জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০৮:৫৮ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

সদ্য এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে চলে গেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ-মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস রহ.) এর সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী (রহ.)। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে দীর্ঘ ছয় দশকের বর্ণাঢ্য অতীতের পাশাপাশি তিনি ছিলেন বিদগ্ধ আলেম, মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদিস। তার মৃত্যুতে আলেমসমাজ ও রাজনীতির অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) তাঁর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়। আসুন জেনে নিই কে এই মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়:

মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী ১৯৫৪ সালে মৌলভীবাজার জেলার রায়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক রহ.-এর বড় জামাতা। তার পিতা শায়েখ হাবিবুর রহমান রায়পুরী রহ. ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক শাইখুল ইসলাম সাইয়েদ হোসেন আহমদ মাদানী রহ.-এর ঘনিষ্ঠ শিষ্য ও খলিফা।

প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা:

সিলেটের গলমুকাপন মাদরাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। তারপর চট্টগ্রামে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন।

উচ্চ শিক্ষা:

১৯৬৭ সালে জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরে ভর্তি হয়ে ১৯৭১ সালে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ময়মনসিংহের বালিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মাত্র ৫ মাসে পবিত্র কুরআন হিফজ করেন।

কর্মজীবন:

কর্মজীবনে তিনি জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরে শিক্ষকতা শুরু করেন। তারপর ১৯৭৪ সালে স্বীয় উস্তাদ আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ.)-এর নির্দেশনায় নেত্রকোনা জেলার কলমাসিন্দুর টাইটেল মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োজিত হন। ১৯৭৬ সালে শরীয়তপুর জেলার শরীয়তিয়া আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস পদে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে সিলেট নগরীর মদীনাতুল উলুম দারুসসালাম মাদরাসায় চলে আসেন। ৫ বছর হাদিসের খেদমত আঞ্জাম দেন।

এছাড়া জামিয়া মাদানিয়া খেলাফত বিল্ডিং সিলেট, জামিয়া হোসাইনিয়া দক্ষিণকাছ সিলেট, জামিয়া ইসলামিয়া কওমিয়া মুন্সীবাজার মৌলভীবাজার সিলেটের শায়খুল হাদিস ছিলেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি রাজধানীর ঢাকা খিলগাঁওয়ে অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম নতুনবাগের শায়খুল হাদিস ও সিলেট কারাগার জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর স্বত্বাধীন হুসাইনিয়া কুতুবখানা একসময় সিলেটের উলামায়ে কেরামের মারকাজ ছিল।

রাজনৈতিক জীবন:

অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে ছয় দশকের বর্ণাঢ্য জীবন ছিল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই জমিয়তের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলা ও মহানগরীর সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেন। পরবর্তীতে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ জমিয়তের কাউন্সিলে তিনি জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, সংসদের চীফ হুইপ ও এমপি আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস (রহ.)-এর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন। সিলেটের আন্দোলন-সংগ্রামে মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর অনন্য অবদান রয়েছে।

শোকপ্রকাশ:

শায়খুল হাদিস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরও শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই), খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

মৃত্যু ও দাফন:

মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী ২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের রায়পুরে নিজ বাড়ী সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তার পিতা মাওলানা হাবিবুর রহমান রায়পুরী রহ.-এর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি চার ছেলে ও চার মেয়ে রেখে গেছেন।

হাআমা/