খুলতে যাচ্ছে জার্মানির শ্রমবাজার; বছরে ৫ হাজার যুবক যাওয়ার সুযোগ পাবে
প্রকাশ:
২৪ জুন, ২০২৪, ১০:২০ রাত
নিউজ ডেস্ক |
ইউরোপের উন্নত দেশ জার্মানিতে প্রায় ৫ লাখ অভিবাসী কর্মীর সঙ্কট রয়েছে। জার্মানির উন্মুক্ত অর্থনীতি পৃথিবী-বিখ্যাত। উন্মুক্ত অর্থনীতি দেশটির শিল্পের উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা রেখেছে। একই সঙ্গে সারা বিশ্বের শ্রম ও দক্ষ শ্রমিকের বাজার হিসেবেও বেশ আকর্ষণীয় জার্মানি। জার্মান সরকার অতিসম্প্রতি দেশটিতে অভিবাসী কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এ সুবাদে বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকদের ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রামের অধীনে দেশটির শ্রমবাজারে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জার্মানির ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে দেশটির বিভিন্ন সেক্টরে তিন বছর মেয়াদে প্রতি মাসে ৭শ’ ইউরো বেতনে চাকরি প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হচ্ছে। গত ১২ মে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে জার্মান-মালয়েশিয়া ইন্সটিটিউট (জিএমআই) এবং বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স আফিয়া ওভারসীজের মাঝে আনুষ্ঠানিক দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জিএমআই এর পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর আহমদ সোলেহীন মোহাম্মেদ ইউসুফ এবং আফিয়া ওভারসীজের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলতাব খান। এ চুক্তির মাধ্যমে প্রথমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে দু’মাস জার্মান ভাষা শিখে কুয়ালালামপুর থেকে সরাসরি জার্মানির সংশ্লিষ্ট সেক্টরে চাকরির সুযোগ পাবেন। দেশটিতে প্রথম বছর প্রত্যেক বাংলাদেশি কর্মী ৭শ’ ইউরো বেতন পাবে এবং পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ পাবে। এতে আরো বাড়তি আয়ের সুযোগ হবে। দ্বিতীয় বছর প্রতি মাসে ৮শ’ ইউরো এবং তৃতীয় বছর প্রতি মাসে ৯শ’ ইউরো বেতন পাবে। আফিয়া ওভারসীজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলতাব খান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী ব্যবসায়ী আলতাব খান বলেন, দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার পর জার্মানির শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ট হওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি বলেন, সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে প্রতি বছর জার্মানিতে ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রামের অধীনে ক্লিনিং, কুক, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, রেস্টুরেন্ট, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং নার্সিং খাতে প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। উল্লেখিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি শিক্ষিত বেকার যুবকরা নির্ধারিত টিউশন ফি’র মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে দু’মাস জার্মান ভাষা শিখে কুয়ালালামপুর থেকেই তিন বছর মেয়াদে জার্মানিতে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ পাবেন। দেশটিতে দু’বছর কাজ করার পর এসব বাংলাদেশি যুবক পিআর এর জন্য আবেদনের সুযোগ পাবে। গত ১৩ জুন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বাক্ষরিত চুক্তিটিকে অনুমোদন দিয়েছে। গত ১৪ জুন আফিয়া ওভারসীজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলতাব খান জিএমআই এর সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির কপি মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার মো. শামীম আহসানের কাছে হস্তান্তর করেন। জার্মানি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে দেশটিতে বাংলাদেশি যুবকদের সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় হাইকমিশনার মো.শামীম আহসান আফিয়া ওভারসীজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলতাব খান ও জিএমআই কর্তৃপক্ষ আন্তরিক অভিনন্দন জানান। হাইকমিশনার জার্মানিতে বাংলাদেশি যুবকদের ডুয়েল ভোকেশনার ট্রেনিং প্রোগ্রামের অধীনে উচ্চ বেতনে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশের প্রবেশের সুযোগ যাতে হাত ছাড়া না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টির রাখার অনুরোধ জানান। হাইকমিশনার জার্মানিতে ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রামে বাংলাদেশি যুবকদের অংশগ্রহণে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষিত যুবকরা ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে আধুনিক জার্মানি থেকে প্রচুর রেমিট্যান্স আয় করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জার্মানির আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। এদিকে, গত মে মাসের শুরুতেই জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ দেশটির বিভিন্ন সেক্টরে কর্মী সঙ্কট কাটাতে বিদেশি কর্মী নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জার্মানির উন্মুক্ত অর্থনীতি পৃথিবী-বিখ্যাত। আমাদের শিল্পের উন্নয়নে এটা দারুণ ভূমিকা রেখেছে। একই সঙ্গে সারা বিশ্বের শ্রম ও দক্ষ শ্রমিকের বাজার হিসেবেও আমাদের দেশ বেশ আকর্ষণীয়। তাই সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বিরোধীদের বিষয়ে বলতে চাই, তারা দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের বিষয়টি বুঝবে না। শিল্পকে মজবুত করতে হলে আমাদের বিদেশি দক্ষ জনবল আনার বিকল্প দেখছি না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারটি দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ইউরোপে আইনি অভিবাসনকে সমর্থন করার জন্য ইইউ ২০২১ সালে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ নামে একটি বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করেছে। জার্মানিতে জাহাজ নির্মাণ, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, নির্মাণ খাত, পর্যটন ও কৃষি- এই ছয়টি খাতে দক্ষ কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশ থেকে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে ইইউর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, ইতোমধ্যে বেসরকারি জার্মান কোম্পানিগুলো কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অপর দিকে,রিক্রুটিং এজেন্সি এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপের (বিডি) চেয়ারম্যান লোকমান শাহ জানিয়েছেন, জার্মানি থেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য একটি চাহিদা-পত্র পেয়েছেন। এই চাহিদা-পত্রের বিপরীতে ওয়েল্ডিং, নির্মাণ, প্লাম্বার, কার্পেন্টারসহ কয়েকটি ব্যবসায় দক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই জার্মানিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মী নিয়োগের চাহিদা-পত্র সত্যায়নের জন্য ফাইল জমার কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে, জার্মানিতে ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে বাংলাদেশি শিক্ষিত যুবকদের অংশগ্রহণে টিউশন ফি’ পরিশোধের সহজ শর্তে ঋণ দিতে আজ সোমবার মতিঝিলস্থ উত্তরা ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে সম্মতি-জ্ঞাপন করেছে। জার্মানির সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সম্পৃক্ত-করণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে উত্তরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসছে। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের এক বৈঠকে উত্তরা ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিভাগের নির্বাহী জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার আলী শামনূর ও ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মো.নূরি আলম সিদ্দিক আফিয়া ওভারসীজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলতাব খানের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে জার্মানিতে বাংলাদেশি যুবকদের ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানে আর্থিক যোগান দিতে সম্মতি প্রদান করেন। হাআমা/ |