গাজার ভালোবাসায় রাস্তায় বাংলাদেশের মানুষ
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:১৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে বাংলাদেশের মানুষ। বিশ্বব্যাপী ডাক দেওয়া ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচিতে সাড়া দিচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দল-মত নির্বিশেষে সবাই গাজার জন্য নিজেদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। 


গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আজ সোমবার বাংলাদেশেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। বিভিন্ন মাদরাসা তাদের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রেখে এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে। কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকও এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 


বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জোরেশোরে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়, আজ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ক্লাস-পরীক্ষা হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকার পাশাপাশি সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সব অফিস বন্ধ রাখা হবে।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিসে কর্মবিরতি পালন করা হবে। সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবেশ ডেকেছে। আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে প্যারিস রোডে এ সমাবেশ হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।


দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়-কলেজে আজ ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আজ ক্লাস হচ্ছে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ ঘোষণা দেয়।


আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস)। রোববার রাতেই এ কর্মসূচির বিষয়ে নিশ্চিত করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্দীন। আজ দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সংহতি সমাবেশ করবে শিক্ষক সমিতি।


বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।  এক ফেসবুক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দলমত নির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারবো না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একত্বতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবে।

 
তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আগামীকাল আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্রজনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক। 


প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এনএইচ/