কোরবানীর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ তিন দাবীতে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৪, ০২:৩২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনে বর্বর ইসরাইলী বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে ও গাজার মজলুম মুসলমানদের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো, দেশ বিরোধী ও জাতি ধ্বংসে এনজিওদের অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং কোরবানীর চামড়ার ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির দাবীতে কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলন ফিলিস্তিনে বিশেষ ভাবে গাজায় গণহত্যা, মানবিক বিপর্যয় ও মানবিক সহায়তা প্রসঙ্গে প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি বলেন,  প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে সন্ধ্যায় সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধ ভাবে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের ৭৭% ভূমি জবর দখল করে আন্তর্জাতিক আইনকানুনের কোন তোয়াক্কা না করে ইসরাইল নামক একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। অবৈধ ভাবে গঠিত রাষ্ট্রটি ৭৬ বছর যাবত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, কারাগারে বন্দি করা সহ নিপিড়ন নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং ক্রমাগত ফিলিস্তিনি ভূমি বেআইনী ভাবে জবর দখল করে ফিলিস্তিনিদেরকে বাস্তচ্যুত করে আসছে। ফিলিস্তিনি জনগণ যেন “নিজ ভূমে পরবাসী”।

মূল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আয়তন ছিল ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রের জবর দখলের পর এখন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আয়তন মাত্র ৬,২২০ বর্গ কিলোমিটার। তন্মধ্যে পশ্চিম তীরের আয়তন ৫,৮৬০ বর্গ কিলোমিটার এবং গাজার আয়তন মাত্র ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার। পশ্চিম তীরে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের এবং গাজায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।

গাজার মাত্র ৩৬০ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট ভূখন্ডে ২০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস যা ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটির সামরিক বাহিনী অবরূদ্ধ করে রেখেছে, বর্হিবিশ্বের সাথে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে যাতে করে বাহির থেকে তাদের কাছে কোন প্রকার ত্রাণ সামগ্রী না পৌঁছে। উপরন্ত তাদের উপর ক্রমাগত বোমা বর্ষন ও  গণহত্যা করে যাচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ! আপনারা নিশ্চয়ই আরও অবগত আছেন যে, ২০২৩ সনের ৭ই অক্টোবরের পর হইতে মার্কিন-ব্রিটিশদের মদদ পুষ্ট হয়ে বর্বর ইসরাইলী সামরিক বাহিনী ও উহার সহযোগীদের ব্যাপক বোমা হামলা, নির্বিচার গণহত্যা ও যুদ্ধে এই পর্যন্ত ৩৭,১৬৪ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫ হাজারের অধিক শিশু এবং ১০ হাজারের অধিক নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৪,৮৩২ জন ফিলিস্তিনি এবং নিখোঁজ রয়েছেন ১০ হাজারেরও অধিক। প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রী না থাকার কারনে ধ্বংস স্তপের নিচে  অসংখ্য ফিলিস্তিনি চাপা পড়ে মৃত্যু বরণ করছে। ৬২% বাড়িঘর ধ্বংস করেছে যা সংখ্যার হিসাবে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার বাড়ি, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লক্ষাধিক মানুষ। গাজার ১২টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবগুলোই ধ্বংস করেছে। হাসপাতালগুলি তারা  সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। বেশীর ভাগ মসজিদ মাদরাসা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে শরনার্থী শিবিরে এবং খোলা আকাশের নীচে পিপাসার্ত ও অনাহার ক্লিষ্ট অবস্থায় রয়েছেন এবং চার পাঁচ হাজার নারী পুরুষের ব্যবহারের  জন্য একটি মাত্র টয়লেট। সেখানে খাবার ও পানির ব্যাপক অভাব রয়েছে। ইসরাইলীদের এহেন কর্মকান্ড গণহত্যা  (জেনোসাইড) এবং জাতি নির্মূলের মতো অপরাধ যার কারণে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাষ্টিসে মামলা দায়ের হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাষ্টিসের আদেশও ইসরাইল অবজ্ঞা করে চলেছে। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগেও নারী-শিশু-বেসামরিক লোকদের হত্যা করা নিষিদ্ধ ছিল এবং বর্তমান আর্ন্তজাতিক আইনেও উহা নিষিদ্ধ। অথচ ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি মার্কিন-ব্রিটিশদের মদদপুষ্ট হয়ে নির্বিচারে নারী-শিশু-বেসামরিক জনসাধারনকে হত্যা করে চলেছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পাশ করেছে, কিন্তু এধরনের প্রস্তাব ও চুক্তি গাদ্দার ইহুদী গোষ্ঠি ইসরাইল কোন তোয়াক্কা করে নাই এবং সকল চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং দোষ চাপিয়ে দেয় নিরীহ ফিলিস্তিনদের উপর। তাদের এ ধরনের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব ও চুক্তি আমেরিকার পাতানো সাজানো নাটক।

