সিরাজগঞ্জে কাঁচা বাজারে আগুন, বিপাকে ক্রেতারা
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০১:১২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাজারে দামের উত্তাপে ক্রেতা সাধারণ পুড়ে ছাড়খার হচ্ছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই নিত্যপণ্য কাঁচাবাজার, মাছ, মাংস এমন কি মসলাজাত পণ্যের দামে হাসফাস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাজারে বেড়েই চলছে অস্থিরতা। সরবরাহে খুব একটা ঘাটতি না থাকলেও বেশিরভাগ পণ্যের দাম উধ্বমুখী। সপ্তাহের ব্যবধানেই দাম বেড়েই যাচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের। নিত্য পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে অধিকাংশ পরিবারে জুটছে না একবেলা আমিষ।

সরেজমিনে শহরের পাইকারির বড় বাজার, বানিয়া পট্টি বাজার, স্টেশন বাজার, কালিবাড়ি বাজার, বাহির গোলা বাজার, কাঠেরপুল বাজার, সমাজ কল্যাণ মোড় বাজার ও কাজিপুর রাস্তার মোড় বাজার ঘুরে দেখা যায়- গত সপ্তাহের ব্যবধানে এই সপ্তাহের প্রথম থেকেই সবজির দাম বেশি। বর্তমানে বাজার মূল্য বেশি হওয়ার কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নাগালের বাইরে সকল সবজি। সবজির বাজার আগুন হওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে নিয়মিত বাজার করতে। সবজির বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের  দাম নিয়ন্ত্রণে না আসলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষসহ সকলের।

অন্যদিকে গরিবের প্রোটিন হিসেবে পরিচিত ডিমের বাজারেও যেন আগুন লেগেছে। বর্তমানে ডিমের বাজার মূল্য ৪৮-৫০ টাকা। শাক-সবজি গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। ডিম থেকে শুরু করে শীতকালীন শাক সবজিও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে  নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের।

অপরদিকে গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের দাম একটু বেশি। শহরের বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫, পিয়াজ ১২০-১৪০, মরিচ ১০০-১৪০, আদা ১২০-১৪০, রসুন ২৬০-২৮০, বেগুন ১০০-১৫০, ফুলকপি ৮০-১০০, বাধা কপি ৮০-১০০, শশা ১০০-১২০, লাউ প্রতিপিস ১০০-১২০, মিষ্টিকুমড়া ৮০-১০০, পটোল ৫০-৮০, ঢেরশ ৬০-৮০, ঝিঙ্গে ৭০-৯০। সেই সাথে শীতকালীন শাক সবজির দাম ও অনেক বেশি। শীতের সবজি টমেটো প্রতিকেজি ২৫০-৩০০ টাকা, গাজর ২০০-২৫০, ধনেপাতা ৪০০-৪৫০, শিম ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বড় বাজারে সবজি ক্রয় করতে আসা শাহিন নামে একজন ক্রেতার জানান, মাসে যে টাকা বেতন পাই সেই টাকা দিয়েও মাসের সবজি কেনা হয় না। তাহলে মাছ, মাংসসহ অন্যান্য সামগ্রী কিনবো কেমন করে। এইভাবে যদি নিত্যপণ্যের দাম বাড়তেই থাকে, তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

অপর দিকে সবজি বিক্রেতা সুজন বলেন, আমাদের কেনা দিয়ে বেচা। পণ্য কম দামে কিনলে কম দামে বিক্রি করি, আর বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি। এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।

স্বস্তি নেই মুদি দোকানেও। তেল থেকে শুরু করে আটা পর্যন্ত যেতে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। শহরের বিভিন্ন বড় থেকে মাঝারি মুদি দোকান ঘুরে দেখা যায়, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৮৬-১৯০, সয়াবিনের প্রতি লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫, চিনি ১৩০-১৪০, মাশেরডাল ১৮০-২০০, মুগের ডাল ১৮০-২০০, জিরা ৬৫০-৭০০, বিভিন্ন মসলার দাম প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ৩৮০০-৪০০০, হলুদের গুড়া ৪০০-৪৫০, মরিচের গুড়া ৪৫০-৫০০, আটা প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শহরের সাগরিকা স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, তেল থেকে শুরু করে আটা পর্যন্ত সকল নিত্যপণ্যের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে বেশি। কেন পণ্যের দাম বেশি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কেনা দিয়ে বিক্রি করা। আমাদের এখানে সকল পণ্যের যে দাম শহরের সকল দোকানে একই দাম। পণ্যের দাম বেশি নিয়ে আমরা আমাদের এত দিনের সুনাম নষ্ট করতে পারি না।

বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক জিন্নাহ সরদারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বাজারে পাঙ্গাশ মাছের কেজি ২০০-২৫০, ছোট আকারের রুই ২৮০-৩০০, মাঝারি আকারের রুই কেজি ৩২০-৪০০ এবং বড় আকারের রুই ৪৫০-৫০০ টাকা দরে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। কাতল ৪৫০-৫০০ ও সরপুঁটি ২৫০-৩০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ ছোট আকৃতির ৭০০-৭৫০, বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১০০০, নদীর টেংরা, বোয়াল (ছোট), বাইম, চেলা ইত্যাদি মিশাল (মিশ্র) মাছ প্রতিকেজি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৯০, সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০, দেশি মুরগি ৪৮০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস প্রতিকেজি ৭০০-৭৫০ এবং খাসির মাংস এক হাজার ৯০০-৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বড় বাজারে মাছ কিনতে আসা একাধিক ক্রেতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, বর্তমান বাজারে মাছের দাম একটু বেশি। মাছ কিনতেই আমাদের টাকা শেষ হয়ে যায় অন্য বাজার করব কি করে। মাছ কিনতে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, বর্তমান বাজারে মাছের চেয়ে সবজির দাম বেশি। তাই মাছ কিনেছি সবজি না কিনে। যেই সবজিগুলো বিশেষ প্রয়োজন সেইগুলো ছাড়া অন্য কোন সবজি কিনি নাই।

আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, মাছের যে দাম সাধ্যের মধ্যে মাছ না পেয়ে মুরগির দাম চড়া দেখে ডিম কিনতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় কেউ কিনেছেন আবার কেউ খালি হাতে ফিরছেন। মাছ-গোশত, সবজি সবকিছুরই দাম তাদের ক্রয় সীমার বাইরে। বেশিরভাগ সবজির দাম শতকের উপরে, আবার কোনটি শতকের ঘর ছুঁইছুঁই। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাছ মাংস ও সবজি কিনতে প্রতিনিয়তই হিমশিম খাতে হচ্ছে। এই ভাবে চলতে থাকলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে এমন ধারণা করছেন বাজার করতে আসা একাধিক ক্রেতা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ যদি বেশি মূল্যে যে কোন পণ্য বিক্রি করে অথবা কেউ যদি অধিক লাভের আশায় কোন পণ্য মজুদ করে- তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।