ভারতের জল-সন্ত্রাস অব্যাহত থাকলে ফের ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০১:০২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন
সি ই ও (স্কাইমোড ইন্টারন্যাশনাল

গত অগাস্ট-২০২৪ শে কুমিল্লা, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মানুষ এবং মানুষের জান-মালের যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। গত একশত বছরে এই অঞ্চলের মানুষ এমন ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়নি। বলা হয়, ভারতের জল-সন্ত্রাস এবারের এই ভয়াবহ বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ । 

একজন ভুক্তভুগী বানবাসী হিসেবে গত কয়েকদিন আমি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মুছাপুর ব্রিজ, মুছাপুর রেগুলেটর, সোনাগাজী থানার মুহুরী প্রজেক্ট এবং গতকাল পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর নিচকালিকাপুর বল্লামুখার বাঁধ পর্যবেক্ষণ করি । 

১৯৮৫ সালে মুহুরী নদীর বুকে নির্মিত মুহুরী প্রজেক্ট গেটের দুটি প্লেট খুলে গিয়েছে ভারতের জল-সন্ত্রাসের কবলে পড়ে। ব্যাপক স্রোতে অন্যান্য প্লেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাবাজার মুছাপুর ব্রীজের পশ্চিমাংশের প্রথম অংশ নিচে দেবে গেছে, ফলে নদীর দুই পাড়ের অধিবাসীরা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। ইতোমধ্যে পশ্চিম পাড় আস্তে আস্তে ভেঙে পাড়ের মাটি সরে যাচ্ছে । খুব শিগগির যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে বড়ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এই অঞ্চলবাসী ।

মুছাপুর রেগুলেটর পুরোপুরি তলিয়ে গেছে নদীর মোহনায়। আমি বলব, সয়েল টেস্ট যথার্থ হয়নি। এখানে অন্তত ৫০টি রেগুলেটের স্থাপন করার দরকার ছিল যেখানে মাত্র ২০টি রেগুলেটর বসানো হয়েছিল। প্রতি ২-৩ মিনিট পরপর ঝাও বন উদাও হয়ে যাচ্ছে নদীর মোহনায়। 

হাজার হাজার ব্লক পরে আছে রেগুলেটর মুখে। আপাতত যে ব্লকগুলো আছে, সরকার ঠিকাদারদের সাথে মিউচুয়াল করে পশ্চিম পাড়ে (ঝাও বনের পাড়) ফেলে দিলে পাড়টুকু আপাতত রক্ষা পেতো। কিন্তু ব্লকগুলো ঠিকাদাররা সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে ভাঙ্গন ঝুঁকি আরও বাড়ছে। 

মুছাপুর ব্রীজ এবং মুসাপুর রেগুলেটর (গেট) দ্রুত এর সংস্কার না করা হলে হাজার হাজার বাড়ি ঘর ও মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার হুমকিতে থাকবে । 

২০-০৯-২০২৪ ইং শুক্রবার আমি পরিদর্শন করি পরশুরাম নিজ কালিকাপুর বল্লামুখার বাঁধ। স্থানীয় বাসিন্দা জনাব ইসমাইল সাহেব একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি আমাকে বলেছেন যে, রোজ বুধবার নিজ কালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় বল্লামুখায় অবস্থিত বাঁধ সংলগ্ন বিএসএফ এর ক্যাম্প থেকে বুধবার মধ্যরাতে  আনুমানিক ৩ টার দিকে তিনটা ফাঁকা গুলি ছুড়ে তারা বাঁধের মুখ ছেড়ে দেয়। পরেরদিন পুরো পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী নোয়াখালী সহ তার আশপাশের এলাকা গুলো ভারতের জল-সন্ত্রাসে প্লাবিত হতে থাকে। 

আরও একটি তথ্য জানা যায়, ভারত নিচকালিকাপুর সীমান্তে বল্লামূখায় যে সীমানা নির্ধারণ করেছে তা আসলে সঠিক ছিলনা। স্থানীয় বাসিন্দা এবং কৃষক জনাব ইসমাইল হোসেন খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বিএসএফ-এর কাছ থেকে টাকা খেয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের স্থানীয় আমিন সার্ভে করার সময় ভারতের সীমানা বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে প্রায় ৫০ ফুট ভিতরে সীমানা নির্ধারণ করে। এতে করে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে যেটি চোখে পড়েছে, ভারতের নির্মিত বল্লামুখার বাঁধের প্রায় অর্ধেক পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তে। অথচ; বাঁধটি ভারত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে বিএসএফ দ্বারা। 

বিষয়টি বাংলাদেশ পানি অধিদপ্তর বরাবর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, অনতিবিলম্বে এই অন্যায্য ভাবে কেড়ে নেয়া বাংলাদেশের এই বর্ডারে বাকি ৫০ ফুট ভূমি যেন ভারত বুঝিয়ে দিয়ে মীমাংসা করে বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের সকল সীমান্তবর্তী এলাকায় জরিপ করে এমন অসঙ্গতি পাওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখার আহবান করছি। 

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হউক নায্যতার ভিত্তিতে। পাশাপাশি, ভারতের জল সন্ত্রাসের দরুণ বাংলাদেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতি পুশিয়ে দেয়ার দাবিতে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিপক্ষে সুষ্ঠ বিচারের দাবি এই অঞ্চলের জনগণের । ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বহমান নদীর বুক ছাড়িয়ে যে বাঁধ এবং ব্যারেজ নির্মাণ করে জল-সন্ত্রাস কায়েম করে চলেছে তার জবাব জাতিসংঘের কাছে এই অঞ্চলের মানুষ চায়।

এমএইচ/