শয়তান থেকে বাঁচতে যেসব আমল করবেন
প্রকাশ:
২৬ আগস্ট, ২০২৪, ১১:০৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
মানবজাতির চিরশত্রু শয়তান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার মানবজাতিকে শয়তান থেকে সতর্ক করেছেন। শয়তান অমান্য করেছে আল্লাহর আদেশ। সে তার ভুলের জন্য ক্ষমাও চায়নি। বরং ভুল বা অন্যায় জিদের ওপর অটল রয়েছে। মানুষের বিরুদ্ধে তার হিংসার আগুন চির-জাগ্রত করে রেখেছে। সে আল্লাহর কাছে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ চেয়েছে। আল্লাহও তাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার শপথ নিয়েছে সে। মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে তাকে। অবশ্য আল্লাহ শয়তানের হাত থেকে রক্ষার ও সৌভাগ্য লাভের সরঞ্জাম হিসেবে মানুষকে দিয়েছেন পবিত্র কুরআন, বিবেক-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা। এ ছাড়াও মহান আল্লাহ মানুষকে সুপথ দেখানোর জন্য পাঠিয়েছেন নবী-রাসুল। মহান আল্লাহ মানুষকে সুপথ দেখানোর জন্য পাঠিয়েছেন নবী-রাসুল। শয়তান থেকে বাঁচতে শিখিয়েছেন আমল। মহান আল্লাহ মানুষকে সুপথ দেখানোর জন্য পাঠিয়েছেন নবী-রাসুল। শয়তান থেকে বাঁচতে শিখিয়েছেন আমল। কুরআনে আল্লাহ বললেন, ‘আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সিজদা করতে বারণ করল? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে। ’আল্লাহ বললেন, তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোনো অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ১২, ১৩) শয়তান মানুষের চিরশত্রু। শয়তান চায় সব মানুষকে জাহান্নামি করতে। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দেখতে চান কে ভালো কাজ করে আল্লাহর পথে থাকে আর কে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে আল্লাহকে ভুলে যায়। শয়তান মানবজাতির ঘোষিত শত্রু। এ চিরশত্রু শয়তানের ধোঁকা, প্ররোচনা ও প্রভাব থেকে থেকে বাঁচতে যে আমলাগুলো করা জরুরি। ১. ইখলাসের সঙ্গে কাজ করা ইখলাস মানে সব কাজ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা। শয়তানের সন্তুষ্টির জন্য কিছু করলে সে শয়তানের দলভুক্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমি তুই আর তাদের মধ্যে যারা তোর অনুগামী হবে তাদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম ভরে ফেলব।’ (সুরা: সোয়াদ, আয়াত ৮৫) ২. খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা রাসুল সা. বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ খাবার খায়, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি সে খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে সে যেন পরে বলে, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরা’ অর্থ: আমি আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করছি প্রথমে এবং শেষে। (মুসলিম, হাদিস ৫০৯৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৭) ৩. ঘরে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ বলা হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তিনি নবী সা.-কে এরূপ বলতে শোনেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে এবং ভেতরে প্রবেশের সময় ও খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে, তখন শয়তান বলে, এখানে তোমাদের জন্য রাতে থাকার কোন স্থান নেই, আর খানাও নেই। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশের সময় বিসমি্ল্লাহ বলে না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান পেয়েছ। এরপর সে ব্যক্তি খাবার সময় যখন বিসমিল্লাহ বলে না, তখন শয়তান (তার সাথীদের) বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান এবং খাবার পেয়ে গেছ। (মুসলিম, হাদিস ২০১৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৫) ৪. ওয়াশরুমে প্রবেশের আগে দোয়া পড়া হজরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ৫. