১৫  জাপানি নওমুসলিমের জীবনকথা
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:৩৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ ইরফান সিদ্দিকী

কিছুদিন থেকে ভাবনাটি ঘুরপাক খাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। জাপানি যেসব নাগরিক নিজ ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, তাদের দিনকাল কেমন কাটছে। তাদের ইসলাম পরবর্তী জীবনে কেমন উন্নতি ঘটেছে। তারা নিজেদের নতুন ধর্মানুশাসিত জীবনে, পেশাগত সেক্টরে কেমন সেবা প্রদান করছেন। তাদের কর্মতৎপরতার ফলে জাপানে ইসলামের কেমন প্রচার-প্রসার হচ্ছে। তারা কি জাপানের সামাজিক জীবনে ইসলামের পক্ষে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছেন? অনুসন্ধানের পর প্রায় ১৫ জন জাপানি নওমুসলিমের পরিচয় সামনে আসলো। ইসলামের জন্য তাদের অবদান পুরো বিশ্বের মুসলমানদের জন্য গর্বের বিষয় হতে পারে। জাপানি জীবন ও সংস্কৃতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এ লেখায় সংক্ষেপে তাদের পরিচয় ও কার্যক্রম পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। 


এক. কিনজি গোডা। জাপানের প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করছেন। শাস্তির দূত হিসেবে ভূমিকা পালন করে চলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ইসলামের  শ্বাশত শান্তির বার্তা ও ইসলামি বিশ্বের সুখ-দুঃখের বিষয়গুলো বিশ্বকে জানাচ্ছেন। 
দুই. নুর মুহাম্মদ। জাপানি নাম ছিল নুরিউ ইতো। সুনামধন্য ইসলামিক স্কলার। জাপানি ভাষায় কুরআনের তরজমা করেছেন। জাপানে ইসলামি মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি কিতাব রচনা করেছেন। তার বই জাপানি জনগণের মাঝে ইসলামের শিক্ষা-সভ্যতা ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। 
তিন.  ইউশি ইউকি। অভিজাত একজন সফল ব্যবসায়ী। জনকল্যাণমূলক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। ইসলাম গ্রহণের পর পুরো জীবনকে জানসেবামূলক কাজের জন্য নিবেদন করেছেন। বিশেষ করে জাপানে অবস্থানরত নানা সমস্যায় জর্জরিত মুসলমানদের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রজেক্ট-পরিকল্পনা শুরু করেছেন। 


চার. রাইহান মাতোসুর। জাপানের টেকনোলজি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তি। ইসলাম গ্রহণের পর নিজের সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসলামের হারাম-হালাল নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করে, তিনি এখন ইসলামি ব্যবসা জগতের মডেলে পরিণত হয়েছেন। 
পাঁচ. ইয়াসির নাকামুরা। সুপরিচিত জাপানি স্থপতি। ইসলামকেন্দ্রীক গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছেন। তার ডিজাইনকৃত মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামিক সেন্টার জাপানে বেশ প্রসিদ্ধ। ইসলামি স্থাপত্য শিল্পের সাথে জাপানি স্থাপত্য শিল্পের মিশ্রণ ঘটাতে তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।


ছয়. আয়েশা কুবায়াশি। জাপানের প্রথম মুসলিম নারী সাংবাদিক। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি জাপানি নারীদের পর্দার বিধানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তিনি ইতোমধ্যে অনেকগুলি সেমিনারের আয়োজন করেছেন। 
সাত. উসমান ফুকুদা। জাপানের একজন সফল ব্যবসায়ী। জাপানে তিনি হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রি চালু করেছেন। তিনিই সর্বপ্রথম জাপানে হালাল রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন। হালাল খাবার জাপানিদের কাছে জনপ্রিয় কর তুলতে বিভিন্ন প্রজেক্ট চালু করেছেন। 
আট. হুসাইন তাকাহাশি। জাপানি এ নবমুসলিম ইসলামি শিক্ষার একজন প্রসিদ্ধ শিক্ষক। কুরআন-হাদিসের জ্ঞান শিক্ষাদানের জন্য তিনি বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করেন। বিশেষত যুবক-যুবতীদের মাঝে ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি ব্যাপক কাজ করছেন। 


নয়. ফাতেমা ইয়ামামাতো। জাপানের প্রসিদ্ধ পাবলিক স্পিকার। ইসলামের নারী অধিকারের মর্যাদাকর বিষয়টি জাপানি সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি কাজ করছেন। জাপানি মুসলিম নারীদের নেতৃত্ব তৈরিতে তিনি বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। 
দশ. আব্দুল্লাহ কিকোচি। জাপানি অধ্যাপক। তার গবেষণার বিষয় ইসলামি দর্শন ও সভ্যতা। তার গবেষণালব্ধ লেখা ও বক্তৃতার প্রতি জাপানি যুবকদের আগ্রহ আছে। যুবকদের মাঝে ইসলামের প্রচারে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। 


এগারো. আদম ওডাকা। জাপানের প্রসিদ্ধ মোটিভেশনাল স্পিকার। মোটিভেশনাল কোচ হিসেবেও তিনি সমাদৃত। জাপানি ভাষায় সহজ পদ্ধতিতে ইসলামের সুমহান বার্তা প্রচার করেন। সর্বস্তরে জাপানি নাগরিকদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা তার প্রধান লক্ষ্য। 
বারো. সামি নাগানো। আর্ট ও সংস্কৃতি জগতে ইসলামের শিষ্টাচার ও বিধান প্রতিপালনের ধারা তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি হস্তলিপি ও ক্যালিগ্রাফি শিল্পে অভিজ্ঞ। তার ক্যারিকেচার ও ক্যালিগ্রাফি জাপানসহ আন্তর্জাতিক মহলে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। 


 তেরো. আমেনা মোরে। মুসলিম নারীদের পোশাকের ইসলামবান্ধব ফ্যাশন ডিজাইনের জন্য তিনি সুপরিচিত। হিজাব ও জাপানের স্থানীয় পোশাকের সমন্বয়ে তিনি ব্যতিক্রমী পোশাকের ডিজাইন চালু করেছেন। মুসলিম-অমুসলিম সর্বস্তরের নারীরা তার ফ্যাশন ডিজাইন পসন্দ করে থাকেন। 
 চৌদ্দ. ইউসুফ শিজুকা। প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক ও অনুবাদক। ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক গ্রন্থ তিনি জাপানি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। জাপানি নাগরিকদের মাঝে ইসলামি শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 
পনেরো. জয়নব তাকায়া। জাপানের প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎসক। হালাল মেডিসিন গবেষণায় সফল হয়ে তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন। ইসলামিক মেডিকেল এসোসিয়েশন অফ জাপানের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। 


উপরোক্ত ১৫ জন জাপানি নবমুসলিমের আলোচনা থেকে প্রমাণ হল, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ  ধর্ম। যেকোনো ভাষা, সমাজ, দেশের, যেকোনো মানব সন্তানকে ইসলাম সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে উত্তীর্ণ করতে পারে। জাপানি মুসলমানদের সফলতা শুধু তাদের ঈমান ও প্রচেষ্টার ফলাফল নয়, বরং তাদের জীবন ও সফলতা বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রতিবিম্বের কাজ করছে। তারা তাদের কর্ম ও অবদান দ্বারা প্রমাণ করেছেন, সফলতার জন্য ধর্ম ও পেশার মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।   

ডেইলি জঙ্গ-এ প্রকাশিত জাপান প্রবাসী  প্রখ্যাত পাকিস্তানি সাংবাদিকের কলাম  থেকে অনুবাদ : আমিরুল ইসলাম লুকমান
হুআ/