সুন্দর বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশায় ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে ৯ দফা দাবি
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট, ২০২৪, ০৮:১০ রাত
নিউজ ডেস্ক

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রূহের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করে বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি না মেনে খুনি হাসিনা সরকার নির্বিচারে ঠান্ডা মাথায় পাখির মতো গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এই বর্বর হত্যাযজ্ঞ দেখে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

আজ শুক্রবার ৯ আগস্ট বিকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে ঘোষিত ৯ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

পীর সাহেব বলেন, ফেরাউন বুঝতে পারেনি যে নীলনদে ডুবে মারা যাবে। এই জালেম হাসিনা সরকারও বুঝতে পারেনি যে পচা শামুকে পা কাটা যাবে। তিনি বলেন, খুনি হাসিনাসহ সকল হত্যাকারী, বিদেশে অর্থপাচারকারী, দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে হবে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। পীর সাহেব বলেন, সুন্দর একটি বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা করছেন দেশবাসী। বিগত জালেম সরকারের নির্বাচন কমিশনে জড়িতদের বিচার করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। দেশের সংখ্যালঘুদের জান-মাল ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা দেয়া ঈমানী দায়িত্ব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি নবগঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং সকল উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে নতুন সরকারের সকল ভালো কাজের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ স্বৈরশাসন অবসানের পর একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী দখলদারিত্ব, লুটতরাজে মেতে উঠেছে। দুর্নীতি ও জালিম সরকারের পথ ধরে এভাবে লুটপাটে মেতে উঠলে আমরা তাদেরকে ছেড়ে দেবো না। এখন সবাই মিলে রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী দুঃশাসন দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, নির্বাচনকে করেছে নির্বাসিত। ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতিকে করেছে বিপর্যস্ত। বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক মুক্তি এবং রাষ্ট্রের সকল অসংগতি দূর করে দুর্নীতি দুঃশাসনমুক্ত উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন এখন সময়ের দাবি। ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

সংগঠনের ঢাকা মহনাগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মুফতী সৈয়দ এছহাক আবুল খায়ের, মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার,শায়খুল হাদীস মাওলানা মকবুল হোসাইন, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, ডা. শহিদুল ইসলাম, মু. আবু বকর, ছাত্রনেতা মুনতাছির আহমদ, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, এম হাসমত আলী, মুফতী মাছউদুর রহমান, মাওলান মাকসুদুর রহমান, মুফতী হাফিজুল হক ফাইয়াজ, আব্দুর রহমান, তাহসিনুল ইসলাম।

মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, খুনি হাসিনার পতনের পর যারা দখলদারিত্বে মেতে উঠেছে, বিরোধী মতের বাড়ী-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ধ্বংসে লিপ্ত হয়েছে, তাদেরকে বলে দিতে চাই আওয়ামী লীগের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইলে আমরা তাদেরকে ছেড়ে দিবো না। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে নিতে হবে। তিনি ছাত্রসমাজকে আগামির নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, নিরীহ নিরাপরাধ, বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ, সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের হেফাজতের দায়িত্ব পালন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে আরো ভুমিকা পালনের আহ্বান জানান।

অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গজবের নাম। আওয়ামী লীগ একটি ধ্বংসের নাম। আওয়ামী লীগ নৈরাজ্যের নাম। আওয়ামী লীগ সংবিধান ধ্বংসের নাম। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের নাম। আওয়ামী লীগকে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

পীর সাহেব চরমোনাই ঘোষিত ৯ দফার মধ্যে রয়েছে :

১. অনতিবিলম্বে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে অনুর্ধ্ব ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হতে পারবে না।

২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

৩.গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আহত/নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৪. তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ বছরে সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

৫. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

৬. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।

৭. নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (চ.জ) চালু করতে হবে। বিগত ৩টি নির্বাচন বাতিল করতে হবে এবং  নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৮. আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৯. উলামায়ে কেরাম জাতির ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। তারা উম্মাহর ঈমান-আমল রক্ষায় কাজ করেন। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি অবশ্যই থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ পুলিশের প্রতি জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভ দূরীকরণে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার না হয়ে জনকল্যাণে কাজ করতে হবে। তিনি পুলিশ প্রশাসনকে কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলামী আন্দোলন আপনাদের যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকবে।

হাআমা/