উজবেকিস্তানে কয়েক দিন (৬)
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট, ২০২৪, ০৫:৩২ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন ||

গত কিস্তির পর থেকে...

২৬ জুলাই  ২০২৪ , ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুরাররম ১৪৪৬ রোজ শুক্রবার ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে দিল্লী। দিল্লীতে দুইঘণ্টা ট্রানজিট হয়ে তাশখন্দের ফ্লাইট। রাত ১১ টা ১০ মিনিটে আমরা তাশকেন্ত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পোঁছি। ঢাকা থেকে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে দিল্লী, সেখান থেকে আড়াই ঘণ্টায় তাশকেন্ত। বাংলাদেশ থেকে উজবেকিস্তানের সময়ের ব্যবধান এক ঘণ্টা। উজবেকিস্তানের সময় আমাদের চেয়ে এক ঘণ্টা পিছিয়ে।

আরো পড়ুন: উজবেকিস্তানে কয়েক দিন (১)

আরো পড়ুন: উজবেকিস্তানে কয়েক দিন (২)

তাশকেন্ত এয়ারপোর্ট থেকে কিছু ডলার ভাঙ্গিয়ে সোম নিয়ে নেই। তারপর এয়ারপোর্ট থেকেই এক লক্ষ সোম দিয়ে একটা উজবেক সিম ক্রয় করি। মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি তার লোক এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের রিসিপশন করার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা বাইরে বের হতেই মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেবের প্রাইভেট সেক্রেটারি বেহযাদকে পাই। তিনি আগেই আমাদের জন্য হোটেল ঠিক করে রেখেছিলেন সেখানে চলে যাই। এয়ারপোর্ট থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নোবঝা এলাকার মুকীমী স্ট্রিটে নোবঝা প্যালেস হোটেল। এখানে তিন বেড বিশিষ্ট এক রুমে আমরা তিনজন দুই দিন ছিলাম। দুই দিনের ভাড়া ছিল চব্বিশ লক্ষ সোম। আমাদের এক টাকা = ১০৩ সোম। সে হিসেবে চব্বিশ লক্ষ সোম = ২৩ হাজার ৩০০ টাকা। মাথা পিছু প্রতিদিন ৩৮৮৩/= টাকা।

তাশখন্দ

তাশখন্দ উজবেকিস্তানের রাজধানী। স্থানীয় লোকেরা উচ্চারণ করে তাশকেন্ত বা তশকেন্ত। যানজটমুক্ত একটি শহর। অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি শহর। রাস্তাঘাটের কোথাও একটা কাগজ বা গাছের একটা পাতাও দেখবেন না। অথচ প্রায় প্রতিটা রাস্তার পাশে রয়েছে সারি দেওয়া গাছ। কোথাও কোথাও রাস্তার দুইপাশে দুই তিন সারি করেও গাছ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি ফ্যামলির নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। এবং দুই চারটা ছাড়া সমস্ত গাড়িই উজবেকিস্তানের নিজস্ব তৈরি। মানুষের চলাচলের জন্য প্রাইভেট কার ছাড়া অন্য কোন ধরনের যানবাহন নেই বললেই চলে। মাঝেমধ্যে দুই একটা যাত্রিবাহী টাউনসার্ভিস বাসের দেখা মেলে। উজবেকিস্তানে গাড়ি চলে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে। রাশিয়ান আমলেও নাকি এমনই ছিল।

তাশখন্দ-এর মূল শব্দ তাশকন্দ (طشكند)। তাশকন্দ তুর্কি শব্দ। তাশ (طش) অর্থ পাথর আর কন্দ (كند) অর্থ শহর। অর্থাৎ পাথরের শহর। আযারী ভাষায় (আযারবাইজান অঞ্চলের ভাষায়) বলা হয় তশকেন্ত, আর রাশিয়ান ভাষায় বলা হয় তাশকেন্ত। তাশকন্দ শব্দটির উচ্চারণে কিছুটা পরিবর্তন এসে উচ্চারণ দাঁড়িয়েছে তাশখন্দ।

এক সময় তাশখন্দ-এর নাম ছিল শাশ। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এ অঞ্চলে শাশ নামক একটি গোত্র বাস করত। তাদের নামেই নামকরণ। আবার শাশকান্দ (شاش كند)ও বলা হত। অর্থাৎ, শাশদের শহর।