এমতাবস্থায় সার্বিক বিবেচনায় ফিলিস্তিনি বিশেষভাবে গাজার বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে এরশাদ করেছেন “ঈমানদারগণ পরস্পর ভাই ভাই”। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন “এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই স্বরূপ। ভাইয়ের বিপদের সময় তাহাকে ছাড়িয়া যাইবে না।” রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেছেন “মুসলমানদের পরস্পর এইরূপ ভালোবাসা ও সহানুভূতিশীল হওয়া দরকার যেমন একটি মানুষের একটি দেহ, উহার যে কোন একটি অঙ্গ আঘাত প্রাপ্ত হইলে সমগ্র দেহখানাই দরদ অনুভব করিয়া থাকে এবং অসুস্থ হইয়া পড়ে।” অন্যত্র এরশাদ করেছেন “যে ব্যক্তি লোকের সহিত সদয় ব্যবহার না করে এবং দয়া প্রকাশ না করে আল্লাহ তায়ালাও তাহার সহিত সদয় ব্যবহার করিবেন না এবং দয়াও প্রকাশ করিবেন না।” আরও এরশাদ করেন “সে ব্যক্তি ঈমানদার নহে যে পেট ভরিয়া খায়, অথচ তাহার পরশী পাশেই অভূক্ত থাকে”। আরও এরশাদ করেন “যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত পেরেশান হালের সহায়তা করিবে, আল্লাহ্ তা’আলা তাহার ৭৩ তিয়াত্তর প্রকার মাগফেরাত (ক্ষমা) লিখিয়া দিবেন, তন্মধ্যে একটিই তাহার সমস্ত কাজের জন্য যথেষ্ট, আর অবশিষ্ট ৭২টি কিয়ামতের দিন বেহেশতের মধ্যে তাহার মর্যাদা বাড়াইবে।” 

ক। ফিলিস্তিনে বিশেষভাবে গাজার মুসলমানদের জন্য আর্থিক সহায়তা করা- এ ক্ষেত্রে দেশের বিত্তবানসহ দেশের সকল জনগণকে ফিলিস্তিনি বিশেষভাবে গাজার মুসলমানদের জন্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। যেহেতু সামনেই ঈদুল আযহায় কোরবানী রয়েছে সেক্ষেত্রে যাদের উপর কোরবানী দেওয়া ওয়াজিব তারা ওয়াজিব পরিমাণ কোরবানী দিয়ে বাকী টাকা এবং যারা নফল কোরবানী করেন এবং প্রতি বছর নফল হজ্জ ও ওমরাহ পালন করেন তারা উক্ত কোরবানী ও হজ্জ ও ওমরাহ খরচের টাকা  বিধ্বস্ত ফিলিস্তিন গাজার মজলুম মুসলমান ভাইদের সাহায্য করলে অনেক বেশি প্রতিদান  পাবেন ইনশাআল্লাহ। “কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ”এর দায়িত্বশীলদের নিকট দাতাগন কোন অনুদান প্রদান করলে উক্ত অনুদানের টাকা ফিলিস্তিনি বিশেষ ভাবে গাজার রাফায় মানবেতর জীবন-যাপনকারী মুসলমানদের নিকট বৈধ উপায়ে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। অনুদান পাঠানোর মাধ্যম পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।

