নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী যত ধারা
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৪২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

সাদিকুর রহমান

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ৩১৮ পৃষ্ঠার দীর্ঘ প্রতিবেদনটি পড়লাম। দীর্ঘ আট মাস ধরে ১০ জন অবলা নারী মিলে যে কাজ করেছেন, তা এককথায় আকাম ছাড়া আর কিছুই না। এই কমিশন শুধু জনগণের অর্থ ও সময়ের অপচয়ই করেনি বরং ইসলাম ধর্ম ও এর বিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে একটি নতুন মতবাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এজন্য এই আকামের দায়ে এদেরকে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিত। সাথে আর্থিক জরিমানাও করতে হবে। তা নাহলে এরা বার বার এরকম আকাম করবে আর শুধু শুধু জনগণের টাকার অপচয় হবে।

প্রতিবেদনের প্রতিটি পর্যায়ে ইসলাম ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। এমনকি সংবিধান থেকে ‘ইসলাম’ ধর্মের প্রাধান্য বাদ দেওয়ার মতো সুপারিশও করা হয়েছে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থী। এটা স্পষ্ট যে, তারা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করার চেয়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন।

কমিশনের সুপারিশগুলোর কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কিছু বিষয় তুলে ধরলাম:

১. অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন: বিভিন্ন ধর্মের নিজস্ব পারিবারিক আইন বাতিল করে একক সেকুলার পারিবারিক আইন প্রবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে ধর্মীয় অনুশাসনের হস্তক্ষেপ এবং সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

২. নারীকে তালাকের সমানাধিকার: সকল ধর্মে তালাক ব্যবস্থাকে একীভূত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ইসলামে নির্ধারিত স্বামী-স্ত্রীর তালাক ব্যবস্থাকে বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

৩. উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন: কন্যা ও পুত্রকে সমান অংশ দেওয়ার প্রস্তাব করে কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিরুদ্ধে মত দেওয়া হয়েছে।

৪. বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব: ইসলাম বহুবিবাহকে নির্দিষ্ট শর্তে অনুমোদন দিলেও সেটিকে আইন করে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

৫. বৈবাহিক ধর্ষণ ধারণা প্রবর্তন: স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্মতির অভাবকে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে এবং পারিবারিক অস্থিরতা বাড়াবে।

৬. যৌনকর্মীদের শ্রমিক স্বীকৃতি: যৌনকর্মকে একটি পেশা বা শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা সমাজে অনৈতিকতা ও বিকৃত সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে পারে।

৭. সিঙ্গেল মাদারকে স্বীকৃতি: বিবাহবহির্ভূত সন্তান জন্ম ও অবৈধ সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করতে এই প্রস্তাবকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলে মনে হয়।

এই কমিশনের কাজ এবং সুপারিশগুলো দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। যারা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ইসলাম ও ধর্মীয় বিধানকে আঘাত করেছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। জনসাধারণের টাকায় পরিচালিত কমিশন কখনোই জনগণের বিশ্বাস ও চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের একপাক্ষিক ও বিতর্কিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি।

লেখক: শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক

এনএইচ/