শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করবেন না: মুফতি ফয়জুল করিম জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি

কুরআনের পাখি কারী উবায়দুল্লাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

qari_ubaidullah2দিদার শফিক: কারী উবায়দুল্লাহ। কুরআনের আলো ছড়ানো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করে কুরআনের হৃদয়স্পর্শী আবেদন মানুষের হৃদয়ের গভীরে পৌছে দেওয়াই ছিল তার কাজ। দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে আজ মঙ্গলবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তার নিজ বাসায় তিনি পরলোকগমন করেন।

মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ার কোদালা ইউনিয়নের একটি সম্ভ্রান্ত ধার্মিক পরিবারে ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা বিশিষ্ট আলেমে দীন আল্লামা শাহ মেহেরুজ্জামান ইসলামাবাদি রহ.। বাবা আল্লামা শাহ মেহেরুজ্জামান ইসলামাবাদি রহ. এর কাছেই তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। লালবাগে মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ. , শাইখুল হাদিস আজিজুল হক রহ. সহ অন্যান্য বিজ্ঞ আলেমদের কাছে তিনি শিক্ষালাভ করেন। ১৯৬২ সালে লালবাগ মাদ্রাসা থেকে তিনি তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। এ বছরেই তিনি লালবাগ মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। একই বছর মাত্র ১৮ বছর বয়সে নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত রেডিও পাকিস্তান কেন্দ্রে প্রথম কোরআন তেলাওয়াত করেন তিনি।১৯৬৫ সালে শুরু হওয়া পাকিস্তান টেলিভিশন যত দিন ছিল ততদিন ক্বারী উবায়দুল্লাহ সুমধুর কন্ঠ দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন অগণিত ধর্মপ্রাণ মানুষকে।

১৯৭৫ সালে বিটিভি উদ্বোধন হয়েছিলো তারই তিলাওয়াতের মাধ্যমে । বাংলাদেশ পার্লামেন্টের সেই উদ্বোধনী অধিবেশন থেকে ৯ম পার্লামেন্ট পর্যন্ত আমাদের জাতীয় সংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানসমুহকে কুরআনের মধুর তেলাওয়াতে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন তিনি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, নিউমার্কেট, হোটেল শেরাটনসহ জাতীয় অসংখ্য স্থাপনার উদ্বোধন হয়েছে তার তেলাওয়াতের মাধ্যমে। তার যাদুকরি কন্ঠে কোরআনের তেলাওয়াত করে দেশ ও জাতির জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান ও মর্যাদা ।

কারী মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ আর নেই

কারি উবায়দুল্লাহ সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, লিবিয়া, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অন্তত ২০-২৫টি দেশে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বারবার প্রথমস্থান অর্জন করে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনেন বিরল মর্যাদা। সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ও খালেদ দুইবার তাকে কোরআনের শিল্পী বা কারী হিসেবে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন।

কারি উবায়দুল্লাহর সুমধুর তেলাওয়াত বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকেও প্রায় জুমাবার টেনে নিয়ে আসত চকবাজার শাহি মসজিদে। নামাজের পর শেখ মুজিব কারি উবায়দুল্লাহর বুকে বুক লাগিয়ে কারিকে সম্মান করতেন এবং নিজেও সম্মানিত হতেন।

শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন কারি উবায়দুল্লাহর ছাত্র। তিনি দীর্ঘদিন তার কাছে কুরআন শিক্ষা করেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জেনারেল জিয়া কখনও কখনও শুধু কুরআন তেলাওয়াত শোনার জন্য তাকে বঙ্গভবনে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসতেন। দেশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে কারি উবায়দুল্লাহ কুরআনের সম্মোহনী সুরের দ্যোতনায় মুগ্ধ করতেন কুরআনপ্রেমী শ্রোতাদের। বাংলাদেশ বেতারে তার সুমধুর কণ্ঠে আজান ও তিরাওয়াত সম্প্রচারিত হত।

১৯৬২ সাল থেকে ঐতিহ্যবাহী চকবাজার শাহি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন তিনি। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নামাজ পড়াতে না পারলেও তাকে নিয়মিত সম্মানী দিয়ে যাচ্ছিল মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, তিনি ২০০০ সালে প্রথমবারের মত হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ওই সময় চিকিৎসা করার পর তিনি সুস্থ হন। এর ছয় বছর পর ২০০৬ সালে ঢাকার বাইরে একটি ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার সময় পান্থপথ এলাকায় ব্রেনস্ট্রোকের শিকার হলে তাকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কারি উবায়দুল্লাহর সুমধুর তেলাওয়াত বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকেও প্রায় জুমাবার টেনে নিয়ে আসত চকবাজার শাহি মসজিদে। নামাজের পর শেখ মুজিব কারি উবায়দুল্লাহর বুকে বুক লাগিয়ে কারিকে সম্মান করতেন এবং নিজেও সম্মানিত হতেন।

অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানে দু’মাস চিকিৎসা গ্রহণ করেন তিনি। এসময় চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীকালে তাকে ভারতের কলকাতায় নিয়ে এএমআরআই হাসপাতালে অধ্যাপক জিকে পুস্তির তত্ত্বাবধানে ১৫ দিন চিকিৎসা দেয়া হলে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে চলাফেরা করতে শুরু করেন তিনি।

দু’বছর পর ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন বছর ব্রেনস্ট্রোকের শিকার হন। দু’বছরপর ২০১২ সালে সর্বশেষ ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তখন থেকেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসায় অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সরকার তাকে থাকার জন্য একটা বাড়ি বরাদ্দ দেয়। চকবাজার মডেল থানার চাঁদনীঘাট এলাকার গৌর সুন্দর রায় লেনের ৩৩/৩৭ নম্বর বাড়ির সাড়ে ৮ কাঠার মধ্যে ৪ কাঠা জমির বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এই বাড়িতেই ২ স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৬ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। বিভিন্ন সরকারের সময়ে বাড়ির বরাদ্দ পাওয়া অংশটি তার নামে সাব-কবলা দলিল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর তা করেনি। ফলে বরাদ্দের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। এই সুযোগে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গেজেটভূক্ত বাড়িটি মামলা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল।

বাড়ি হারিয়ে বুড়িগঙ্গার ওপারে কামরাঙ্গীরচরে চলে যেতে হয় তাকে। কামরাঙ্গীরচরের নিজামবাগ এলাকার মাতবর বাজারে স্ত্রীর নামে কেনা জমিতে শাশুড়ির নামে প্রতিষ্ঠিত আক্তার বানু নূরানী মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার ভবনেই এসে আশ্রয় নেন কারি উবায়দুল্লাহ ও তার স্ত্রী। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কামরাঙ্গীরচরের বাসায়ই ছিলেন।

আরআর


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