দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের বার্তা
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:৪২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

শান্তি স্বস্তি সংহতির সমাহারে সমৃদ্ধ ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি স্বীয় বাণী কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করে মানবজাতির দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য অনেক মূল্যবান বার্তা পাঠিয়েছেন।

আসমানি কিতাব কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,

(এই) সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কুরআন), তাতে (কোনো) সন্দেহ নেই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে, (এই কিতাব কেবল) তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক, যারা না দেখে (আল্লাহ্‌ তায়ালাকে) বিশ্বাস করে, যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, তাদের আমি যা কিছু দান করেছি তারা তা থেকে (আমারই নিদের্শিত পথে) ব্যয় করে, যারা তোমার ওপর যা কিছু নাজিল করা হয়েছে তার ওপর ঈমান আনে, (ঈমান আনে) তোমার আগে (নবীদের ওপর) যা কিছু নাজিল করা হয়েছে তার ওপর, (সর্বোপরি) তারা পরকালের ওপরও দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।

(সত্যিকার অর্থে) এ লোকগুলোই তাদের মালিকের (দেখানো) সঠিক পথের ওপর রয়েছে এবং এরাই হচ্ছে সফলকাম। (বাকারাহ : ২-৫)

কুরআন মাজিদে বিস্তারিত শব্দসম্ভার বর্ণিত সত্ত্বেও কিছু অবাধ্য অবিশ্বাসী আল্লাহর দুশমন এতে বিভিন্ন বক্রতা খোঁজে। এই অবাঞ্ছিত অপাঙ্ক্তেয় অকাঙ্ক্ষিত অভিশপ্তরা কেবল নিজেকে ধ্বংস করে না; বরং অন্যদেরকে বিপথে নেয়ার অপচেষ্টা চালায়। তাই যুগে যুগে এরা নিজেরাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

এদের সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ জাল্লা শানুহু আজাবের বর্ণনার পাশাপাশি তাঁর অনুগত মুমিনদের নিয়ামত দানের কথাও বলেছেন। সেই সাথে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হলে কিভাবে তাদের আঘাত করতে হবে তার দিকনির্দেশনাও প্রদান করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করেছে এবং (অন্য মানুষকে) আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের (সব) কর্মই বিনষ্ট করে দিয়েছেন।

যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, মুহাম্মাদ-এর ওপর আল্লাহর তরফ থেকে যা কিছু নাজিল করা হয়েছে তার ওপরও ঈমান এনেছে, যা একান্তভাবে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে আসা সত্য, আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবনের সব গুনাহ-খাতা মাফ করে দেবেন এবং তাদের অবস্থা শুধরে দেবেন। এ (সব কিছু) এ জন্য হবে, যারা (আল্লাহকে) অস্বীকার করে তারা মূলত মিথ্যারই অনুসরণ করে, (অপর দিকে) যারা ঈমান আনে তারা তাদের মালিকের কাছ থেকে পাওয়া সত্য বিষয়ের অনুসরণ করে; আর এভাবেই আল্লাহ তায়ালা (এদের) জন্য তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

অতএব (যুদ্ধের ময়দানে) যখন তোমরা কাফেরদের সম্মুখীন হবে, তখন তোমরা তাদের গর্দানে আঘাত করো, অতঃপর (এভাবে) তাদের যখন তোমরা হত্যা করবে তখন (বন্দীদের) তোমরা শক্ত করে বেঁধে রাখো, এরপর বন্দীদের মুক্ত করে দেবে কিংবা তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেবে (এটা একান্তই তোমাদের ব্যাপার), তবে যতক্ষণ যুদ্ধ তার (অস্ত্রের) বােঝা ফেলে না দেবে (ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরাও অস্ত্র সংবরণ করবে না ), অথচ আল্লাহ তায়ালা এটা চাইলে (যুদ্ধ ছাড়াই) তাদের পরাজয়ের শাস্তি দিতে পারতেন, তিনি একদলকে দিয়ে আরেক দলের পরীক্ষা নিতে চাইলেন; যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে আল্লাহ তায়ালা তাদের কর্ম কখনো বিনষ্ট হতে দেবেন না। (মুহাম্মাদ-১-৪)

