মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

‘যে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম, আজ সে দেশের নাগরিকই নাকি নই আমি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাসান হাফিজ : বার্মার একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এখন অবস্থান করছেন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে । সেনাবাহিনীর জেনারেল পদ মর্যাদার এ কর্মকর্তা একজন রোহিঙ্গা মুসলমান । চলতি বছর আগস্টের শেষ সপ্তাহে আরাকান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে বার্মিজ বাহিনী অভিযান শুরু করলে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন তিনি।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে গেলে এ প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাত হয় বয়োজৈষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা ওমর হাকিমের সাথে । কুতুপালং নতুন ক্যাম্পে পলিথিনের ঝুপড়িতে থাকেন তিনি । ১৯৪৯ সালে মংডুর খিলাদং গ্রামে জন্ম নেন ওমর হাকিম । তার বাবা ওই এলাকার জমিদার আব্দুল লতিফ ।

কুতুপালং পুরনো ক্যাম্পে প্রবেশ পথে এক দোকানে চা পান করতে করতে ওমর হাকিমের মুখ থেকে শুনা হয় তার জীবনের বাস্তব গল্প ।

ইংরেজি ও রোহিঙ্গা মিশ্রিত ভাষায় ওমর হাকিম জানান, তার বার্মিজ নাম ছিল চিংহ্লা অং । ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের রাজত্বকালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । তখনও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়নি । সংসদ ও প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পদে আসীন ছিলেন ।

সত্তরের দশকে পদোন্নতি পেয়ে ইয়াঙ্গুন চলে যান ওমর হাকিম । সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান । কর্তৃপক্ষের হয়ে লন্ডনের স্টামপোর্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পরমাণু, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে মাষ্ট্রার্স করেন ।

তিনি বলেন, “ব্যাচম্যাটরা আমাকে ওমর খান হিসেবে জানেন । বাহিনী ও পড়ালেখা দু’টাতে দক্ষ হওয়ায় একজন সিপাহী থেকে আমি ধাপে ধাপে জেনারেল পদ মর্যাদা লাভ করি ।”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সেনা প্রধান মিন অংহ্লাইং ছিল আমার জুনিয়র ব্যাচের । সে আমাকে খুব শ্রদ্ধা করতো”।

১৯৮২ সালে নতুন আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার পর রোহিঙ্গাদের চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয় । সেসময় নিজেদের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রতিবাদী রোহিঙ্গাদের সাথে ছিলেন ওমর খানও । ফলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় । ওমর খান পালিয়ে যান থাইল্যান্ডে । সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় সংসার পাতেন।

২০০০ সনের শুরুর দিকে গোপনে তিনি দেশে ফিরে আসেন । স্বদেশে ফিরতে পেরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন । গ্রামের বাড়িতে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীদের সাথে সময় কাটান । কিন্তু সে আনন্দ আর রইলনা ।

মাস তিনেক আগে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে বর্বরতা চালায় । এসময় প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে যায় । ওমর হাকিমও তার পরিবার পরিজনের সাথে বাংলাদেশ ছুটে যান । আশ্রয় নেন পলিথিনের তাবুতে । ক্যাম্পে এখন মানবেতর দিন পার করছেন তিনি ।

ওমর হাকিম বলেন, ‘‘দেশ মানে মা । একসময় এ মাকে রক্ষা করার শপথ নিয়ে সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত ছিলাম । কিন্তু বর্বর বৌদ্ধরা বৈষম্যনীতি প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সকল প্রকার অধিকার হরণ করে নেয় । অন্যায়ভাবে শাসন ও শোষণের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জনজীবনকে অতিষ্ট করে তোলে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে । “

তিনি বলেন, যে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম, আজ সে দেশের নাগরিকই নাকি আমি নই! এ কেমন বিচার?

সূত্র: আরাকানটিভি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