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেন, যখন কোন লোক তার ঘর থেকে বের হয়, তখন তার সাথে দু'জন ফিরিশতা থাকে, যাদেরকে তার জন্য নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর যখন সে 'বিস্মিল্লাহ' বলে তখন তাঁরা (ফিরিশতাদ্বয়) বলেন তোমাকে হিদায়ত দান করা হয়েছে আর যখন সে لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ বলে, তখন তাঁরা বলেন তোমাকে রক্ষা করা হয়েছে। যখন সে تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ বলে, তখন তারা বলেন, তোমার জন্য (আল্লাহ) যথেষ্ট হয়েছে। অতঃপর তার সাথে দু'জন সাক্ষাৎ করে। তখন ফিরিশতাদ্বয় বলেন, এমন লোককে তোমরা কি করতে চাও, যাকে হিদায়াত দান করা হয়েছে, এবং যাকে রক্ষা করা হয়েছে যার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট হয়েছেন। (আবু দাউদ হাদিস ৫০৯৫, ইবনে মাজা হাদিস ৩৮৮৬। ৬. নামাজের কাতারের মধ্যখানে ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানো হযরত ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, তোমরা নামাজের কাতার সোজা করবে, বাহুকে সমপর্যায়ে রাখবে, ফাঁকসমূহ পূর্ণ করবে। মধ্যখানে শয়তানের (জন্য) ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতার সোজা করে মিলিয়ে দাঁড়ায় আল্লাহ তাকে (আপন রহমতের সহিত মিলান। আর যে ব্যক্তি কাতার পৃথক করে আল্লাহও তাহাকে (আপন রহমত হইতে) পৃথক করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৬৬৫, মিশকাত, হাদিস ১১০২) ৭. হাই উঠলে হাত দ্বারা মুখ বন্ধ করা হাই উঠার সময় মুখে হাত দিয়ে বাধা দিতে হবে। রাসুল সা. বলেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন তা সাধ্যমত রোধ করবে। হাই তোলার সময় যেন ‘হা’ না হয়, কেননা শয়তান তাতে হাসে (বুখারি হাদিস ৩২৮৯, মিশকাত হাদিস ৯৮৬)। অন্য হাদিসে আছে, রাসুল সা. বলেন, যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তার মুখের উপর হাত রেখে তাকে প্রতিহত করে। কেননা এ সময় শয়তান (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে (মুসলিম হাদিস ২৯৯৫, মিশকাত হাদিস ৯৮৫)। ৮. সন্ধ্যার সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করা ও বাচ্চাদের ঘরে রাখা হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যখন রাত ঘনিয়ে আসবে অথবা (বলেছেন) তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হবে, তখন তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের আটকে রাখবে। কেননা শয়তান সেসময় চলাফেরা করে। রাত ঘন্টাখানেক অতিক্রান্ত হলে তাদের ছেড়ে দাও। আর দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। কারণ, শয়তান কোন বন্ধ দুয়ার খোলে না। আর তোমরা নিজেদের মশকসমূহের মুখ এঁটে রাখবে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর নিজেদের পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে এবং যদি তার ওপর একটি কাঠি রেখেও হয় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর তোমাদের বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। (মুসলিম, ৫০৮০, বোখারি ৫১৪৮) ৯. এ দোয়াটি ১০০ বার পড়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির।’ হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই; রাজত্ব তাঁরই, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই; তিনিই সবকিছু উপর ক্ষমতাবান) এই দোয়া যে দিনে একশ বার পাঠ করে সে দশজন গোলাম আযাদ করার সাওয়াব পাবে, তার আমল নামায় একশ নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার থেকে একশ গোনাহ মুছে দেওয়া হবে। আর তা ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান (তার কুমন্ত্রণা) থেকে তার জন্য রক্ষাকবচ হয়ে যায়। সেদিন সে যা করেছে তার চেয়ে উত্তম পুণ্য সম্পাদনকারী কেউ হবে না। কিন্তু কেউ তার বেশি আমল করলে তার কথা ভিন্ন। (বোখারি, হাদিস ৬৪৩, মুসলিম, হাদিস ৬৫৯৮। ১০. সবসময় আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি শয়তানের পক্ষ হতে তোমাকে কোনও কুমন্ত্রণা দেওয়া হয়, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা: আরাফ, আয়াত: ২০০) এ আয়াতে সকল মুসলিমকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, শয়তান আমাদের মনে কখনও মন্দ ভাবনার প্রতি প্ররোচনা দিলে সঙ্গে-সঙ্গে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। এনএ/ |