাকা ভার্সিটির ইবু নামের একটি ছাত্রের গল্প বর্ণনা করেছেন।

মা বাবার মৃত্যুর পর বোন দুলাভাইয়ের টানাটানির সংসারে বড় হওয়া ছেলেটি বোনের লেখা চিঠির জবাব লিখেছিল, কিন্তু সে জবাব আর বোনের কাছে পৌঁছায়নি। পৌঁছেছে এম্বুলেন্স। ইবুর লাশবাহী এম্বুলেন্স। ইবু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে মিছিলে বের হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরা সালাম রফিক বরকতদের সাথী অখ্যাত একজন!

এটাকে রহস্য গল্প বললে ভুল হবে না। সাথিয়া গ্রামের আলতাফ ব্যাপারীর স্ত্রী সালমা বেগম। দুই সন্তানের জননী। অতি সাধারণ একজন গৃহিণী। খুন হয়। পুরো গ্রাম তোলপাড় হয়ে যায়, পুলিশের এসআই আতিক বিষয়টির সমাধান করেন। প্রকৃত খুনী ধরা পড়ে। এর জন্য এসআই আতিককে খুলতে হয় এক রহস্যের জাল। খুনী ধরা পড়ায় গল্পে খুন হওয়ার কষ্টটা লাঘব হয়।

শোভন। ইবুর চাচাতো ভাই, শৈশবের ক্লাসমেট, বন্ধু। বহু প্রতিভার অধিকারী। 'শোভন' গল্পের অনেকটা জুড়ে লেখক ইবু আর শোভনের শৈশবের বর্ণনা দিয়েছেন। পড়ছিলাম আর মেলাচ্ছিলাম আমার দুরন্ত শৈশবের সাথে। ছাপাখানার মেশিনের মতো একটার পর একটা আলোচনা করেছেন। শুরু করাটা টের পেলেও শেষ হওয়াটা টের পাওয়া যায় না। নিমিষেই শেষ।

জণ্ডিসে শোভনের মৃত্যু হয়। শোভনের আইসিউতে থাকার সময়কার বর্ণনায় লেখক লিখেন- "নাকে নল দিয়ে আইসিইউতে পড়ে থাকা অসাড় দেহটি প্রায়ই নড়ে উঠত। সেই নড়ে ওঠা মুহূর্ত দেখার জন্য কুড়ি জোড়া চোখের কী অপেক্ষা!

রিক্তা আপু লন্ডন থেকে রওয়ানা দিয়েছিলেন, শোভনের একবার, দুইবার, তিনবারের নড়ে ওঠা দেখতে। ওর বেঁচে থাকার এটাই যে চিহ্ন ছিল!"

লেখক ইবনে আমীরকে আমার খুব ভালো লেগেছে। লেখার হাত খুবই ভালো। বিশেষ করে গল্প। ছোট ছোট বাক্য লিখেন। কেমন যেন পাঠক দস্তরখানে অপেক্ষা করছেন। তিনি আস্তে আস্তে সবকিছু পরিবেশন করলেন। পাঠক পুরো মজা নিয়ে জিনিসটা উপভোগ করে বিদায় হলেন।

লেখকের প্রতি আমার অভিযোগ, প্রতিটি গল্পে পাঠককে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পান? প্রথম গল্পে ইসরাকে মারলেন, দ্বিতীয় গল্পে ইবুকে মারলেন, তৃতীয় গল্পে সালমাকে মারলেন, চতুর্থ গল্পে শোভন কে মারলেন। এখানেই থেমে থাকেননি। গল্পের শেষে পুণশ্চ দিয়ে লিখে দিলেন, এই গল্পের বাপ্পিও ট্রেন এক্সিডেন্টে মারা গেছে।

এতোগুলো মৃত্যুর গল্প পড়ার পর মনে হয়েছে, "এই শহরে কেউ বেঁচে নেই।" সত্যিই মনে হয়েছে, লেখক নামকরণে বাঙালিয়ানা থেকে বের হতে পেরেছেন। নামকরণের যথার্থ কারণ এই বইয়ে আছে। টাইপ মিসটেকগুলোর ব্যাপারে আরেকটু সচেতন থাকা উচিত ছিল। আশি পৃষ্ঠার একটা বইয়ে সাত-আটটা শব্দের মিসটেক দুষণীয় বা দৃষ্টিকটু নয়। তবে না থাকাটা সৌন্দর্য।

শেষকথা, লেখক বইটি অর্পণ করেছেন, তার সকল 'তুমি' কে। এটা দেখার পর আমি নিয়ত করেছি, যদি কোনদিন লেখকের সাক্ষাত পাই, তাহলে তাকে বলবো আমাকেও তুমি করে বলতে, এমন একটি বইয়ের অর্পণের অংশীদার হতে কে না চায়!

বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন

এক নজরে বই

বই : এই শহরে কেউ বেঁচে নেই
লেখক: ইবনে আমির
ধরণ: গল্প।
প্রচ্ছদ: ফয়সাল মাহমুদ।
পৃষ্ঠা: ৮০
প্রকাশক: বইকেন্দ্র পাবলিকেশন
মূল্য : ১০০

আরএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