শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করবেন না: মুফতি ফয়জুল করিম জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি

নাসিক নির্বাচন, বিশেষ কোনো বার্তা আছে কি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
সাংবাদিক

palash_rahman5বহুলালোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে। মোটা অংকের ভোট ব্যবধানে বিজয় পেয়েছেন সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি। তিনি নৌকা প্রতিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ভোট করেছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৮ আর ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাত মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের আইভী, বিএনপির অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মাসুম বিল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল হক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস এলডিপির কামাল প্রধান।

লেখার গভীরে যাওয়ার আগে পাঠকদের ছোট একটা চুটকি শোনাতে চাই- এক লোক ভোটে দাঁড়িয়ে মাত্র ভোট পেয়েছেন। ভোটের রেজাল্ট শেষে বাড়ি ফিরতেই তার বৌ তুমুল ঝগড়া বাধিয়ে দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম, অন্য কোনো মহিলার সাথে তোমার সম্পর্ক আছে।

ভোটে হেরে আলু ভর্তা হয়ে যাওয়া লোকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললেন, কী বলছো এসব?

তখন তার বউ আরো রেগে গিয়ে বললেন, তুকি কি ভেবেছো, আমি কিচ্ছু বুঝি না? কোনো খবর রাখি না? নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তুমি ভোট পেয়েছো। প্রথমটা দিয়েছো তুমি, দ্বিতীয়টা আমি। সত্যি করে বলো তৃতীয় ভোটটা কে দিলো?

আমি জানি না যারা এই ভোটে হেরেছেন তাদের কারো জীবনে সত্যি সত্যি এমন কোনো গল্পের অবতারণ ঘটেছে কিনা, যদি ঘটে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ সাত মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত জন প্রার্থী খুবই হাস্যকর ভোট পেয়েছেন। নিজ দলের প্রতীকে ভোট করে তারা কেউই সংখ্যা অতিক্রম করতে পারেননি। ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী (মিনার) ৯১০, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী (কোদাল) ৬৭৪, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী (হাতঘড়ি) ৪৮০ এলডিপির প্রার্থী (ছাতা) ৪৩২ ভোট পেয়েছে। যা শুধু হাস্যকরই নয়, লজ্জাকরও বটে।

মুসলিমরা বড়দিনের উৎসব করলে ৫ বছরের সাজা

পশ্চিমা সভ্যতা থেকে শিশুদের বাঁচাতে সৌদির উদ্যোগ

বিশেষ করে ইসলামি ঐক্য জোটের ভোট সংখ্যা দেখে আমার আরেকটি কথা মনে পড়ে গেল। অনেক আগে ইসলামি ধারার রাজনীতিক গাজী আতাউর রহমানের একটা লেখা পড়েছিলাম। লেখাটার শিরোনাম ছিল, 'অশ্বডিম্ব ফলাফল নিয়ে ইসলামি মহলের নির্বাচনী সুড়সুড়ি' দেশের কোনো এক জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি ওই লেখাটা লিখেছিলেন। লেখার ভেতরের কথা আশা করি পাঠকরা শিরোনাম থেকেই বুঝতে পারছেন। অশ্বডিম্ব ফলাফলের নির্বাচনী সুড়সুড়ি থেকে আমাদের দেশের ইসলামি মহল এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। বেরিয়ে আসার কোনো চেষ্টা আছে বলেও মনে হয় না। এত দিনেও দেশের ইসলামি মহল একটা নির্বাচনী ঐক্য গড়ে তোলার মতো মানসিকতা অর্জন করতে পারেনি। সুতরাং তাদের ফলাফল যে অশ্বডিম্ব হবে তা বুঝতে মুফতি মুহাদ্দিস হওয়ার দরকার হয় না।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তুলনামূলক ভালো করেছেন। তিনি এক দল থেকে নির্বাচন করে ১৩ হাজার ৯১৪ ভোট পেয়েছেন। তার এই ভোট সংখ্যা নিয়েই ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মহাউল্লাস দেখা যাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে একটা হিসাবও আবিষ্কার করে ফেলেছেন। তারা বলতে চেষ্টা করছেন, আইভি ছিলেন ১৪ দলের প্রার্থী। তিনি পেয়েছেন ,৭৫,৬১১ ভোট। তার প্রাপ্ত এই ভোট সংখ্যাকে ১৪ ভাগ করলে দল প্রতি প্রায় সাড়ে ১২ হাজার করে ভোট পড়ে। একই ভাবে ২০ দলের প্রার্থী সাখাওয়াত পেয়েছেন ৯৬,০৪৪ ভোট। তার পাওয়া ভোট সংখ্যা ২০ ভাগ করলে প্রতি ভাগে ৫ হাজারেরও কিছু কম ভোট পড়ে। এই হিসাবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী একদল থেকে নির্বাচন করে প্রায় ১৪ হাজার ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে।

