১০ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম
প্রকাশ: ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৫:৪২ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

তাওহীদ আদনান ইয়াকুব

(সূরা ইউসুফ ৫৩-১১১, সূরা র’দ ১-৪৩ ও সূরা ইবরাহীম ১-৫২ পর্যন্ত)

কুরআনের প্রতিটি আয়াত মানবজীবনের জন্য দিকনির্দেশনা ও আলোর পথপ্রদর্শক। দশম তারাবির তেলাওয়াতে আমরা এমন কিছু বিষয় পড়ব, যা আমাদের ধৈর্য, সততা, কৃতজ্ঞতা এবং আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি বিশ্বাস রাখতে শেখায়।

এই অংশে ইউসুফ (আ.)-এর গল্পের চূড়ান্ত পরিণতি উঠে এসেছে, যেখানে তিনি দুর্দশার পর উচ্চপদ লাভ করেন এবং ক্ষমার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এরপর সূরা রাদ ও সূরা ইবরাহীম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর দেয়া নিদর্শনগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি, আর তাঁর পথে অবিচল থাকার মাধ্যমেই প্রকৃত সফলতা লাভ করা সম্ভব।

১. সূরা ইউসুফ (৫৩-১১১) ধৈর্য, ক্ষমা ও আল্লাহর পরিকল্পনার পরিপূর্ণতা

ইউসুফ (আ.)-এর কারামুক্তি ও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হওয়া (৫৩-৬৭)

  • রাজা তাঁর স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে মুগ্ধ হন এবং ইউসুফ (আ.)-কে মুক্তি দেন।
  • তাঁকে মিশরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা আল্লাহর পরিকল্পনারই অংশ ছিল।

দুর্ভিক্ষ ও ভাইদের মিশরে আগমন (৬৮-৯۸)

  • দুর্ভিক্ষের কারণে ইউসুফ (আ.)-এর ভাইরা শস্য সংগ্রহের জন্য মিশরে আসে।
  • তিনি তাদের চিনতে পারেন কিন্তু নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন না।
  • পরবর্তী ঘটনাবলিতে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন, তাদের ভুল ক্ষমা করে দেন এবং পরিবারকে মিশরে নিয়ে আসেন।

শিক্ষা ও উপসংহার (৯৯-১১১)

  • বাবা ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান এবং পরিবার পুনরায় একত্রিত হয়।
  • এই গল্প ধৈর্য, আত্মসংযম, ক্ষমা এবং আল্লাহর পরিকল্পনার অপরিহার্যতা বোঝায়।

২. সূরা রাদ (১-৪৩) তাওহীদ, নবুয়ত ও আখিরাতের শিক্ষা

আল্লাহর নিদর্শন ও কুরআনের সত্যতা (১-১৮)

  • প্রকৃতির বিভিন্ন নিদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর অস্তিত্ব ও শক্তিমত্তার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।
  • যারা সত্য গ্রহণ করে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে, আর যারা প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত।

ঈমানদারদের গুণাবলি ও সান্ত্বনা (১৯-৪৩)

  • যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, তারা ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ হয়।
  • রাসূল (ﷺ)-কে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৩. সূরা ইবরাহীম (১-৫২) নবীদের দাওয়াত ও কৃতজ্ঞতার শিক্ষা

আল্লাহর অনুগ্রহ ও কুফরীদের অবস্থা (১-২৩)

  • আল্লাহ মানুষকে সত্যের পথে ডাকেন, কিন্তু অনেকে তা প্রত্যাখ্যান করে।
  • শয়তান কিয়ামতের দিন কুফরীদের অসহায় অবস্থার কথা বলবে।

নবী ইবরাহীম (আ.)-এর দোয়া ও শিক্ষা (২৪-৫২)

  • তিনি তাঁর সন্তানদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেন।
  • নেককারদের জন্য জান্নাত, আর কাফিরদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • ধৈর্য ও সত্যবাদিতার পুরস্কার নিশ্চিত, যেমন ইউসুফ (আ.) পেয়েছিলেন।
  • আল্লাহর পরিকল্পনা সেরা, তিনি সবকিছুর সঠিক সময় নির্ধারণ করেন।
  • শয়তানের ধোঁকায় না পড়ে তাওহীদের ওপর অবিচল থাকতে হবে।
  • কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, কারণ আল্লাহর অনুগ্রহ সীমাহীন।

উপসংহার:

এই অংশে ধৈর্যের ফলাফল, ঈমানদারদের গুণাবলি, নবীদের দাওয়াত ও আখিরাতের শিক্ষা তুলে ধরা হয়েছে। এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম, এবং যারা ধৈর্য ও ঈমান নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা। কুরআন আমাদের জানিয়ে দেয় যে, সত্যের পথ কঠিন হলেও তার পরিণাম মঙ্গলময়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করার তাওফিক দিন—আমিন!

লেখক, ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,

মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

এনআরএন/