‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন-পরিমার্জন কমিটিতে ইসলামি স্কলার অন্তর্ভুক্ত করুন’
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:০৫ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী ||

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ও মুদ্রিত সকল পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এক অফিস আদেশে এ কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। যাদের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে, শিক্ষাক্রমের নিরিখে পাঠ্যপুস্তক বিশ্লেষণ করা। কিন্তু আমরা অত্যন্ত বেদনা ও আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, সেখানে ১০ সদস্যের কমিটিতে ইসলামি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনো ইসলামি স্কলার নেই।

ইসলামকে বাদ দিয়ে বা ইসলাম শিক্ষাকে গুরুত্বহীন রেখে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সিলেবাস অপূর্ণাঙ্গই থেকে যায়। কারণ, মানবিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধ ইসলামশিক্ষার মাধ্যমে যেভাবে শেখা যায়, অন্য কোনো পন্থায় তা সম্ভবপর নয়। কোনো জাতির উন্নতি ও অবনতি অনেকাংশেই নির্ভর করে জনগণের নৈতিক শক্তির উপর। কেননা নৈতিক শিক্ষা মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং ভাল কাজে উৎসাহ প্রদান করে। যে দেশের জনগণের নৈতিক অধঃপতন দেখা দেয়, সে দেশ প্রচুর সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারে না। অতএব একটি দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নতি ও প্রগতির জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। আর নৈতিক শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে ইসলাম শিক্ষা। ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ আদব-কায়দা, আচার-আচরণ ইত্যাদি শিক্ষা লাভ করে থাকে। তাই আমাদের পাঠ্যসূচিতে ইসলাম শিক্ষার পাঠকে গুরুত্বের সঙ্গে এবং আরও গঠনমূলক পন্থায় অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।

কিন্তু বিগত সরকারের সময়কালে বিভিন্নভাবে ইসলাম শিক্ষাকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই দেশের জনগণের আশা ছিল এখন যা কিছু করা হবে তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু সেটি শুরুতে হোঁচট খেয়েছে বলে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠন করা কমিটিতে কোনো ইসলামী বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ এবং মাদরাসা শিক্ষা থেকে কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। ফলে শঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেটি গণমানুষের চিন্তা-চেতনার আলোকে সংস্কারের কাজটি কতটা যথাযথভাবে করতে পারবে?

শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে কোনো ইসলামি চিন্তাবিদ বা বিজ্ঞ আলেম রাখা হয়নি। বিগত ইসলাম বিদ্বেষী সরকার প্রায় ১৭ বছরের শাসনামলে নানা অসঙ্গতিসহ ইসলামী তাহযিব-তমদ্দুন বিরোধী অনেক বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করেছে, যা শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ। ঐতিহ্যগতভাবে এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু। তাই মুসলমানদের সন্তানরা তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতিতে ইসলামকে জানা ও শেখার সুযোগ পাবে—এটাই স্বাভাবিক। তাই ধর্মীয় বিষয়াদি এবং মানবিক মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোতে মাদরাসা শিক্ষক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং ইসলামিক স্কলারদের সম্পৃক্ত করা জরুরি বলে মনে করি। অন্যথায় পাঠ্যপুস্তক নিয়ে জন-আকাংঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে না কিছুতেই।

লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

হাআমা/