মুমিনরা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের পাশাপাশি নিজেরা পরস্পর সহমর্মী হবে আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছেন। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে–

জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত– তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে তাঁর কথা মান্য করার এবং তাঁর আনুগত্য করার এবং প্রত্যেক মুসলমানের শুভাকাঙ্ক্ষী থাকার ওপর বায়আত গ্রহণ করি। (আন-নাসায়ি-৪১৫৭)

মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালা ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথে চলতে হলে কুরআনুল কারিমের শিক্ষা ও চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত– রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য এ কথা বলা খুবই খারাপ যে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং সে যেন বলে, তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা বারবার কুরআন পড়তে থাকবে। কারণ কুরআন মানুষের মন থেকে চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও দ্রুত পালিয়ে যায়। (বুখারি-৩০৫২)

মুমিনের পরিচয় এবং তাদের পরস্পর সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাঁর উম্মতকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

ফাজালা বিন ওবায়েদ রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত– তিনি বলেন, বিদায় হজের ভাষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন,

আমি কি তোমাদেরকে মুমিন সম্পর্কে খবর দেবো না? সে ওই ব্যক্তি যার হাত থেকে অন্যদের মাল ও জান নিরাপদ থাকে। আর মুসলিম সেই, যার জবান ও হাত থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে। আর মুজাহিদ সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করে এবং মুহাজির সেই, যে সব ধরনের অন্যায় ও পাপকর্ম পরিত্যাগ করে। (মুসলিম-১২১৮)

কোনো মুমিন যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য পা বাড়ায় তখন তার সাথে শয়তানও তৎপর হয়ে ওঠে এবং চালবাজি করে ধোঁকা দিতে থাকে। নেক আমলকে কলুষিত করার জন্য সে নানা ধরনের প্ররোচনা দেয়। তাই মুমিনকে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। তাদের কর্তব্য হলো যেকোনো নেক আমল করতে গিয়ে সুন্নত তরিকা খোঁজা। কেননা সুন্নত হলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা আর বিদয়াত হলো ইবলিশ শয়তানের পথ। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

তোমাদের ওপর ওয়াজিব হলো : তোমরা আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরো এবং আমার পর সুপথপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরো এবং তা দন্ত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো আর (দ্বীনে) নব রচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান থাকো! কেননা প্রতিটি নব রচিত কর্ম হচ্ছে বিদয়াত এবং সব বিদয়াত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।(আহমাদ-১৬৬৯৫)

যারা নেক কাজ করবে এবং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকনির্দেশনামূলক তা প্রতিপালন করবে তাদের জন্য রয়েছে অনেক অনেক মহামূল্যবান জান্নাতি নেয়ামত।  আর এসব নেয়ামতের অধিকারী হবে যারা দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে চলবে।

এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আল্লাহ তায়ালাকে যারা ভয় করে তাদের যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে; সেখানে রয়েছে  নির্মল পানির ফোয়ারা, দুধের এমন কিছু ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ কখনো পরিবর্তিত হয় না, রয়েছে পানকারীদের জন্যে সুধার (সুপেয়) নহরসমূহ, রয়েছে বিশুদ্ধ মধুর ঝর্ণাধারা, (আরো) রয়েছে সবধরনের ফলমূল) দিয়ে সাজানো সুরম্য বাগিচা, সর্বোপরি, সেখানে রয়েছে তাদের মালিকের (কাছ থেকে পাওয়া) ক্ষমা; এ ব্যক্তি কি তার মতো যে ব্যক্তি অনন্তকাল ধরে জ্বলন্ত আগুনে পুড়তে থাকবে এবং সেখানে তাদের এমন ধরনের ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, যা তাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি কেটে (ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে) দেবে। (মুহাম্মাদ-১৫)

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

এনএ/