মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক
প্রকাশ:
২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:২৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা হাফেজ মনসুরুল হাসান রায়পুরী ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ তালহা ইসলাম গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ২২ নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টায় নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করেন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। তাঁর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জমিয়তের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী ও মহাসচিব মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, মাওলানা রশিদ বিন ওয়াক্কাস, বাংলাদেশ কওমি পরিষদের সভাপতি ও গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী। বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোকবার্তায় বলেন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও দ্বীনি আলেম মরহুম আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। একজন প্রসিদ্ধ ইসলামিক পন্ডিত হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তিনি ছিলেন সব সময় ন্যায় ও ইসসাফের পক্ষে সোচ্চার। আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে দেশ একজন গুণী আলেমকে হারালো। এ শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবার নয়। জাতীয় নেতৃবৃন্দ মরহুম রায়পুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই জমিয়তের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলা ও মহানগরীর সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেন। পরবর্তীতে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ জমিয়তের কাউন্সিলে তিনি জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, সংসদের চিফ হুইপ ও এমপি আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস রহ. এর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন। পারিবারিক জীবনে ১৯৭৫ সালে তিনি বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মাওলানা উবায়দুল হক রহ. এর বড় মেয়ের সাথে পরিনয় সূত্রে আবদ্ধ হন। সিলেটের আন্দোলন-,সংগ্রাম কিংবা শিক্ষা-সংস্কৃতিতে মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর অনন্য অবদান রয়েছে। তিনি ১৯৫৪ সালে মৌলভীবাজার জেলার রায়পুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর খলিফা হযরত মাওলানা হাবিবুর রহমান রায়পুরী (রহ.)। তিনি সিলেটের গলমুকাপন মাদরাসা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। ১৯৬৭ সালে জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরে ভর্তি হয়ে ১৯৭১ সালে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ময়মনসিংহের বালিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মাত্র ৫ মাসে পবিত্র কুরআন শরীফ হিফজ করেন। কর্মজীবনে তিনি জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে স্বীয় উস্তাদ আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী রহ. এর নির্দেশনায় নেত্রকোণা জেলার কলমাসিন্দুর টাইটেল মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োজিত হন।১৯৭৬ সালে শরীয়তপুর জেলার শরীয়তিয়া আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস পদে নিয়োজিত হন। ১৯৭৮ সালে সিলেট নগরীর মদীনাতুল উলুম দারুসসালাম মাদরাসায় চলে আসেন। ৫ বছর হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দেন। এছাড়াও জামিয়া মাদানিয়া খেলাফত বিল্ডিং সিলেট, জামিয়া হোসাইনিয়া দক্ষিণকাছ সিলেট, জামিয়া ইসলামিয়া কওমিয়া মুন্সীবাজার মৌলভীবাজার সিলেট এর শায়খুল হাদীস ছিলেন। ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাজধানীর ঢাকা খিলগাঁওয়ে অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম নতুনবাগের শায়খুল হাদীস পদে নিয়োজিত ছিলেন। আল্লাহপাক তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন। কেএল/ |