শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করবেন না: মুফতি ফয়জুল করিম জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি

প্রতিবাদের বৈষম্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

protestsসাঈদ কাদির : শোষণ, অবিচার, অত্যাচার, অনাচার, খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, জালিয়াতি- সব ধরনের অপরাধকর্মের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ হওয়া উচিত। এটি সমাজের প্রত্যেক সদস্যের জন্যই অবশ্যকার্য। নৈতিক দায়িত্ব। মানবিক কর্তব্য। যার যার অবস্থা ও অবস্থান থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে হবে। প্রত্যেককেই স্ব-স্ব সামর্থ্যানুযায়ী প্রতিবাদীর ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে মাঠে নামতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিবাদ হতে হবে সমতার নীতিতে। সব অপরাধী ও জালিমের বিরুদ্ধে। সমান্তরালে।
প্রতিবাদের ক্ষেত্রে অপরাধীর মান-সম্মান, পদপদবী বা ক্ষমতার কেয়ার করা যাবে না। এটাও মনে রাখতে হবে, প্রতিবাদ মানে হিংস্রতা নয়, প্রতিবাদ মানে জ্বালাও পোড়াও-ও নয়। প্রতিবাদ মানে শান্তি ও অ-সহিংসতার পথে আন্দোল করা; অপরাধীর ভীতে ঝাঁকুনি দেওয়া। গাফেল দুনিয়াকে জাগিয়ে তোলা, অসেচতন জাতিকে সচেতনতার ছবক দেওয়া।
আরো মনে রাখতে হবে, প্রতিবাদের ভাষা ও পদক্ষেপ হতে হবে সুচিন্তিত ও যুগচাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে। প্রতিবাদের নামে কাউকে গালাগাল করা, কারো উপর গুপ্ত হামলা করা, মিথ্যা মামলা দায়েরা করা- এসবই কাপুরুষতা; ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয়। প্রতিবাদ করতে হবে উদার মন নিয়ে। সবার জন্য সমান দরদ দেখিয়ে। এখানে মূল সমস্য হলো- পরিচিত ও প্রভাবশালীদের পক্ষে প্রতিবাদী লোকের অভাব হয় না এখন। অথচ কৃঞ্চকলির (গনজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় কর্মী) বাসার কাজের মেয়েটির (জান্নাতী) পক্ষে দরদী হতে দেখা যায়নি মানবতাবাদীদের। কেননা সে 'কাজের মেয়ে'। তার সামাজিক মর্যাদা নেই। তার পক্ষে আন্দোলন করলে বাহবা-হাততালি জুটবে কদাচিৎ।
অন্যদিকে তনুর বাবার অর্থ না থাকলেও তনুর পরিচিতি ছিলো। সে ছিলো তথাকথিত সংস্কৃতিকর্মী। এ জন্য তার হত্যার বিচার দাবি করে অনেককেই প্রতিবাদী হয়ে উঠতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছে তনুর পক্ষে। বিভিন্ন সংগঠন নানান ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে। তনুহত্যার প্রতিবাদে গানের কনসার্টও করা হয়েছে। কবর থেকে তার লাশও তোলা হলো ময়না তদন্তের স্বার্থে! বৈষম্যটা এখানেই। অপরাধকর্মের প্রতিবাদেও যদি বৈষম্য থাকে। তবে প্রতিবাদ করেই লাভ কী? মনে রাখা দরকার, অপরাধীর পেশা যাই হোক, অপরাধকর্মে জড়িত হবার পর তার পরিচয় একটাই- সে অপরাধী। নচেৎ রাষ্ট্রপতি এরশাদকে জেলে থাকতে হতো না যুগোর্ধ কাল।
সুতরাং এখানটাতে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। মসজিদের ইমাম খুন করলে তার ইমাম পরিচয় আমরা মনে রাখি না, তেমনি স্কুলমাস্টার যৌননিপড়ক হলে আমরা তার স্যার পরিচয় মনে রাখি না। রাখা উচিতও নয়। কারণ অপরাধীর পরিচয় একাটাই- সে অপরাধী। আর যদি অপরাধীর পেশাগত পরিচয়ের খেয়াল রেখে, তার সম্মানের কথা বিবেচনা করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন আর সমাজের শৃঙ্খলা ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। সমাজে ভালো মানুষও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাওয়া সম্ভবও না।
কারণ, ধরুন কলিম চাচা এলাকার দফাদার, লাইলি চাচির উড়না ধরে টান দিলো- তিন রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে, কিন্তু লোকে তাকে কিছু বলল না। তাকে সম্মান করল। তার অপরাধ দেখল না। কারণ সে দফাদার। এখন সমস্যা হলো, তার পেশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে যদি তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে থানার চৌকিদার মজীদ বেচারাও এই কাজ করতে দ্বিধা করবে না। কারণ তার গায়েও সম্মানী হবার আলামত রয়েছে। একটি দেশে সব ধর্মের মানুষ বসবাস করে; করবে- এটিই মানবতা; এরই নাম সমতাচর্চা।
