‘বুনইয়ানুম মারসুস’ নিয়ে কোরআনের ব্যাখ্যা
প্রকাশ:
১১ মে, ২০২৫, ০৯:১০ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রায় যুদ্ধের রূপ ধারণ করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর গত ৬ মে মধ্যরাতে বাস্তবিকই পাকিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে ভারত, যার নাম তারা দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। আজাদ কাশ্মীরসহ আশপাশের কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় ওই রাতে। এ হামলার কঠিন জবাব দিতে উঠেপড়ে লেগেছে পাকিস্তানও। গত দুদিন ধরে দুদেশ থেকেই ভেসে আসছে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর। এমন পরিস্থিতিতে এবার সামনে এলো পাকিস্তানের প্রতিশোধমূলক অভিযানের নাম। পাল্টা এ সামরিক অভিযানের নাম তারা দিয়েছে ‘অপারেশন বুনিয়ান মারসুস’। আরবি ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ শব্দযুগলটি পাকিস্তান গ্রহণ করেছে পবিত্র কোরআন থেকে। শব্দযুগলটি মূলত পবিত্র কোরআনের সূরা সফ-এর চার নম্বর আয়াতের অংশ। এর অর্থ, সিসাঢালা প্রাচীর। সূরা সফের আয়াতের এই অংশটি একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে। মহানবি (সা.)-এর যুগে একবার কয়েকজন মুসলমান পরস্পরে আলোচনা করলেন যে, আমরা যদি এমন কোন আমল জানতে পারি, যা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়, তবে আমরা তা বাস্তবায়িত করব। আল্লাহ তায়ালা সূরা সফ নাজিল করে তাদের জানালেন, সেই আমল হচ্ছে জিহাদ। আল্লাহ তায়ালা যখন জিহাদের আয়াত নাজিল করেছিলেন, তখন অনেকের কাছে ব্যাপারটি দুরূহ হয়েছিল। আবার অনেকেই উহুদের যুদ্ধে মুশরিক বাহিনীর আক্রমনের সামনে টিকতে না পেরে যুদ্ধ ছেড়ে চলে এসেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা এই সূরার দুই ও তিন নম্বর আয়াতে বলেছেন তোমরা এমন কথা কেন বল, যা কর না? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক। আল্লাহ তায়ালা তো তাদেরকে (বিশেষভাবে) পছন্দ করেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে যেন তারা সিসা ঢালা প্রাচীর (অর্থাৎ সিসা গলানো প্রাচীর যেমন মজবুত, অপরাজেয় হয়ে থাকে, তেমনি তারা শত্রুর মুকাবিলায় পশ্চাৎপদ হয় না। তারাই আল্লাহর প্রিয় এবং পছন্দের। কোরআনের ভাষায়, বস্তুত আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে এভাবে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা সিসাঢালা প্রাচীর। (সুরা সফ, আয়াত : ৪) যারা এসব কথা বলেছিলেন, তাদের মধ্যে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা আনসারী (রা.)ও একজন ছিলেন। যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলো এবং জানা গেল যে জিহাদ হলো সর্বোত্তম আমল, তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নিজেকে আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিলেন। নিজের প্রতিজ্ঞার উপর অটল থাকেন তিনি এবং আল্লাহর পথে শহীদ হন। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন প্রকারের লোককে দেখে আল্লাহ তা’আলা হেসে থাকেন। (এক) যারা রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে, (দুই) নামাজের জন্য যারা কাতারবন্দী বা সারিবদ্ধ হয় এবং (তিন) যুদ্ধের জন্যে যারা সারিবদ্ধ হয়। (মুসনাদে আহমাদ) হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (র.) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় সেনাবাহিনীকে সারিবদ্ধ না করা পর্যন্ত শত্রুদের সাথে যুদ্ধ শুরু করতেন না। সুতরাং, কাতারবন্দী বা সারিবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা মুসলমানদেরকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এনএইচ/ |