ভারতকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সম্প্রীতি বার্তা
প্রকাশ:
০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:০২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
শুরু থেকে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে ভারতের সাথে ভালো ও কার্যকরি সম্পর্ক চাই। আমরা আশা করি, ভারতের নেতারা আমাদের ইচ্ছার প্রতিদান দেবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এক প্রবন্ধে এ কথা লিখেছেন। প্রবন্ধটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি লেখেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। আমার মনে হয়, ভারতীয় সরকার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও আমাদের দুই জাতির মধ্যে সাধারণ স্বার্থ এবং সহযোগিতামূলক সম্ভাবনার কথা নিজেদের মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং আমি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো গড়ে তোলার জন্য এবং উত্তেজনা ও ভুল বোঝাবুঝির ক্ষেত্রগুলোকে বাস্তবসম্মতভাবে মোকাবেলা করার জন্য যথাযথ গুরুত্বের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। ডিসেম্বরে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রির ঢাকা সফর ছিল সঠিক দিকে সম্পর্ক চালিত করার একটি পদক্ষেপ। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ইতিহাস বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা উভয় দেশের জনগণের জন্য উপকারী হবে। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকে শুরু করে ভারত উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে ভারত বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া দেশটি এখন অর্থনীতিতে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। বাংলাদেশেরও উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ক্ষেত্র রয়েছে। আমাদের দেশ পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের অবদান অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। বিশ্বজুড়ে হটস্পটগুলিতে প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করে। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস কর্তৃক বাংলাদেশে বিকশিত ক্ষুদ্রঋণ মডেলগুলো বিশ্বব্যাপী শিল্পের সৃষ্টি এবং বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে এবং তা ভারতে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রতি আচরণ নিয়ে ভারতে প্রচুর শোরগোল তৈরি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মধ্যবর্তী সময়ে যে শূন্যতা বিরাজ করছিল, সেই সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ফলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। এর ফলে পূর্ববর্তী সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ব্যক্তিরা, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম, এমনকি হিন্দুরাও ছিলেন; তাদের ওপর প্রভাব পড়ে। ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। দেশজুড়ে নাগরিকরাও সাহসিকতার সাথে এবং সফলভাবে হিন্দু পরিবার এবং মন্দিরগুলোকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, ভারতীয় মিডিয়া এবং সাইবারস্পেস অত্যন্ত অতিরঞ্জিত এবংঅধিকাংশই সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ প্রকাশ এবং পুনরাবৃত্তি করে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের হিন্দুরা সমান অধিকারসহ সম-নাগরিক। ভয়েস অফ আমেরিকা পরিচালিত একটি স্বাধীন জরিপে দেখা গেছে- আমাদের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের উন্নতি হয়েছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল হতে চাই। আমরা ভারতীয় সাংবাদিকদের আহ্বান জানাই; তারা যেন কোনো বাধা ছাড়াই সত্য রিপোর্ট করে। ভারতীয় জনগণ তাদের নিরপেক্ষ তদন্ত থেকে সত্য জানতে পারুক। অন্তর্বর্তী সরকার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিলুপ্ত আঞ্চলিক সংগঠন সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ভারতের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক নয়। আমরা বিশ্বাস করি না যে, এই প্রচেষ্টায় ভারতের ভয় পাওয়ার কিছু আছে। আমরা জানি, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু হাজার মাইল যাত্রা শুরু হয় একটি পদক্ষেপ দিয়ে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের নেতারা কি পরবর্তী বিশ্ব সম্মেলনে একসাথে ছবি তোলার জন্য পোজ দিতে পারবেন না— এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দিতে? চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা কিছু আশাব্যঞ্জক সাফল্য দেখতে পেয়েছি। যেমন- সাম্প্রতিক জেলে বিনিময় এবং একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর। যে চুক্তির ফলে বাংলাদেশকে নেপাল থেকে সামান্য পরিমাণে জলবিদ্যুৎ শক্তি পেতে সাহায্য করবে। আসুন, আমরা এই ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোর উপর ভিত্তি করে এমন একটি অংশীদারত্ব গড়ে তুলি- যা আমাদের উভয় দেশের জনগণ, অঞ্চল এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য উপকারী। এ যাত্রায় সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করা একটি ভালো শুরু' হবে। ইতিবাচক এবং বাস্তবসম্মত সম্পৃক্ততা থেকে আমাদের জনগণের অনেক কিছু অর্জন করার আছে। তাই এই সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে। এমএইচ/ |