শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করবেন না: মুফতি ফয়জুল করিম জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি

তিনি চলে গেলেন, দীপ নিভে গেলো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

mkhanইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আর নেই। আকাশে বাতাসে বিরহ বাজে। সবখানে বিরহের করুণ ধ্বনি। শোক শোক আবহ। ভেজা ভেজা বাতাস। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি। যেনো এতিমের কান্না-করুণ চাহনি।

তিনি অনেকদিন থেকে শয্যাশায়ী। কথা বলেন আস্তে আস্তে। মাঝে মাঝে বেহুঁশ। এই হাসপাতালে ওই হাসপাতালে ছুটোছুটি। শেষে নিয়ে যাওয়া হলো ল্যাবএইড। এ খবরগুলো কানে আসে আর প্রিয় মহলে অস্বস্তি বাড়ে। অসুস্থতার ছবি চোখ পড়ে আর চোখের কোণে পানি জমে। সেই ভেজা চোখে ভেসে বেড়াতে থাকে ফেলে আসা দিনের কতো স্মৃতি। মদীনাভবনের ওই ছোট্ট অপরিসর কামরাটায়, কতো গিয়েছি। আপন ছেলের মতো সময় দিতেন তিনি। একটুও ব্যস্ততা দেখাতেন না। মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতেন আর মিষ্টি হাসির টুকরো মুখে নিয়ে জবাব দিতেন। বিদায়ের সময় বলতেন আপনি আসবেন! আবার আসবেন!
আল্লাহ! তাঁকে সুস্থ করে দাও!

দুই.
কিন্তু তিনি আর সুস্থ হলেন না। প্রিয় রমজানের প্রিয় মুহূর্তে আমাদের এই প্রিয় মানুষটি চলে গেলেন! চলেই গেলেন! দীপ নিভে গেলো। সব যেনো অন্ধকার হয়ে গেলো। কাছের মানুষ কাঁদলো। দূরের মানুষ কাঁদলো। প্রিয়জন কাঁদলো। মদীনা ভবন কাঁদলো। আকাশ কাঁদলো। পরিবেশও কাঁদলো। শোক শোক আবহে সারা ঢাকা, সারা বাংলাদেশ, সারা মুসলিম জাহান ছেয়ে গেলো। সবাই যেনো এতিম। সদ্য বাবাহারা। কাতর চাহনি। ছলছল দৃষ্টি। স্তব্ধ নির্বাক ভঙ্গি। লাশ সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীরব দৃষ্টিরা যেনো বলছিলো—
আর কথা বলবেন না!
আর স্বপ্ন দেখাবেন না!
মদীনাভবনের ওই ছোট্ট কামরাটায় আর আসতে বলবেন না!
ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেবে কে এখন আমাদেরকে?
অক্লান্ত?
অবিরক্ত?
মমতাভরা?
স্নেহঝরা?

তিন.
আজ শুক্রবার। আযানের এখনো বাকি। কিন্তু হঠাৎ পাকুন্দিয়ার ছয়চির গ্রামে শোনা গেলো অসময়ের আযানধ্বনি। আযান? কার কণ্ঠে? কার বাড়িতে? উৎসটা এবং কারণটা জানতে কোনো বেগ পেতে হলো না। মাওলানা আনসারুল্লাহ খানের শ্বশুর বাড়ি থেকে একটু আগে ভেসে এসেছিলো আযানের সুমধুর একটা ধ্বনি। অন্যরকম কণ্ঠ। যেনো আনন্দ ঝরে ঝরে পড়ছিলো। কারণ আছে আনন্দের। বাবা আনসারুল্লাহ খানের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে! এইমাত্র জন্ম নিয়েছে মায়ের কোল আলোকিত করা এক শিশু। ছেলে। মুহিউদ্দীন। খান।
মানুষ ছুটে আসছে দুআ দিতে। অভিনন্দন জানাতে। মুবারকবাদ বলতে। সবাই বলছে, সুন্দর নাম তো! বাবার হাস্যোজ্জ্বল জবাব, ছেলে আমার আল্লাহর দীনকে জিন্দাহ করবে, ইনশা আল্লাহ!

চার.
তাই হলো। ছোট্ট মুহিউদ্দীন ছোট্ট থেকেই আলাদা হয়ে বড় হতে লাগলো। পড়াশুনায় বেশ মন। তরতর করে বাড়তে লাগলো সামনে। কিছুদিন নানার বাড়ি। মন টেকে না। তারপর বাবা’র কাছে। পাঁচবাগে। জামিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসায়। দেখতে দেখতে এসে গেলো আলিম। ১৯৫১ সালে। তারপর খুব তাড়াতাড়ি এসে গেলো ফাযিল। ১৯৫৩ সালে। কৃতি ছাত্র মুহিউদ্দীন। অনেক নাম্বার পেয়ে পাস করলো।
তারপর ঢাকায়। নামকরা আলিয়া মাদরাসায়। এখানে কতো বড় বড় শিক্ষক। তাঁদের সামনে দরসে বসতে কী মজা! কানে যেনো মধু ঝরে। শুধু ভালো লাগে। কিশোর যুবক মুহিউদ্দীনের মন আনন্দে নেচে উঠলো। চলতে লাগলো ইলম অর্জনের সাধনা। রাতে দিনে। সব অবকাশে। নিরবচ্ছিন্ন সাধনা। আলাদা দ্যুতিতে বিভাময়। এভাবে চলে এলো কামিল। হাদীসে একবার। ফিকহে একবার। আহা, ডাবল কামিল। সময়টা ছিলো ১৯৫৬ সাল।

পাঁচ.
কিন্তু এ পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক সাধনা করতে হয়েছে। কাঁদতেও হয়েছে সেই ছোট্টবেলা থেকেই। আহারে, এ কান্নার যেনো শেষ নেই। মাত্র ১২ বছরে তিনি স্নেহময়ী মাকে হারিয়েছিলেন! ছোট্ট মুহিউদ্দীনকে রেখে তিনি চলে গেলেন আখেরাতের অনন্ত সফরে। শোকে শোকে বোবা হয়ে গেলো মুহিউদ্দীন। চোখের মাঝে অশ্রু যেনো বান ডেকে গেলো। কান্না থামে না। থামেই না। বার বার তার মনে পড়ে মায়ের একটি উক্তি— বাবা মুহিউদ্দীন! আল্লাহ যেনো তোমাকে মাসিক নেয়ামতের মতো একটা পত্রিকা বের করার তাওফিক দেন!

লেখাটি মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া

/আরআর


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