খ। ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখা- ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনির পক্ষে সারা বিশ্বের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এমনকি মানবিক কারণে ইউরোপ আমেরিকার অধিকাংশ বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে অমুসলিম ছাত্র-ছাত্রীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্র সমুহে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি । এমনকি  ৯২%  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশেও তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো শুধু মাত্র মুখে মুখে নিন্দা প্রকাশ ছাড়া কার্যকরী তেমন কোন ভ‚মিকা রাখছে না। এমতাবস্থায় ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনির পক্ষে আমাদের দল মত নির্বিশেষে সোচ্চার হতে হবে। এবং সমস্ত ইসলামিক সংঘঠন গুলো এবং ওলামা মাশায়েখগনকে নিজেদের মধ্যে সকল ভেদাভেদ ভুলে এই ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরালো ভ‚মিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

গ। সংবাদ মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতা- সংবাদ মাধ্যম গুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রাখার কারণে বিশ্ব বাসি আজ মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাড়িয়েছে। আপনাদের এই প্রচার প্রচারণার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের প্রতি জোরালো সুপারিশ করছি।

ঘ। পূনর্গঠণ ও পূনর্বাসনে সহায়তা- বিধ্বস্ত ফিলিস্তিন পূনর্গঠণ ও পূনর্বাসন এবং মৌলিক চাহিদা পূরনের জন্য রাষ্ট্রীয় ও সংস্থা ভিত্তিক সহায়তা প্রদান করা।

ঙ। রাজনৈতিক সহায়তা- সারা বিশ্বে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো এবং ইসরাইলের দখল দারিত্ব অবসানে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

চ। ইসরাইলী পন্য বর্জন করা- সকল প্রকার ইসরাইলী পন্য সম্পূর্ণ রূপে বর্জন ও বয়কট করে তাদেরকে আর্থিক ভাবে দূর্বল করা।

ছ। ফিলিস্তিনির মুসলমানদের হেফাজত ও বিজয়ের জন্য দোয়া করা- ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জান মালের হেফাজত  এবং মসজিদুল আকসাকে ইসরাইলী দখলদারি থেকে মুক্ত করা এবং ফিলিস্তিনিদের বিজয়ের জন্য সকল মসজিদ-মাদরাসায় বিশেষ দোয়ার এহতেমাম করা।

দেশ বিরোধী ও জাতি ধ্বংসের এনজিওদের অপতৎপরতা প্রসঙ্গে প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ! ১৯৭১ সনে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন যুদ্ধের ফলে গোটা দেশ একটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। তখন দেশে নূন্যতম মানবিক চাহিদা তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার চরম সংকট দেখা দেয়। এহেন সংকটময় মুহুর্তে মানুষের দারিদ্রতা ও দূরবস্থার অজুহাতে ধূর্ত ও ধর্মীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে  এনজিওগুলো গায়ে সেবার আকর্ষণীয় লেবেল এঁটে বাংলার বুকে আগমন করে।  এমনিভাবে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়, ১৯৮৮ সালে বন্যার সময়, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময়, ১৯৯৮ সালে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা,২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আশ্রয়ের সময় সহ দেশের দূর্যোগপূর্ন মুহুর্তে এ দেশে এনজিওদের সরব আগমন ঘটেছে। তবে কিছু দিনের মধ্যে তাদের আসল স্বরূপ দেশের উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মহলের সামনে উন্মোচিত হয়েছে এবং উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মহল দেশের সরকার ও জাতিকে এনজিওদের অপতৎপরতার বিষয়ে অবগত করে আসছেন। প্রকৃতপক্ষে সেবার ছদ্মাবরণে অর্থনৈতিক শোষন, ধর্মান্তরীতকরণের মাধ্যমে জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দেশের স্বাধীনতা বিনষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ।

নিম্নে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে এনজিওদের অপতৎপরতার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হল-

