মাদানীনগর ইসলাহী জোড়ে কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের আহমদ-এর বয়ান
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৪, ০৯:৪৩ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মাদানীনগরে দুই দিনব্যাপী আত্মশুদ্ধি চর্চার মাহফিল ‘ইসলাহী জোড়’ শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার। আজ শনিবার ছিল শেষ দিন। দেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ আলেমে দ্বীন শায়খ ইদরীস সন্দ্বীপী রহ. এর প্রবর্তন করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁরই বড় ছেলে মাওলানা ফয়জুল্লাহ সন্দ্বীপী এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মাদানীনগর মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর নভম্বরের এই সময় দেশের শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজারো মানুষ মিলিত হয় এই মজমায়। তারা এখান থেকে দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও আত্মিক পরিশুদ্ধির পাথেয় লাভ করে। সেজন্য সুশৃঙ্খলভাবে তাদেরকে আমলে জুড়িয়ে রাখা হয়।

এদিকে জামিয়ার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই ইসলাহী জোড়ে ইতোমধ্যে বয়ান করেছেন মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান (পাকিস্তান), মুফতি ওমর ফারুক সন্ধিপী, মুফতি আবু সাঈদ (ফরিদাবাদ মাদরাসা), মুফতি দিলোয়ার হুসাইন (আকবর কমপ্লেক্স), মাওলানা সাজিদুর রহমান (দারুল আরকাম বি-বাড়িয়া), মাওলানা জামালুদ্দীন মাহমুদ সন্ধিপী (মহাসচিব, তালিমী বোর্ড), মাওলানা ফয়সল আহমদ জালাবাদী (মুহাদ্দিস, মাদানিনগর মাদরাসা), মাওলানা কেফাতুল্লাহ (মাদানিনগর মাদরাসা), মাওলানা আব্দুল মান্নান (মুহতামিম, ইসলামপুর মাদ্রাসা নরসিংদী), মাওলানা আনাস মাদানী (মুরব্বি, তাবলীগ জামাত, ভোলা)।

এছাড়া, আজ শনিবার রাত আটটার দিকে নসিহত পেশ করেছেন আওলাদে রাসূল সায়্যিদ আরশাদ মাদানি (হাফিজাহুল্লাহু)।  তাঁর বয়ানের অনুবাদ করেছেন মুফতি আহসানুল্লাহ (মুহাদ্দিস, মাদানীনগর মাদরাসা)।

আজ শনিবার (১৬ নভেম্বর) বাদ আসর বয়ান করেছেন বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের আমীর কাকরাইলের প্রধান মুরব্বি হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ (হাফিজাহুল্লাহু)। ইসলাহী জোড়ে প্রদত্ত তাঁর বয়ানের সারসংক্ষেপ লিখে পাঠিয়েছেন সরেজমিনে উপস্থিত রাকিব মামাত্


মাওলানা জুবায়ের আহমদ বলেছেন, মানুষের উপাদান চারটি:

১. আগুন

২. পানি

৩. বাতাস

৪. মাটি

এই চারটির প্রত্যেকটির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথাক্রমে সেগুলো হলো:

১. আগুন উপরের দিকে ওঠে।

২. পানি ঢালু পেলেই সেদিকে বয়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

৩. বাতাস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

৪. মাটি সবকিছুকে নিজের দিকে টানে। কোনো কিছু উপরের দিকে ছুঁড়লেও তা ঘুরেফিরে মাটিতে পড়ে।

এই প্রত্যেকটির খারাপ প্রভাব মানুষের উপর পড়ে থাকে। যথাক্রমে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. মানুষও শুধু উপরের দিকে উঠতে চায়। বড়ত্ব দেখায়। অহংকার করে।

২. মানুষও পানির মতো স্রোতে ভেসে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে না।

৩. বাতাসের মতো মানুষও সর্বত্র তার ক্ষমতা বিস্তৃত করতে চায়।

৪. মাটির মানুষ মাটির মতো সবকিছুকে নিজের দিকে টেনে আনতে চায়। কোনো কিছু হাতছাড়া হোক, সেটা কভু চায় না। অর্থাৎ কৃপণতা করে। তার মালিকানা থেকে কোনো কিছু হাতছাড়া হতে চায় না।

এই প্রত্যেকটা থেকে নিরাময়ের উপায়ও ইসলাম বলে দিয়েছে। সেগুলো হলো যথাক্রমে:

১. নামায, মানুষ যতই উপরে উঠতে চায়, নামাযের রুকু-সিজদা তার মাথাকে নিচের দিকে নিয়ে যায়। তার অহংকারকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়।

২. রোযা, যা মানুষকে নিয়ন্ত্রিত থাকতে শেখায়।

৩. হজ্ব, যা মানুষের ক্ষমতার লোভ থেকে বিরত থাকতে শেখায়। সবার মতো সেলাইহীন সাদা কাপড়ে, টুপিহীন উসকোখুসকো চুলে, ফকিরের মতো চলতে শেখায়।

৪. যাকাত, যা কৃপণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে।

রাকিব মামাত্ জানান, হজরতের বয়ানের সময় মজলিসে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আনাস মাদানী (মুরব্বি, তাবলীগ জামাত, ভোলা), মুফতি বশিরুল্লাহ (মুহাদ্দিস, মাদানিনগর মাদরাসা), হিফজুর রহমান (জামেয়া রহমানিয়া ঢাকা), মুফতি আব্দুল বারি (মুফতি ও শায়খে ছানী, মাদানিনগর মাদরাসা) প্রমুখ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আতাউল করিম মাকসুদ, মুফতি রেজাউল করিম আবরারসহ দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম।

হাআমা/