ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন-এর বর্ণাঢ্য জীবনী
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট, ২০২৪, ০৯:১৮ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

শেখ হাসিনা সরকার পতনের চারদিনের মাথায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে গঠিত হয়েছে  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে স্থান পেয়েছেন প্রখ্যাত আলেম ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন। উপদেষ্টা হিসবে তিনি বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন । বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর আগে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে শপথ বাক্য পাঠ করান। বাংলাদেশের ইতিহাসে আলেম হিসাবে এ ধরনের উদ্যোগ প্রথম। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম আলেম উপদেষ্টা প্রখ্যাত এই আলেমের বর্ণ্যাঢ্য জীবনী তুলে ধরা হল।

নাম ও জন্ম :

প্রখ্যাত এ আলেমের পুরো নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। তবে তিনি ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন নামেই বেশি পরিচিত। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ একজন ইসলামি পণ্ডিত ছিলেন।

শিক্ষাজীবন :

বাবুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালইয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় লেখাপড়া করেন। ১৯৭১ সালে সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম মাদ্রাসা থেকে প্রথম বিভাগে আলিম ও ১৯৭৩ সালে ফাযিল পাশ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত চট্টগ্রাম চন্দনপুরা দারুল উলুমে হাদিস অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি আশরাফ আলী থানভীর শিষ্য মুহাম্মদ আমিনের কাছে সহীহ বুখারী, চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার নিজামপুর এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান নিযামীর কাছে সহীহ মুসলিম, ইসমাইল আরাকানী কাসেমীর কাছে সুনান আত-তিরমিজী, নাওয়াব হাসান কাসেমীর কাছে সুনানে আবু দাউদ পড়েছেন। চট্টগ্রামের আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আব্দুল হালিম বুখারী তার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে এমএ পাশ করেন।

পিএইচডি:

২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা’ বিষয়ের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন :

১৯৮৭ সালে সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম ফাযিল মাদ্রাসায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওমরগণি এমইএস কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৭ সাল থেকে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার ধর্মীয় ও সাহিত্য বিষয়ক মুখপত্র মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক ও হালিশহর এ-ব্লক হজরত উসমান (রা.) জামে মসজিদের খতিব, আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

এছাড়াও তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে দেড় বছর খণ্ডকালীন অধ্যাপক, হারুন ইসলামাবাদীর আমলে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষণা বিভাগে ৪ বছর, সুলতান যওক নদভীর আহ্বানে জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ায় ‘ওসিলাতুল ইলাম’ বিষয়ে এক বছর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ছাত্রজীবনে (১৯৭৩ — ১৯৮৪) দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলার বাণী ও The Bangladesh Times এর পটিয়া মহকুমা সংবাদদাতা এবং The New Nation এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৮ জুলাই থেকে তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৭ সাল থেকে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার ধর্মীয় ও সাহিত্য বিষয়ক মুখপত্র মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এছাড়া তিনি হালিশহর এ-ব্লক হজরত উসমান (রা.) জামে মসজিদের খতিব, আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

রাজনৈতিক জীবন :

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর এবং ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা নির্বাচিত হন।  

তাসাউফ :

তিনি নানুপুর মাদ্রাসার প্রাক্তন মহাপরিচালক জমির উদ্দিন নানুপুরী ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমীর শাহ আহমদ শফীর হাতে বায়আত হন। নানুপুরী তাকে ইজাজত প্রদান করেছিলেন। জুলফিকার আহমদ নকশবন্দীর সাথেও তার আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে।

প্রকাশনা :

১৯৭০ সালে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত-তাওহীদে ‘হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর জীবন ও কর্ম’  শীর্ষক তার প্রথম লেখা ছাপানো হয়। বর্তমানে তিনি ৪টি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক ও আরবি পত্রিকা বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক। বিশ্ব মুসলীগ লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নাল সহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০ টি। তার মধ্যে রয়েছে : ‘নিভে যাওয়া দীপশিখা, মাসলাকে উলামায়ে দেওবন্দ (অনুবাদ) মূল: কারী মুহাম্মদ তৈয়ব, ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান (অনুবাদ) মূল: আবুল হাসান আলী নদভী, কারওয়ানে যিন্দেগী-৩য় খন্ড (আত্মজীবনী মূলক রচনা) মূল: আবুল হাসান আলী নদভী, খতীবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ: একটি যুগ বিপ্লব উৎস (১৯৮৯), নির্বাচিত প্রবন্ধ-১  সম্পাদিত গ্রন্থ সীরাতে আয়েশা মূল: সুলাইমান নদভী, বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ, এসো নারী পর্দা করি, পুরুষ মহিলাদের নামায শিক্ষা। এছাড়াও তিনি জুলফিকার আহমদ নকশবন্দীর বাংলায় অনূদিত গ্রন্থসমূহের সত্যতা ও শুদ্ধতা যাচাই বিষয়ক কমিটির সদস্য।

হাআমা/