বাংলাদেশ থেকে আল-আজহার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন যেভাবে
প্রকাশ:
২৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৩৪ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
শোয়াইব আস-সফাদী মিশরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-আজহার ইউনিভার্সিটি মুসলিম বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দুটি পদ্ধতি রয়েছে—স্কলারশিপের মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত খরচে। নিচে উভয় প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো। স্কলারশিপের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া স্কলারশিপের মাধ্যমে আল-আজহার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া তুলনামূলক সহজ। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় খরচ সরকার বহন করে। সাধারণত ১০-২০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এই সুবিধা পেয়ে থাকেন। স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতা প্রায় ৭,০০০ টাকা (প্রায় ২,৫০০ মিশরীয় পাউন্ড)। তবে অধিকাংশ স্কলারশিপ ইন্দোনেশিয়া ও নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকে, কারণ এই দেশগুলোর সাথে মিশরের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো। ব্যক্তিগত খরচে ভর্তি প্রক্রিয়া যারা নিজস্ব খরচে আল-আজহারে ভর্তি হতে চান, তাদের সাধারণত মিশরে অবস্থানরত দালাল বা বাংলাদেশে মিশর সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিদের সাহায্য নিতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনারেবল ভিসা কিংবা স্টিকার ভিসার মাধ্যমে আসেন। উভয় ক্ষেত্রেই আলিম বা সমমানের সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। খরচ: ব্যক্তিগত খরচে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের সাধারণত ১,১০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এই খরচ দালালদের উপর নির্ভরশীল। যারা ব্যক্তিগত খরচে যান তাদেরকে মিশরের অবস্থানকালীন প্রতি মাসে প্রায় দশ হাজার টাকা বাসা ভাড়া খাওয়া ইত্যাদির পেছনে ব্যয় করতে হয়। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিশরের দূতাবাস থেকে সত্যায়ন করাতে হয়। পড়াশোনার ধাপ ও পরীক্ষার প্রক্রিয়া মিশরে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের প্রথমে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। এরপর تحديد المستوى (লেভেল যাচাই পরীক্ষা) দিতে হয়, যা শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী স্তর নির্ধারণ করে। লেভেল যাচাই পরীক্ষার ছয়টি স্তর:
পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলে শিক্ষার্থীরা إفادة النجاح (সাফল্যের সনদ) পায়। এরপর তাদের দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়—
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে الاختبار لحداثة المؤهل للجامعة নামে একটি পরীক্ষা চালু হয়েছে, যা পাস করলে কওমি শিক্ষার্থীরাও মাহাদ (ইনস্টিটিউট) এ না পড়ে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারে। বর্তমানে এই পরীক্ষার ফি ১৫০ ডলার। তবে এই পরীক্ষাটি আগে ফ্রি ছিল। মাহাদ পর্যায় ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর যারা মাহাদ পর্যায়ে পড়ে, তাদের জন্য المسابقة الإعدادية (প্রাথমিক প্রতিযোগিতা পরীক্ষা) অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি স্তর রয়েছে—
এই স্তরগুলো পার করার পর শিক্ষার্থীরা الثانوية (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যায়ে চলে যায়। এরপর المسابقة الثانوية (মাধ্যমিক প্রতিযোগিতা পরীক্ষা) পাস করে তারা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা সাধারণত এক বছরে মাহাদ শেষ করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশে আল-আজহার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আল-আজহারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দারুল আরকাম মাদ্রাসা (সানাউল্লাহ আজহারীর পরিচালনায়) রয়েছে। তবে এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া আলিয়া মাদ্রাসার মতোই। কওমি ও আলিয়া শিক্ষার্থীদের পার্থক্য আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মুয়াদালা (সমমান সনদ) থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারে না। এর কারণ হলো— - কওমি শিক্ষার্থীরা ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টে উচ্চ স্তরে উত্তীর্ণ হয়, ফলে তাদের মাত্র দুই মাসের প্রস্তুতিতেই ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স শেষ হয়ে যায়। - অন্যদিকে, আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সাধারণত প্রাথমিক স্তরে (المبتدئ الأول أو الثاني) উত্তীর্ণ হয়, যার কারণে তাদের ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স শেষ করতে এক বছর লেগে যায়। আলিয়া ও কওমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মাথায় রাখা জরুরি। মিশরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলে, সঠিক তথ্য ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। হাআমা/ |