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এনজিওদের অপতৎপরতা- এনজিও সংস্থাগুলো অর্থনৈতিক সাহায্যের নামে অর্থনৈতিক শোষণ চালাচ্ছে। তারা ২০% থেকে ৬০% কোন কোন সংস্থা ২২৬% ও ২০০% এরূপ উচ্চ সুদের হারে অর্থ লগ্নী করে। এ সুদ তারা দৈনিক ও সাপ্তাহিক উশুল পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে। আর এই সর্বনাশা ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক পরিবার ভিটে-বাড়ি ছাড়া হয়েছে, অনেকে আতœহত্যা করেছে, অনেকে সন্তান বিক্রি করেছে, অনেকে তাদের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে দারিদ্র বিমোচনের পরিবর্তে এনজিওগুলোর কারণে উল্টো দরিদ্রতা সমাজকে আরও চরমভাবে গ্রাস করে নিচ্ছে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এনজিওদের অপতৎপরতা- এনজিওগুলো দুঃস্থ জনসাধারণকে সাহায্য-সহযোগীতার নামে অনুমোদন লাভ করে এবং কোনরূপ রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা আইনি ভাবেই তাদের জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু বিদেশী খৃষ্টান মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত এনজিওগুলো শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আতœপ্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করছে। এনজিওগুলো শুধু নির্বাচন কালে সক্রিয় থাকে এমন নয়, বরং প্রত্যেকটি রাজনৈতিক ইস্যুতেই তারা কোন না কোন ভাবে নগ্ন হস্তক্ষেপ করে থাকে। এবং আমাদের দেশের উন্নয়নকে ব্যহত করার জন্য আমাদের শিল্প কারখানা ধ্বংস করার জন্য মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ এবং আন্দোলন সংগ্রামের সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক উনয়ন্নে ক্ষতিগ্রস্ত করার নেপথ্যে এই সকল এনজিও কাজ করে যাচ্ছে  যা আমাদের স্বাধীনতা, শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়নের ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ।

ধর্মীয় ক্ষেত্রে এনজিওদের অপতৎপরতা- এনজিওগুলো অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় ধর্মীয় ক্ষেত্রেও মারাতœকভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। মুসলমানদেরকে খৃষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে তারা হরেক রকমের অপকৌশল অবলম্বন করছে। শিক্ষা প্রদানের নামে এনজিও পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা কোমলমতি শিশুদের মগজ ধোলাই করছে। ‘ইসলাম’ ও ‘আল্লাহ’ সম্পর্কে বিভ্রান্তির বীজ তাদের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এভাবে আমাদের আগামী প্রজন্মকে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এমনিভাবে এনজিও সংস্থাগুলো শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জোরেসোরে সারা দেশে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক প্রোপাগান্ডা ও তথ্য সন্ত্রাস চালাচেছ। তারা গ্রাম বাংলার সরলপ্রাণ মুসলমান ভাইদের কাছে বলছে, ‘মুসলমান মানেই দরিদ্র আর খৃষ্টান মানেই ধনবান’। তারা মানুষকে ধর্ম-বিমূখ ও ধর্মহীন করার জন্য নানা কৌশলে শুক্রবারের নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার জন্য উপদেশ প্রদান করে। তারা বলে “ইসলামের ইতিহাস হত্যা ও ধ্বংসের কাহিনী”। তারা ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন বই পত্র বিনা মূল্যে বিতরণ করছে যার মূল বক্তব্য হলো “ইসলামের নবী শান্তির দূত নন বরং তিনি একজন যোদ্ধা। ইসলাম মানবতার মুক্তি দিতে পারে না। পরকালেরও কোন গ্যারান্টি দিতে পারে না। পক্ষান্তরে খৃষ্ট ধর্ম দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যান বিধান করে।” এভাবে সরল প্রাণ মুসলমানদেরকে ধোকা দিয়ে ও বিভ্রান্ত করে খৃষ্টান বানাচ্ছে এবং ইসলামি শিক্ষা বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত, শিক্ষা বিষয়ক নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করে জাতিকে ইসলাম শূন্য করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ২৩/০৫/২০২৪ ইং তারিখে বক্তব্যে যথার্থই বলেছেন যে, “এদেশের একটি অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুর এর মত ভিন্ন একটি খৃষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র চলছে।”

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! এমতাবস্থায় এনজিওদের অপতৎপরতারোধে আমাদের দাবী হলো-

ক। যে সকল অঞ্চলে খৃষ্টান এনজিও ও মিশনারী সেবার নামে খৃষ্টান বানানোর অপতৎপরতায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে অবিলম্বে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করা, ঐ সকল স্থানে ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অথবা অনুমোদিত মুসলিম এনজিওদের মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষা ও দাওয়াতের মেহনতের সুযোগ সৃষ্টি করা।