তাদের এই হিসাব এবং আত্মতৃপ্তি দেখে আমার বলতে ইচ্ছা করছে, পাগলের সুখ মনে মনে, দিন দুপুরে তারা গোনে। তারা যে কতো হাস্যকর বিষয় নিয়ে মাতামাতি করছে তা বোঝার মতো রাজনৈতিক বিচক্ষণতা তাদের মধ্যে আছে কিনা আল্লাহই ভালো জানেন। আমি মনে করি এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের সঠিক বিশ্লেষণ না করে এমন একটা ফালতু, অযৌক্তিক বিয়ষের অবতারণা করে আত্মতুষ্টিতে ভোগা মানে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দেয়া। সঠিক কাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে পিছিয়ে থাকা। অশ্বডিম্বে তা দেয়া।

১৪ দল বা ২০ দলের প্রধান দুই দল বাদ দিলে কোন দলে 'টা ভোট আছে সে সম্পর্কে পাঠকরা সবাই ওয়াকিবহাল। আমি নিশ্চিৎভাবে বলতে পারি ১৪ এবং ২০ দলীয় জোটের কোনো নেতাই এক সাথে ১৪ বা ২০টা দলের নাম বলতে পারবে না। সুতরাং ১৪ দল, ২০ দলের ধোয়া তুলে বগল না বাজিয়ে সত্যিকারের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ করা উচিৎ।

অপর দিকে আছে ইসলামি ঐক্যজোট। আমি জানি না মোট কতোটা দল নিয়ে তাদের এই ঐক্যজোট। তারা নিজেরাও জানে বলে মনে হয় না। (যদিও একটা সময় আলোচিত ছিল এই দল) সুতরাং তাদের কথা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। 

আওয়ামী লীগ খুব ভালো করেই জানে চুরিমারা করা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীকে হারানো সম্ভব নয়। ওখানে তার জনপ্রিয়তা অনেক। গতবার শামিম ওসমানের মতো প্রার্থী আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েও তাকে হারাতে পারেনি। এবার যদি আইভিকে বাদ দিয়ে শামিম বা অন্য কাউকে বিজয়ী করতে হয় তবে ব্যাপক চুরিমারা করতে হবে বুঝেই আওয়ামী লীগ কোনো রিস্ক নিতে চায়নি। তারা আইভিকে তাদের প্রার্থী করেছে। সাধারণ ভাবে আগামী বছরই দেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। আওয়ামী লীগ চায় যেকোনো কিছুর বিনিময় তাদের অধিনে নির্বাচন করবে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণ করাবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী নকশা বাস্তবায়নের জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে নাসিক নির্বাচন সুষ্ঠু করতে। তারা দেখাতে চেয়েছে শেখ হাসিনার অধিনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। কারণ অতীতের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নিয়েছে, তারা দেখেছে মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়, এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জিবিত হয়। নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন করার উৎসাহ পায়। সে সুযোগ আওয়ামী লীগ আর বিএনপিকে দিতে চায় না। আবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ  ঢাকার দুই সিটির মতো নির্বাচনও করতে চায় না। সুতরাং তারা আইভির বিজয় নিশ্চিৎ জেনেই তাকে প্রার্থী করেছে এবং দেশবাসীকে দেখাতে চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, হতে পারে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হয়।

এখন দেখার বিয়ষ বিএনপি কি সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কি আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়ে শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় নির্বাচন করবে, নাকি রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে।

লেখক: প্রডিওসার, রেডিও বেইস ইতালি


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