মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি দেওয়া যাবে?
প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৪, ০২:৪৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

কুরবানি স্বাভাবিক কোনো আমল নয়। এর সঙ্গে মিশে আছে অনেক তাৎপর্য। এতে পশু জবাই করার মাধ্যমে রয়েছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের অফুরন্ত সুযোগ। হজরত যায়েদ বিন আরক্বাম রা. বলেন, রাসুল সা.-এর সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই কুরবানিটা কী? রাসুল সা. জবাবে বললেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আ.-এর সুন্নত বা আদর্শ। 

তারা জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কী ফায়েদা রয়েছে হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, (কুরবানির পশুর) প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। সাহাবিরা আবার জানতে চইলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ভেড়া-দুম্বার পশমের ব্যাপারে কী কথা? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও এক একটি নেকি রয়েছে। (ইবনু মাজাহ)।

কেউ যদি মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি দেন, তাহলে তার কোরবানি দেওয়া কিংবা মৃতের জন্য কোরবানি করা জায়েজ। তবে যদি ‍মৃত ব্যক্তি অসিয়ত না করে থাকেন, তাহলে এটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে।

কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতোই সেটি নিজেরাও খেতে পারবে। আবার আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যাবে। তবে যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির জন্য অসিয়তক করে গিয়ে থাকেন, তাহলে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। সেক্ষেত্রে গোশত গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ০১/১০৭; ইলাউস সুনান, হাদিস : ১৭/২৬৮; রাদ্দুল মুহতার : ৬/৩২৬; ফতওয়া কাজিখান : ০৩/৩৫২)

কোনো গরুতে যদি ৭ম অংশ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয়, তাহলে সবার কোরবানি শুদ্ধ হবে এবং অন্য অংশের সদস্যরা ওই ভাগের গোশত খেতে পারবেন। তবে এই পদ্ধতি উত্তম নয়; এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হলো- সবাই মিলে একজনকে এক অংশের টাকার মালিক বানিয়ে দেবে। তখন তিনি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করবেন। এতে করে এটি নিয়মসম্মত হবে এবং সবাই সওয়াবও লাভ করবেন।

এই অবস্থায় মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেওয়া ভাগের গোশত কোরবানিদাতার হবে। তিনি নিজে খেতে পারবেন, সদকাও করতে পারবেন। আবার চাইলে অন্য অংশীদারদের হাদিয়াও দিতে পারবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৮৫; বাদায়িউস সানায়ি : ০৪/২০৯; আদ-দুররুল মুখতার : ০৬/৩২৬; আল-মুহিতুল বুরহানি : ০৮/৪৭৮)

মৃতের নামে দেওয়া কোরবানির পশুর গোশত খাওয়া যায়?

কোনো মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কোরবানির গোশত নিজেরাও খেতে পারবেন, আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবেন। তবে মৃত ব্যক্তি কোরবানি করার অসিয়ত করে গিয়ে থাকলে, সেই কোরবানি তার ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে দেওয়া ওয়াজিব এবং এর গোস্ত নিজেরা খেতে পারবেন না। গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।

মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদ না থাকলে, কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব নয়। নিজের সম্পদ থেকে দিলে— তা নফল হিসেবে গণ্য হবে এবং সেটার গোশত নিজেরা খেতে পারবেন।

আয়শা রা. ও আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সা. কোরবানির ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংশল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসীকৃত মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি উম্মতের যারা আল্লাহর তাওহিদের ও তার নবুওয়ত প্রচারের সাক্ষ্য দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সা.) ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩১২২)

সূত্র: (রদ্দুল মুহতার: ৯/৪৭১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ১৭/৪৪৪; রদ্দুল মুহতার: ৯/৪৭২; মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদিস: ৮৪৫; মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদিস: ৮৪৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া: ৬/২২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ১৭/৪৪৪; কাজি খান: ৩/৩৫৩; আল-বাহরুর রায়েক: ৩/১০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩২২; আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৭৩

মৃতের নামে কোরবানি দিলে নিজের ওয়াজিব কোরবানি হয়?

যেহেতু নিজের উপর কোরবানি ওয়াজিব। তাই তার উচিত নিজের নামেই কোরবানি দেওয়া। আর মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা। এতে করে নিজের কোবানিও আদায় হবে, আবার মৃতকে সওয়াবও পৌঁছানো হবে। এটাই নিরাপদ ও উত্তম পদ্ধতি।

তবে কতিপয় ফিকাহবিদদের মতে, মৃত ব্যক্তির অসিয়ত ছাড়া এমনিতেই তার নামে নফল কোরবানির নিয়তে কোরবানি দিলে— কোরবানিদাতা ব্যক্তির নিজের ওয়াজিব কোরবানিটিও আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রথম সুরতটিই অধিকতর নিরাপদ। (মাজমাউল আনহুর : ০২/৫১৬; আল-বাহরুর রায়িক : ০৮/৩১৮; রাদ্দুল মুহতার : ০৯/৪৮৪; ফাতাওয়া কাজিখান : ০৩/৩৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৭/৪৪৪; বাজ্জাজিয়্যাহ আলা হাওয়ামিশিল হিন্দিয়্যা : ০৬/২৯৫; ফাতহুল মুইন : ০৩/৩৮২)

এনএ/