খ। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে একটা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত মুসলিম সন্তানদের জন্য ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। বর্তমানে প্রচলিত বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা। এই শিক্ষা করিকুলাম আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে তাদের থেকে ইসলামিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণ ভাবে বিনষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে শিক্ষানীতি ও শিক্ষা কারিকুলামে হক্কানি উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষানীতি ও কারিকুলাম প্রনয়ন করা। উল্লেখ যে বর্তমানে শিক্ষা কারিকুলাম বোর্ডের অন্যতম সদস্য ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল প্রকাশ্য ভাবে সেমিনারে ব্যক্তবে নিজের দোষ স্বীকার করে বলেছে শিক্ষার্থীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে ভুল করেছি এবং তাদের সর্বনাশ করেছি এবং তিনি বর্তমান বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলামের মূল প্রণেতা।

গ। ব্রিটিশদের প্রবর্তিত  শিক্ষা কারিকুলামে মূল লক্ষ্যই ছিল ধর্মহীন কর্ম শিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে ইসলাম শূণ্য করা তা বর্তমানে ৯৮% সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। মুসলিম জাতিসত্ত¡া আজ হুমকির সম্মুখীন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যেক গ্রামে পাড়া মহল্লায় মক্তব মাদরাসা কায়েম করে মুসলমান সন্তানদের বাল্যকালেই দ্বীনি শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করা। নতুবা ৯২% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে আমাদের সন্তানেরা নাস্তিক্যবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্নের কারণ হবে। ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে বিভিন্ন মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে ইসলামের নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে।

কোরবানীর পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করণ প্রসঙ্গে প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! দেশে চামড়াজাত পণ্যের দামের তুলনায় চামড়ার দাম একেবারেই নগন্য। যার কারণে চামড়ার দাম কমে যাওয়ার ফলে গোস্তের দাম বৃদ্ধি পেঁয়েছে। চামড়ার তৈরি পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী। এক জোড়া জুতা কিংবা একটি চামড়ার ব্যানিটি ব্যাগের কমপক্ষে মূল্য যেখানে ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকার অধিক, সেখানে একটি গরুর চামড়ার দাম মাত্র ৪০০/৫০০ টাকা এবং একটি ছাগলের চামড়ার তো কোন মূল্যই নেই। যে চামড়ার দ্বারা এত দামি পণ্য তৈরি হয় সেই চামড়ার মূল্য এত কম কেন? এখানে মধ্যসত্ত¡ ভোগি সিন্ডিকেট দায়ী। এ দ্বারা স্পষ্টতঃই প্রমাণিত হয় যে, দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী সিন্ডিকেট চামড়ার অবমূল্যায়নের সাথে জড়িত। উল্লেখ্য যে কোরবানির চামড়ার মূল্য সম্পূর্ণ গরিবদের হক। এ বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত সরকারের কাছে বার বার দাবি করা সত্তে¡ও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে না। আমাদের দাবি হলো সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের খুজে বের করে দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ! আপনাদের প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে বিশ্ববাসী নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি ও বিশ্ব মানবতার বিবেক জাগ্রত ও সোচ্চার হচ্ছে। আজকের সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি ও আন্তরিক সহযোগিতার জন্য কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক মোবারকবাদ এবং একইসঙ্গে উপরোল্লিখিত সুপারিশ ও দাবিসমূহের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য আপনাদের আন্তরিক ভূমিকা ও সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ক‌ওমি মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদের সহ সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদ, মুফতি ইকবাল, ক‌ওমি মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদের মহাসচিব মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ হামিদী, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা শুয়াইব আহমদ আশরাফী, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা ফয়জুল্লাহ, মাওলানা এনামুল হক আইয়ুবী, মাওলানা জালাল আহমদ, মাওলানা নাসির উদ্দিন, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা আবুল খায়ের ভৈরবী, শায়েখ ইসমাইল হোসাইন সাইফী, মুফতি মুয়াবিয়া আল হাবিবী, মুফতি রফি উদ্দীন মাহমুদ নুরী, মুফতি ওমর ফারুক যুক্তিবাদী, মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ নোমানী প্রমুখ।

কেএল/