মানুষের ভালোবাসা নাকি ঘৃণা- কোনটা নিয়ে বিদায় হবেন ড. ইউনূস?
প্রকাশ:
১৯ মে, ২০২৫, ০৭:৪১ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
যুবায়ের আহমাদ প্রফেসর ইউনূসকে দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষ যতটা সমর্থন করেছিল; অনেকে বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়ার পর আর কেউ এত ভালোবাসা পায়নি। কিন্তু প্রফেসর ইউনূস সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। কথিত আধুনিকতার নামে জীবনভর যে বিভিন্ন দেশে যে অনৈসলামিক সংস্কৃতি দেখেছেন, বাংলাদেশে সে সেসব আমদানি করার ব্যর্থ চেষ্ট করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার কথা বললেও মূলত দেশের মানুষের জীবনধারা ও সংস্কৃতির প্রতি তার আগ্রহ নেই। প্রথমত তার উপদেষ্টা পরিষদে এমন কয়েকজন একজিওকর্মী নারীকে তিনি রেখেছেন যারা সারাজীবন কথিত নারীবাদ প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি যারাই ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছে ওই নারীরা কথিত নারীবাদ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে বা নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন। এখন তাদেরই কেউ কেউ উপদেষ্টা হয়ে গেছেন। আগে বাইরে থেকে দাবি করতেন, এখন সরাসরি বাস্তবায়নের ক্ষমতা পেয়ে গেছেন। সর্বশেষ নারী সংস্কার কমিশনের নামে যে কমিশন করেছে ইউনূস সরকার তাতে তাদের মূল লক্ষ্য স্পষ্ট। এ কমিশনে বাংলাদেশি নারীদের প্রতিনিধিত্বশীল কোনো নারীকে রাখা হয়নি। এদেশের শত শত বছরের ঐতিহ্য, বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাবার সময় নারীরা বোরকা তো পরতোই, রিকশার ওপর আরেকটা কাপড় দিয়ে সে রিকশাটা ঢেকে দিত যেন পর্দার লঙ্ঘন না হয়। এটা বাংলার নারীদের ঐতিহ্য। কিন্তু তিনি যে কমিশন করেছেন তা এ ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। কেন করেছেন তা কিছুটা অনুমেয়। আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের জন্য। এটাই আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে মনে হয়। প্রফেসর ইউনূস এবং তার সরকার ভালো করেই জানে, এসব কথিত নারীবাদ যে নারীবাদ বিয়ের আগেই সন্তানের মা হওয়ার স্বাধীনতা চায় তা এদেশের গণমানুষ মানবে না; কমিশনের খসড়া রিপোর্ট প্রকাশের পর এদেশের আলেম-উলামা এবং ধর্মীয় প্রতিনিধিরা এর বিপক্ষে চলে যাবে। আবার এ মুহূর্তে নারী সংস্কার কমিশন করার বিশেষ প্রয়োজনও ছিল না। বাংলাদেশে বিগত ১৫ বছরে নারীর সম্মান মর্যাদার ক্ষতির চেয়ে শিক্ষাব্যবস্থা তো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমিশন তো করা দরকার ছিল আগে শিক্ষা নিয়ে। আর ইউনূসের এসব কমিশন করতে হবে কেন? তারা তো সংক্ষিপ্ত সময়ের একটা সরকার। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে একটি নির্বাচন দিয়ে তারা চলে যাবেন। এজন্য যা যা দরকার সেসব বিষয় করবেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ নারীদের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কমিশন বা প্রস্তাবনার কোনো দাবিও ছিল না। এরপরও কেন তিনি এ কমিশন করবেন? উত্তর একটাই। প্রফেসর ইউনূস এসব পরিভাষা, এসব আন্তর্জাতিক এজেন্ডার সাথে পরিচিত। পশ্চিমাদের দেখানো, যে আমি তোমার আশা প্রত্যাশাই বাস্তবায়ন করছি। প্রফেসর ইউনূস যদি এ কমিশনটা না-ই করতেন, কোনো সমস্যা হতো না। নীরবে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে গণমানুষের ভালোবাসা নিয়ে চলে যেতেন। কিন্তু এখন আর সেটা হবে বলে মনে হয় না। কারণ তিনি চাইলেই এখন আর ওদের সহজে থামাতে পারবেন না। ওদের সাথে আন্তর্জাতিক মহল জড়িয়ে যাবে। জড়াবে ওই নারীবাদ, যারা মালালার অধিকার চায়, আফিয়া সিদ্দিকীর অধিকার চায় না; যারা নারীর অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা বাসস্থান, ইজ্জতের অধিকার চায় না, ইচ্ছেমতো বিয়ে ছাড়া সন্তানের মা হওয়াকে নারী অধিকার মনে করে। এই নারীবাদ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর রাজনৈতিক হাতিয়ার। তারা ইউনূসকে বাইরে থেকে চাপ দেবে। আফগানিস্তান ও অন্যান্য রাষ্ট্রে দেখেছেন আন্তর্জাতিক মহল আর্থিক কোনো সহযোগিতা বা বিনিয়োগের আগে নারী স্বাধীনতা নেই বলে অভিযোগ করে। সেই স্বাধীনতা কোন স্বাধীনতা? এটাই অবাধ যৌনতার স্বাধীনাত। যার ফল এইডস ও নানা রোগব্যধী। কিন্তু বাংলাদেশে যখন সব দল, শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সাধারণ নারীরা কথিত এ কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে, তখন ৫১ সংগঠনের নামে ৫০ জন কথিত নারী হাফপ্যান্ট পরে শাহবাগে দাঁড়িয়ে তাদের যৌনতা ও জড়ায়ুর স্বাধীনতা চাবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া কোটি কোটি নারীদের দাবি প্রচার না করে ওই ৫০ জনের দাবি প্রচার করবে। সেটাই কেবল একটি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপে পড়বে। দেশের মাত্র ০.০১% মানসিকভাবে অসুস্থ নারীবাদীদের জন্য গোটা দেশ চাপে পড়বে। আল্লাহ না করুন, পরিস্থিতি সেদিকেই যাবে বলে মনে হচ্ছে। এদিকে সরকার এদেশের দেশপ্রেমিক ও ধর্মপরায়ন মানুষদের চাপে পড়বে। এদেশের দেশপ্রেমিক জনতা এ ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না। ফলে ইউনূস নিশ্চিত উভয় সংকটে পড়বেন। মানুষের ভালোবাসা হারাবেন। দেশপ্রেমিক ও ধার্মিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ালে তিনি হবেন সবচেয়ে ঘৃণার পাত্র। সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে। অহেতুক বিদেশিদের খুশি করার চিন্তা করে গণমানুষের ঘৃণার বস্তুতে পরিণত হবেন নাকি এদেশের জনগণের মূল্যবোধ ও চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কৌশলে এ কথিত কমিশনকে নিষ্ক্রিয় করে দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজগুলো করবেন। লেখক: কলামিস্ট, খতিব, আলোচক ও মাদরাসা পরিচালক আরএইচ/ |