রাসূল সা. এর অনুসরণই মুক্তির সোপান
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৮:৪৮ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

মহান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে অনন্ত এক সেতুবন্ধ হচ্ছে রাহমানুর রাহিমের কালাম অর্থাৎ তাঁর বাণীসম্ভার। যার নাম কুরআন ও ফুরকান, যা মহামহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের  অলৌকিক নিদর্শন ও মানুষের জন্য দুনিয়া এবং আখেরাতের  অনন্য নির্দেশনা। আর এই কুরআনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে

কুরআন মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, (হে নবী,) আমি তোমার ওপর (এ) কেতাব এ জন্যই নাজিল করেছি যেন তুমি তাদের সামনে সে বিষয়সমূহ সুস্পষ্ট করে পেশ করতে পারো, (যে বিষয়ের মধ্যে) তারা মতবিরোধ করেছে, বস্তুত এ (কিতাব) হচ্ছে ঈমানদার লোকদের জন্য হেদায়াত ও (আল্লাহ তায়ালার) অনুগ্রহস্বরূপ। (আন্-নাহল-৬৪)

মানুষ স্বভাবত তর্কপ্রিয়; তাই মহীয়ান গরিয়ান সৃষ্টিকর্তা-পালনকারী পরম দয়াবান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পাঠানো ওয়াহির সঙ্কলন কুরআনুল কারিমের সত্যতার ব্যাপারেও তারা সন্দিহান। অথচ কুরআন মাজিদ সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে তাই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন,

(এই) সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কুরআন), তাতে (কোনো) সন্দেহ নেই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে, (এই কিতাব কেবল) তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক। (আল-বাকারাহ-২)

আল্লাহ তায়ালার কালাম কুরআন মাজিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— অনেকসময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ আয়াতের ব্যাখ্যা পরবর্তী অন্য কোনো আয়াতে উল্লেখ করা হয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে তাঁর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আহ্বান জানান যে, (হে নবী,) তুমি (এদের) বলাে, এ (কুরআন) তিনিই নাজিল করেছেন, যিনি আকাশসমূহ ও জমিনের সব রহস্য জানেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

ওরা বলে, এ আবার কেমন (ধরনের) রাসূল যে (আমাদের মত করেই) খাবার খায় এবং (আমাদের মত) হাটে-বাজারে চলাফেরা করে।

কিংবা (গায়েব থেকে) তার কাছে কোনো ধনভাণ্ডার এসে পড়ল না কেন, অথবা (কমপক্ষে) তার কাছে একটি বাগানই না হয় থাকত, যা থেকে সে (খাবার সংগ্রহ করে) খেতো, এ জালেম লোকেরা (মুসলমানদের আরো) বলে, তোমরা তো (আসলে) একজন জাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছো। তার কাছে কোনো ফেরেশতা নাজিল করা হলো না কেন, যে তার সাথে (আজাবের) সতর্ককারী হয়ে থাকত।

(হে নবী,) চেয়ে দেখো ওরা তোমার সম্পর্কে কী ধরনের কথা বানাচ্ছে, এরা (আসলে) গুমরাহ হয়ে গেছে, কখনো তারা আর সঠিক পথ পাবে না।

(হে নবী তুমি এদের বলো) আল্লাহ তায়ালা এমন এক সত্তা যিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের এই একটি কেন এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বাগানসমূহ দান করতে পারেন। যার নিম্নদেশে অমিয় ঝরনাধারা প্রবাহিত হবে। (এ ছাড়াও) তিনি (তোমাদের) দিতে পারেন (সুরম্য) প্রাসাদসমূহ!

বরং এরা কিয়ামতের দিনকে ‌অস্বীকার করে আর যারাই কিয়ামতকে অস্বীকার করে আমি তাদের জন্য (জাহান্নামের) জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা ফুরকান-১-১১)

মনে রাখা জরুরি, আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনার পাশাপাশি আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিও ঈমান আনা আবশ্যক। তাই কুরআন মাজিদের হেদায়াতের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর হাদিসের মর্ম অনুভব করে পথ চলার বিকল্প নেই। এরপর‌ও কেউ যদি বলে কুরআন মানি হাদিস মানি না তাহলে তার ঈমান থাকে কি?

এ ব্যাপারে কুরআন মাজিদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষ্যে বলা হয়,

সে দিন রাসূল বলবে, হে মালিক অবশ্যই আমার জাতি কুরআনকে (একটি) পরিত্যাজ্য (বিষয়) মনে করেছিল। (ফুরকান-৩০)

আসলে কাফেরদের বিরোধিতার কোনো পরোয়া করেন না আল্লাহ জাল্লা শানুহু এবং আল্লাহর রাসূল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ৪০ বছর বয়সে কুরআন নাজিল হওয়া শুরু হয়ে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে আমৃত্যু ওয়াহি নাজিল হয়। আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, ইন্তিকালের আগে ও ইন্তিকাল পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ধারাবাহিকভাবে ওয়াহি অবতীর্ণ করেন। যে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকাল করেন সে দিনও তার প্রতি ওয়াহি অবতীর্ণ হয়। (মুসলিম-৭৪১৪)

আমরা কুরআন মাজিদ ও হাদিসে রাসূল থেকে শিক্ষা পাই যে, একমাত্র আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ তথা অনুসরণ‌ই মুক্তির মূল সোপান। দুনিয়ার হাজারো সমস্যা-সঙ্কট ও অন্ধকারে মুমিনদের সরল পথ দেখায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর ওপর অবতীর্ণ আল-কুর‌আন।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

হাআমা/