সব ধর্মের অনুসারীরা বসবাস করলেও প্রত্যেক দেশে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীরা থাকে সংখ্যাগুরু, অন্যান্যরা সংখ্যালঘু। সংখ্যাগুরুদের উচিত, অন্যদের সাথে ন্যায়নীতি ও ইনসাফের ব্যবহার করা। সংখ্যালঘুদের উপর কোন ধরণের একপেশে নীতি বা আচরণ যেমন বৈধ নয়, তেমনি এটি কাপুরুষতারও প্রমাণ। আবার সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার্থে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের উপর অতিরিক্ততাও কিন্তু বৈষম্যের শামিল।
বাংলাদেশ মুসলিম-সংখ্যাগুরু দেশ। এখানে হিন্দুরা বরাবরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। এবং এই পরিচয়ের সাহায্যে তারা দেশ-বিদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অপবাদরটনার প্রয়াসও পায়। এবং ক্রমান্বয়ে তারা এই পন্থাটির পথ-ঘাট সুগম করে চলেছে।
বাংলাদেশে খুনাখুনি হয়। নিহত ব্যক্তি কখনো থাকে মুসলিম, কখনো হিন্দু। খুনি সবসময় মুসলিম থাকে না। হিন্দু ব্যক্তিও কখনো কখনো মুসলিমের খুনি হয়। এখানে নারীনির্যাতন হয়; ইভটিজিংও হয়। মুসলিমের দ্বারা মুসলিম নারীর শ্লীলতাহানি হয়, মুসলিমের দ্বারা হিন্দু নারীরও সম্ভ্রমহানি হয়। আবার হিন্দু পুরুষও কখনো মুসলিম নারীর ইজ্জতের উপর হামলা করে। এখানে ধর্মকে টেনে আনা নিছক রাজনৈতিক দূরাভিসন্ধি ছাড়া কিছুই নয়। খুনি তার শত্রুকে খুন করে নির্দিষ্ট শত্রুতার জের ধরে। ধর্ষক নারীকে ধর্ষণ করে তার কূমতলব চরিতার্থ করার মানসে। ধর্ষিতার ধর্মের বিবেচনা ধর্ষকের বোধে থাকে না! খুনি তার শত্রুকে খুন করে, নির্দিষ্ট কোন ধর্মাম্বলম্বীকে নয়।
নিকট অতীতে আল্লাহ, রাসূল সা. ও ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ আলকুরআনকে কুৎসিত ভাষায় অবমাননা করা হয়েছে। যার অধিকাংশই হয়েছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে- শ্রেণিশিক্ষক কতৃক এবং এ সব শিক্ষকের সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বিষয়টা খুবই রহস্যজনক! অপরাধবিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করেন, এটি ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট চাল এবং গভীর কোন ষড়যন্ত্রের অংশ। এবং এটি নিশ্চয়ই বড় কোন সংগঠন বা রাষ্ট্রিক শক্তির অনুপ্রেরণা বা চাপে সংঘটিত হচ্ছে এবং রহস্যজনকভাবেই প্রায় একই সময়ে কতেক হিন্দু স্কুলশিক্ষক কতৃক ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কস্থাপন ও বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়ানো হচ্ছে।
অপরাধবিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করেন, পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাষ্টের কোন গোষ্ঠী বিশ্বদরবারে মুসলিমদের দুর্বল ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বাংলাদেশী হিন্দুদের দ্বারা এসব অপরাধ ও ইসলাম ধর্মাবমাননার ঘটনাগুলো ঘটিয়ে চলেছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবেই এসব অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে মানবতাবাদীদের কোনরূপ প্রতিবাদ-আন্দোলন চোখে পড়ছে না। বরংচ কিছু নামধারী ও তথাকথিত মানবতাবাদী মুসলিমবিদ্বেষী কথক ও লেখকদেরকে বিজ্ঞানমনষ্ক বলে বাহবা দিচ্ছে।
বোঝা যায়, তারা প্রতিবাদের নীতিতে একপেশে। তাদের মিশন কেবল মুসলিমদের বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসী হিসেবে পেশ করা। আর অন্য ধর্মাম্বলম্বীরা অপরাধ করলে সেটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া। নিকট অতীতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমেছিলো। তারা তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া 'শিক্ষা-কর' -এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। আন্দোলন করে সফল -ও হয়েছে। এ আন্দোলনে তাদের কোন সাংগঠনিক শক্তি ছিলো না। তারা প্রতিবাদ করেছে সমতা বজায় রেখে। কোনরকম রক্তচক্ষু বা দমনপীড়নের ভয়-ঢর তাদেরকে পিছু হটাতে পারে নি। তারা কোনরূপ হিংস্রতার আশ্রয়ও নেয়নি। অথচ তাদের কেউ রাস্তা থেকে সরাতে পারে নি। দাবি আদাই করেই তবে ঘরে ফিরেছে তারা। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেবার অনেক কিছুই আছে।
সাঈদ কাদির বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