মাদরাসার পাশে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য মক্তব থাকা প্রয়োজন: মুফতি সালাহ উদ্দিন
প্রকাশ:
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:৩০ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
রাজধানীর অভিজাত এলাকা দিলু রোডে গড়ে উঠেছে নান্দনিক ইলমি বাগান। গড়ে উঠেছে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দিলুরোড মাদরাসা। মাদরাসায় আছে পড়াশোনার মনোরম পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের জন্য আমল-আখলাক ও মেধা বিকাশের অবারিত সুযোগ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে দিলুরোড মাদরাসার সুনাম-সুখ্যাতি। মাদরাসায় বেড়েছে ছাত্রের হার। বর্তমানে অধ্যয়নরত ছাত্রের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। বেড়েছে দেশের শীর্ষ আলেমদের আসা-যাওয়া। নববী এই বাগানের মালি মুফতি সালাহ উদ্দিন। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দিলু রোড মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। এক টুকরো জমি আর ভাঙা টিনসেড থেকে আজকের বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ-তারই মেধা, মেহনত ও পরিশ্রমের ফসল। তার সঙ্গে আছে প্রতিশ্রুতিশীল একঝাঁক মেধাবী শিক্ষক। সম্প্রতি আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। কওমি মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন, স্কুলমুখী শিশুদের দ্বীন শেখা ইত্যাদি বিষয়ে কথা হয় মুফতি সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের চীফ রিপোর্টার হাসান আল মাহমুদ আওয়ার ইসলাম: কিছুদিনের মধ্যেই সারাদেশের স্কুল, কিন্ডার গার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি যুদ্ধ শুরু হবে। স্কুলমুখী শিশুদের দ্বীন শেখা নিয়ে আপনার ভাবনা কী? মুফতি সালাহ উদ্দিন : প্রতিটি মুসলিমের উপর দ্বীনি ইলম শেখা ফরজ। বাচ্চাদের জন্য যে পরিমান কুরআন শেখা দরকার, জরুরি মাসয়ালা ইত্যাদি ফরজে আইন শিক্ষার জন্য প্রতিটি মুসলিমের উপর অপরিহার্য হলো উপযোগী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। একসময় মক্তব শিক্ষাব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের মুসলিম শিশুরা বিশুদ্ধ কুরআন শেখার পাশাপাশি জরুরি দ্বীনি ইলম অর্জন করতো। এখনো গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহরাঞ্চলের কোথাও কোথাও সে ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে। কিন্তু ব্যাপকভাবে তেমন দেখি না। আমরা আলহামদুলিল্লাহ সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকার নবাবগঞ্জে আমাদের যে শাখা রয়েছে, তাতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ইদানীং আফটার স্কুলসহ যারা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য যে ব্যবস্থাপনা করেছে তাদের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে মনে করছি। এমন উদ্যোগ আরও হওয়া দরকার। এজন্য, আমি মনে করি, প্রতিটি জামিয়া-মাদরাসার পাশে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য মক্তব থাকা খুবই প্রয়োজন। আওয়ার ইসলাম: মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মাদরাসার আবাসিক পরিবেশ নিয়ে কিছু বলুন। মুফতি সালাহ উদ্দিন: মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে আমাদের বোর্ড রয়েছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষগণ দেখবেন বিষয়টা। ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করাটা উপযোগী মনে করছি না। তবে, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকসহ কিছু বোর্ডের কার্যক্রম বেশ ভালো। আরও কিছু উদ্যোগ নেয়ার, ব্যাপক সংস্কার করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। শিক্ষক প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমি মনে করি, শিক্ষকতা করবে, আর এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নিবে না, তা উচিত মনে করছি না। বাচ্চাদের যারা শিক্ষক, তাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চালু আছে। তবে, কিতাব বিভাগের শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন অনেক। কোন্ কিতাব কীভাবে পড়ানো হবে ইত্যাদি বিষয়ে বোর্ড থেকে বা মাদরাসার উদ্যোগে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষকদের দরস পদ্ধতি আরো পরিশীলিত ও গুছানো হবে বলে বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, শিক্ষক হবে না শুধু শিশুদের বিশেষজ্ঞ হবে এমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। মাদরাসার পরিবেশ বর্তমানে যেভাবে আছে তাকে স্বাস্থ্যবান্ধব করা প্রয়োজন। বিশেষভাবে শিশুদের জন্য বিনোদন হয় এমন কিছু রাখা দরকার বলে মনে করি। আওয়ার ইসলাম: ফ্রেব্রুয়ারিতে শুরু হচ্ছে- বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। বরাবরই আপনার প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ভালো হচ্ছে। এবারের প্রস্তুতি কেমন? মুফতি সালাহ উদ্দিন: আমাদের মূল টার্গেট পরীক্ষা কেন্দ্রীক না। বছরের শুরু থেকেই আমাদের মেহনত থাকে কিতাবি ইস্তেদাদের প্রতি। পাশাপাশি পরীক্ষায় কিভাবে ভালো রেজাল্ট করা যায়, সে বিষয়েও আমাদের মেহনত থাকে, শ্রম থাকে। বছরের শুরু থেকেই আমাদের তারতিব থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও আশা করছি ভালো ফলাফল লাভ করবে আমাদের শিক্ষার্থীরা। আওয়ার ইসলাম: দিলু রোড মাদরাসার এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার পেছনে কাদের অবদানকে বিশেষভাবে স্মরণ করবেন? মুফতি সালাহ উদ্দিন: আমাদের এই উন্নয়নের পিছনে রয়েছে আমাদের মধ্যে থাকা সমন্বিত প্রয়াস। আমাদের এখানে ছাত্র এবং উস্তাদদের মাঝে রয়েছে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক। সে হিসাবে ছাত্ররা যেমন মেহনতি, তেমনি মেহনতি উস্তাদগণ। এই আন্তরিকার ফসলে রেজাল্টে আমাদের মাদরাসার উন্নয়ন ঘটে। একটি মাদরাসার উন্নয়নের জন্য ইলম, আমল ও অর্থ এই তিন জিনিসের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকে। কিছু দ্বীনি ভাই আর্থিকভাবে পাশে থাকার কারণে, তাদেরও অবদান রয়েছে। সর্বাঙ্গীণভাবে এখানের শিক্ষকদের অবদানকে সর্বপ্রথমে রাখতে চাই। পাশাপাশি বড় বড় ওলামায়ে কেরামের আগমন ও পরামর্শদানও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। হাআমা/ |