আমাদের কওমী মাদরাসাসমূহের নেসাবে  উসূলে ফিকহের যে উশূলুশ শাশী কিতাবটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তার সংকলক নিজামুদ্দীন শাশী এই শাশ তথা বর্তমান তাশখন্দ-এরই অধিবাসী ছিলেন। তাশখন্দের একজন আলেম মাওলানা জালালুদ্দীন সাহেব। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম নিজামুদ্দীন শাশীর কবর কোথায় তা জানা আছে কি না। তিনি বললেন, নিজামুদ্দীন শাশী এই এলাকারই লোক ছিলেন তা নিশ্চিত, তবে তার কবর কোথায় তা অজ্ঞাত।

তাশখন্দে যা যা দেখলাম

মীনোর মসজিদ দর্শন

২৭/৭/২৪ রোজ শনিবার

একটা ভালো কিছু দর্শনের মাধ্যমে আমাদের তাশখন্দ দর্শন শুরু হলো। তাশখন্দের লিটল রিং রোডে মীনোর  মসজিদ (Minor Mosque) দর্শনের মাধ্যমে। এটি কোন ঐতিহাসিক মসজিদ নয়। ২০১৬ সালে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি তাশখন্দের সুন্দরতম মসজিদ। স্থাপত্য শিল্পের চমৎকারিত্ব দেখার জন্য পর্যটকরা এখানে এসে থাকে।

ছবিতে মসজিদ ও মসজিদের গেটের যে প্যাটার্ন দেখছেন, এটি উজবেকিস্তানের মাদরাসা মসজিদ ও সমাধিসৌধের কমন প্যাটার্ন। সেই আমীর তৈমুর লং-এর সময় নির্মিত মসজিদ মাদরাসাগুলোর প্যাটার্নও এরকমই। তাশখন্দ, সমরকন্দ, বুখারা, তিরমীয সর্বত্রই মসজিদ, মাদরাসা ও সমাধিসৌধসমূহে এই একই প্যাটার্ন দেখতে পাবেন। এটা ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্নের অনুসরণ বটে। তবে বৈচিত্র না থাকায় সব জায়গায় একই প্যাটার্ন দেখতে দেখতে কারও একঘেয়েমিও বোধ হতে পারে।

এই মসজিদের পুরো এরিয়ার মধ্যে সামনের অর্ধেকে মূল মসজিদ। পেছনের অর্ধেকের মাঝখানে খোলা চত্বর আর তার তিন দিকে চিকন করে স্থাপনা দিয়ে চত্বরটি ঘেরা। সেই তিন দিকের স্থাপনার চত্বরের সাইড দেয়ালমুক্ত। কোথাও কোথাও এগুলোতে বসার বেঞ্চও থাকে। তাশখন্দ, সমরকন্দ, বুখারা, তিরমীয প্রভৃতি অঞ্চলের অধিকাংশ ঐতিহাসিক মসজিদ মাদরাসার স্থাপনা এই একই ধরনের।

কোকালদাশ মাদরাসা দর্শন

আমাদের ঢাকায় যেমন নতুন ঢাকা ও পুরান ঢাকা রয়েছে, তাশখন্দেও তেমনি নতুন পুরান তাশখন্দ রয়েছে। পুরাতন তাশখন্দের সেন্টার পয়েন্ট হল চরসু বাজার। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এই বাজারের পাশেই রয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা। এটি তাশখন্দের একমাত্র প্রাচীন মাদরাসা। নাম কোকালদাশ (كوكالداش) মাদরাসা। ছানাবিয়্যা স্তরের মাদরাসা। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠদশ শতকে সুলতান আব্দুল্লাহ খান (১৫৫৭-১৫৯৮ খ্রি.)-এর শাসনামলে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়ান শাসনামলে উজবেকিস্তানের হাজারো মাদরাসা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যে কয়টি মাদরাসা রক্ষা পেয়েছিল, কোকালদাশ মাদরাসা তার একটি। মাদরাসার উস্তাদ মাওলানা আলী আকবার সাহেবের সঙ্গে দীর্ঘ কথা হয়।

তিনি জানান, এ মাদরাসায় مختصر الوقاية , والهداية, شرح الوقاية, تيسير المنطق ইত্যাদি কিতাব পড়ানো হয়। বালাগাত তথা আরবী অলংকার শাস্ত্রের কিতাবাদিও পড়ানো হয়। শুনে মনে হল অনেকটা আমাদের দরসে নেজামির কাছাকাছি। উজবেক ভাষায় কিছু পড়ানো হলেও ইংরেজি তেমন নেই বলেই তিনি জানান

চলবে...

[এই লেখার বাকি র্পবগুলো পাবেন আমাদের সাহিত্য ক্যাটাগরিতে]

হাআমা/