ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকের স্বভাব
প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৪, ১০:১০ রাত
নিউজ ডেস্ক

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন : মুনাফিকের আলামত তিনটি :

১. তারা অধিক পরিমাণে মিথ্যা কথা বলে,

২. প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না 

৩. এবং তাদের কাছে আমানত হিসেবে কোনো জিনিস গচ্ছিত রাখলে তা খেয়ানত করে। (বুখারী ও মুসলিম)

তারা মুখে এক অন্তরে আরেক। নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, আবার ঘুষও খায়, দুর্নীতিও করে, অন্যের হক আদায় করে না। মুখে দাবি করে মুসলমান, কাজে দেখায় মুনাফেকি। মুমিন বান্দা যাকে-তাকে যখন-তখন প্রতিশ্রুতি দেন না, যদি দেন তাহলে যেকোনো মূল্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। ওয়াদা পালন করা আখলাকে হামীদা বা প্রশংসনীয় আচরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এটি ঈমানের একটি অঙ্গ। ওয়াদা পালন করা মানে কথা দিয়ে কথা রাখা, যে লোক ওয়াদা পালন করে তাকে সবাই বিশ্বাস করে, ভালোবাসে, ওয়াদা পালন করলে আল্লাহ খুশি হন।

প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে: যেমন স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত নির্ধারিত মোহরানার প্রতিশ্রুতি, পিতা-মাতা সন্তানের সাথে, ভাই ভাইয়ের সাথে, বোন বোনের সাথে, আত্মীয় আত্মীয়ের সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হওয়া। সমাজে চলতে গিয়ে, অফিসে-আদালতে কাজকর্ম করতে গিয়ে লিখিত বা অলিখিত নানা রকম ওয়াদা বা অঙ্গীকার করতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন চলে বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে। কোনো দেশের ভিসা গ্রহণ করা হলে সে দেশের আইনকানুন মানার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কোনো দেশে বসবাসকারীও কার্যত সে দেশের রাষ্ট্রীয় আইনকানুন মেনে চলার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ। নির্বাচনের সময় জয়ী হওয়ার জন্য নেতারা জনগণকে ভূরিভূরি ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। দেশপ্রেমিক সভা-সমিতিতে নানান প্রতিশ্রুতি দেন। এভাবে জীবনের বহু ক্ষেত্রে মানুষ মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা পরবর্তীকালে পালন করার কথা আমরা খুব কমই ভাবি। এসব প্রতিশ্রুতি পালন বা রক্ষা করা অপরিহার্য কর্তব্য। প্রতিশ্রুতি পালন না করলে মনের স্বচ্ছতা কমে যায়। সব চেষ্টা ও মেহনত ব্যর্থ হয়। ঈমান নষ্ট হয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি দেখা দেয়। তা ছাড়া জেনেশুনে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা সম্পূর্ণ শিষ্টাচারের পরিপন্থী ও মিথ্যাচার। ইসলামে যা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বা হারাম।

রাসূলে করীম (সা) বলেছেন , ‘যে আমানত প্রত্যর্পণ করে না, তার ঈমান নেই। আর যে ওয়াদা রক্ষা করে না তার কোনো ধর্মই নেই। তাই যেসব প্রতিশ্রুতি পালন করা যাবে না সে সব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি থেকে বিরত থাকা এবং কথায় কথায় প্রতিশ্রুতি দেয়ার ফ্যাশন থেকে নিজেকে রক্ষা করা উচিত। ওয়াদা ভঙ্গ করা যে কত বড় অপরাধ তা যদি আমরা জানতাম তাহলে আমরা কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করতাম না। আসুন আমরা ওয়াদা পালনের প্রতিজ্ঞা করি। এই ওয়াদা পালনের মাধমে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন। আমীন!’

হাআমা/