শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি খেলাফত আন্দোলনের নতুন মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী

জঙ্গিবিরোধী ১০ ফতোয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

faridঢাকা : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবার দমনে ১ লাখ আলেমের ফতোয়ায় সংযুক্ত হয়েছে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর। আজ ১৮ জুন দুপুরে ফতোয়াটি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা’র চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। বই থেকে প্রশ্নউত্তরগুলো তুলে ধরা হলো।

এক নং প্রশ্ন : মহান শান্তির ধর্ম ইসলাম কি সন্ত্রাস ও আতঙ্কবাদী কর্মকা-কে সমর্থন করে?
উত্তর : ইসলাম কখনো সন্ত্রাস সমর্থন করে না। অধিকন্তু সন্ত্রাস, হিংসা, হানাহানি নির্মূল করার জন্যই মহান ধর্ম ইসলামের আবির্ভাব। ইসলাম শান্তি ও ভালোবাসার ধর্ম।

কুরআনের ভাষায় একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করা গোটা মানবজাতির প্রাণ রক্ষা করা পক্ষান্তরে একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যা করার নামান্তর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুই নং প্রশ্ন : নবী রাসূলগণ বিশেষ করে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এই ধরনের হিংসাত্মক ও বর্বর পথ অবলম্বন করে ইসলাম কায়েম করেছেন?
উত্তর : নবী ও রাসূলগণ বিশেষ করে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কস্মিনকালেও সন্ত্রাস ও নির্মম বর্বরতার পথ অবলম্বন করেননি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ হলো দাওয়াত ও মুহব্বাতের পথ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর অনুসারী সাহাবীগণ প্রেম ও খেদমতের (সেবা) মাধ্যমে মানুষকে কল্যাণের প্রতি, হেদায়েতের প্রতি দাওয়াত জানিয়েছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা জীবন এর জ্বলন্ত সাক্ষী।

ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সাথে সন্ত্রাসকে যুক্ত করা চরম মুনাফিকী ও মিথ্যাচার বলে গণ্য। সন্ত্রাসীরা কখনও ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বন্ধু নয়। এরা সুস্পষ্ট শত্রু। এদের ব্যপারে সতর্ক থাকা সবার কর্তব্য।

৩ নং প্রশ্ন : ইসলামে জেহাদ আর সন্ত্রাস কি একই জিনিস?
উত্তর : জিহাদ ও সন্ত্রাস একই জিনিস নয়। জিহাদ হলো ইসলামের অন্যতম একটা নির্দেশ পক্ষান্তরে সন্ত্রাস হলো হারাম এবং অবৈধ। জিহাদ হলো নিজের এবং পরিবেশে ও সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সর্বকালীন কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া।

৪ নং প্রশ্ন : সন্ত্রাসসৃষ্টির পথ কি বেহেশত লাভের পথ না জাহান্নামের পথ?
উত্তর : সন্ত্রাস ও আতঙ্কসৃষ্টি করা যেহেতু হারাম এবং নিষিদ্ধ সুতরাং তা কখনও বেহেশত পাওয়ার পথ হতে পারে না। এ তো জাহান্নামের পথ। যারা বেহেশত লাভের জন্য বর্তমানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তাদের যদি বেহেশত লাভ করতে হয় তবে সন্ত্রাসবাদের মতো জাহান্নামের পথ থেকে অবিলম্বে তওবা করে শান্তি ও হেদায়েতের পথে ফিরে আসতে হবে।

৫ নং প্রশ্ন : আত্মঘাতী সন্ত্রাসীর মৃত্যু কি শহীদী মৃত্যু বলে গণ্য হবে?
উত্তর : আত্মহত্যা ও আত্মঘাত ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। নিজেকে মানববোমা বানিয়ে উড়িয়ে দেয়া কখনও বৈধ নয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে জিহাদে শরীক এক ব্যক্তি যুদ্ধে আহত হয়ে আত্মহত্যা করলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা দেন।

৬ নং প্রশ্ন : ইসলামের দৃষ্টিতে গণহত্যা কি বৈধ?
উত্তর : ইসলামে নিরপরাধ মানুষের গণহারে হত্যা বৈধ নয়। এমন কি সন্দেহের বশবর্তী হয়েও কাউকে হত্যা করা নিষেধ।

৭ নং প্রশ্ন : শিশু, নারী, বৃদ্ধ নির্বিশেষে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ইসলাম কি সমর্থন করে?
উত্তর : শিশু, নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল, যারা যুদ্ধে শরীক নয়, সেই ধরনের মানুষকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও তা জায়েয নয়। কিতাল বা স্বশস্ত্রযুদ্ধের উদ্দেশ্যে যখন মুসলিম দল বের হতো, তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ করে এই বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করতেন।

৮ নং প্রশ্ন : ইবাদতরত মানুষকে হত্যা করা কি ধরনের অপরাধ?
উত্তর : যেকোনো অবস্থায় খুন করা অপরাধ। ইবাদত বা উপসনারত কাউকে হত্যা করা সবচে জঘন্য এবং মারাত্মক অপরাধ।

৯ নং প্রশ্ন : অমুসলিমদের উপাসনালয় যথা গির্জা, মন্দির, প্যাগোডা ইত্যাদিতে হামলা করা কি বৈধ?
উত্তর : মুসলিম সমাজে বসবাসকারী অমুসলিমকে যদি কেউ হত্যা করে সে বেহেশতের গন্ধও পাবে না।  অমুসলিমগণের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ। এটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

১০ নং প্রশ্ন : সন্ত্রাসী ও আতঙ্কবাদীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে সকলের কর্তব্য কি না? 
উত্তর : মুনকারাত অর্থাৎ অন্যায় ও দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সবার কর্তব্য। বর্তমানে সন্ত্রাস ও আতংকবাদ সারা পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলিমদের বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, বদনাম করছে। এসব দুষ্কর্ম ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মারাত্মক শয়তানী ষড়যন্ত্র বই কিছুই নয়। সুতরাং এর বিরুদ্ধে শক্তি সামর্থের আলোকে সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সকলের জন্য জরুরি ধর্মীয় কর্তব্য। চুপ করে থাকার অবকাশ নেই।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