দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভালো নেই ইমাম-মুয়াজ্জিনরা
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:০৬ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

দেশে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বাড়ছে না। বেতনের পরিমাণও নগণ্য। অনেকের বেতন তো উল্লেখ করার মতোও নয়। এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে্। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলছে দ্রব্যমূল্য। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পেশাজীবী, নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবন ওষ্ঠাগত। লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশের সিংহভাগ মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে বর্তমানের দ্রব্যমূল্য।শহর ও গ্রামের চিত্র একই। অগ্নিমূল্যে দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরও অবস্থা আরো শোচনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভালো নেই আলোর ফেরিওলা ইমাম-মুয়াজ্জিনেরা। অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের শহরাঞ্চলে মসজিদগুলোর ইমামদের বেতন ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকা বা কমবেশি। মুয়াজ্জিনদের বেতন ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর গ্রাম্য এলাকার মসজিদগুলোর ইমামদের বেতন ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা এবং মুয়াজ্জিনদের বেতন ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। গ্রামে অনেক সময় দেখা যায় ইমাম এবং মুয়াজ্জিনের কাজ একই ব্যক্তি করছেন। মসজিদ পরিচ্ছন্নের কাজও করছেন ইমাম। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগামহীন ছুটাছুটিতে সাধারণ মানুষ যখন দিশেহারা সেখানে নামমাত্র বেতনে কাজ করছেন ইমাম-মুয়াজ্জিনরা। মসজিদ কমিটি খবর রাখছে না, হাতে গোনা সামান্য এ টাকায় কীভাবে জীবন অতিবাহিত করছেন তারা। কোনো কোনো গ্রামের মসজিদে আবার নির্ধারিত বেতন নেই। মৌসুমভিত্তিক ধান বা সাপ্তাহিক মুষ্টি চাল তুলে তাদের দেয়া হয়। কোনো কোনো গ্রামের মসজিদে মাসে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা বা বছরে ৪-৫ হাজার টাকা দেয়া দেয়া হয়।

শহর এবং কয়েকজন ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবার নিয়ে বেশিরভাগ দিনই সবজি বা ডাল দিয়ে খেয়ে কোনমতে জীবনযাপন করছেন তারা। চড়ামূল্যের কারণে কখনো আবার সবজিও কেনা কঠিন হয়ে যায়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে অনেকে আবার ধার-দেনা করেও সংসারের ঘানি টানছেন।

মিরপুরের একজন ইমাম বলেন, বাসাবাড়ির ভাড়া, যাতায়াত খরচ ও চিকিৎসা খরচসহ সবকিছুই ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সংসার চালানো নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়। কিন্তু আমাদের মাসিক সম্মানী-ভাতা একই থেকে যায় যুগ যুগ ধরে। যদিও মসজিদের নির্মাণ ব্যয়ে মাঝে মাঝে কোটি টাকা খরচ করতে দেখা যায় মসজিদ কমিটিকে। কিন্তু আমাদের বেতন-ওজিফার কোনো মূল্যায়ন হয় না।

গ্রামাঞ্চলের কয়েকজন ইমামদের অবস্থা জানতে কথা হয় কয়েকজন ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে। তারা জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে আমরা অনেক কষ্ঠে পরিবার নিয়ে দিন যাপন করছি। দিন দিন যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে জানিনা আমরা কিভাবে জীবন যাপন করব? সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের বেতন তো আর বাড়ছে না। আমরা ইমাম সবার নেতা কিন্তু এই নেতার খোঁজ কেউ রাখে না। বিভিন্ন সময় সরকার অনুদান দেয় কিন্তু আমাদের ইমামদের কেউ সাহায্য করে না। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বাররা মসজিদে নামাজ আদায় করে তারা চাইলে একজন ইমাম বা মুয়াজ্জিনকে একটি চালের কার্ড করে দিতে পারে কিন্তু দেয় না। লজ্জায় এই ইমাম, মুয়াজ্জিনরা না খেয়ে থাকলেও কারো কাছে বলতে পারে না। আমরা যারা মসজিদে চাকরি করি আমাদের বেতন অনেক কম।

তারা আরও বলেন, সবার চাকুরির নির্দিষ্ট সময় আছে কিন্ত ইমাম, মুয়াজ্জিনের নির্দিষ্ট সময় নেই অথচ তারা যে সম্মানী পায় সেটা অতি নগণ্য। তাই মনে করি প্রতিটি মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে নজর দেওয়া যে, তার মসজিদের খাদেমরা কেমন আছে, তাদের কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা? দেশে যে কোন প্রতিষ্ঠান চালাতে সরকারের নির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে কিন্তু‘ মসজিদ পরিচালনার জন্য কোন গাইডলাইন নেই। এখানে যারা ইমামতি বা মুয়াজ্জিন এর কাজ করে তাদের সম্মানীর ব্যাপারে সরকারের কোন নির্দিষ্ট কাঠামো নেই। সামান্য বেতনে কিভাবে তারা তাদের জীবন অতিবাহিত করে কেউ তাদের খোজ খবর রাখে না।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা নিয়ে কয়েকটি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয়। তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুরের একজন মুসল্লি বলেন, একটি মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব পালন করেন একজন ইমাম। নামাজের আগে নির্ধারিত সময়ে আজান ও ইকামত দেন একজন মুয়াজ্জিন। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা কনকনে শীত সবকিছু ছাপিয়ে তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন দিনের পর দিন।

তিনি বলেন, আসলে একজন ইমাম সবার মতোই মানুষ, তাদেরও পরিবার আছে, তাদেরও স্বচ্ছলভাবে বেঁচে থাকতে মন চায়। দেশে যেকোন প্রতিষ্ঠান চালাতে সরকারের নির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে কিন্তু মসজিদ পরিচালনার জন্য কোন গাইডলাইন নেই। কোথাও কোথাও মসজিদের টাইলস, ফ্লোর ইত্যাদি সৌন্দর্যে্য লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়, কিন্তু ইমাম-মুয়াজ্জিনের জীবন ও সংসার চলছে কি না, তার খোঁজও রাখে না।

এসময় তিনি দেশের ছোট-বড় সব মসজিদের তালিকা করে শ্রেণিভেদে ইমামদের বেতন কাঠামো তৈরি করা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন।

হাআমা/