জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে বিলোপ করা সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম
প্রকাশ: ১১ মার্চ, ২০২৫, ০৯:৪৩ রাত
নিউজ ডেস্ক

জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে বিলোপ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এনসিপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমাদের নানা বিষয়ে নীতিগত বিরোধ হতে পারে, নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক সম্পর্ক এবং সংগ্রামের মিথস্ক্রিয়ায় এবং জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করা বা পরাস্ত করা সম্ভব নয়। ‘

তিনি বলেন, 'আমরা যেন ভুলে না যাই দেশের বিপদ এখনো কাটেনি। বাংলাদেশ বিরোধী শক্তিরা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদ এবং অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে অনৈক্য, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মাফিয়া ব্যবসায়িক শ্রেণি ও ষড়যন্ত্রকারীরা নানা বৈদেশিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে।' আমাদের মধ্যে নীতিগত বিরোধ হবে, কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের জায়গা আছে।’

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশের শাসন কাঠামোর পরিবর্তন চায়। আমরা শাসন কাঠামোর মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের সাংবিধানিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চাই। তাই আমরা একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে একটি নতুন রিপাবলিকের কথা বলছি। ‘

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন অভ্যুত্থানের মধ্যেই আমাদের তৈরি হয়েছে। আমরা সেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথাই বারবার বলছি। আমরা এর সঙ্গে বলছি ফ্যাসিবাদীদের যারা দোষী তাদের দ্রুত বিচার। আমাদের সবার প্রত্যাশা দৃশ্যমান বিচার আমরা দেখতে চাই। বিচারের মাধ্যমে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা করতে চাই। জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট রায় দিয়েছে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমি পাশাপাশি বলছি যে, বর্তমান সরকার জাতীয় কমিশনের মাধ্যমে তাদের যে জুলাই সনদ, সেই জুলাই সনদের দ্রুত কার্যক্রম আমরা দেখতে চাই এবং সে বিষয়ে আমরা সবাই সবার জায়গায থেকে সহযোগিতা করব। আমরা চাই সংবিধান সম্পর্কিত বিষয় ছাড়া বাকি আরও যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম রয়েছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেগুলর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে। ‘

জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের বিষয়ে বলছি যে সামনের নির্বাচন একইসঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান ও নতুন করে আমরা গণতন্ত্রে পথে উত্তরণ করতে পারব। এই সকল কিছুই দ্রুত সময়ের মধ্যে হওয়া সম্ভব বলেও মনে করছি। তবে, সরকার যে নির্ধারিত সময় দিয়েছে সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া সম্ভব।' কিন্তু নির্বাচনে আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। এককভাবে সরকারের পক্ষে এ কাজ হয়ত সম্ভব নাও হতে পারে, তাই রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি এবং অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।’

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলা, মিডিয়ার নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। তাই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।'’

তিনি বলেন, ‘জনপরিসরে নারী নিরাপত্তা, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনগত সামাজিক উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নিতে হবে এবং দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখতে পাচ্ছি কিছু গোষ্ঠী বাংলাদেশ ও ইসলাম ধর্মকে নেতিবাচকভাবে বিশ্ব উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। তাই সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান দেখাতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জায়গা থেকেও সে অবস্থান দেখাতে হবে।’

হাআমা/