দুর্যোগ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানালেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৪, ১১:৩০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ভৌগলিক কারণে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ কারণে আগামীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে― এ ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য ও ঢাকা-১৪ আসনে সদস্য মো. মাইনুল হোসেন খানের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনার কথাগুলো জানান সরকারপ্রধান। এদিন সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকার কৌশল প্রণয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করায় দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় নানা ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন ঝুঁকি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ঈর্ষণীয় সফলতা লাভ করেছে। যা বিশ্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন বন্যা ও আপাদকালীন সময়ে দুস্থ ও অসহায়দের আশ্রয়ণের জন্য বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, মুজিব কিল্লা নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করার পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রতি জেলায় ত্রাণ গুদাম কাম তথ্য কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। যাতায়াত সহজ করার জন্য কাঁচা রাস্তা নির্মাণ ও কাঁচা রাস্তায় হেরিং বোন বন্ড করাসহ প্রয়োজনীয় জায়গায় সেতু বা কালভার্টও তৈরি করা হয়েছে।

ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগ মেগা ডিজাস্টার মোকাবিলার লক্ষ্যে চীনের সহযোগিতায় ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় এক হাজার জমির ওপর একটি অত্যাধুনিক ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৮.০ রিখটার স্কেলের অধিক ভূমিকম্প সহনীয় এই ভবনের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।

দুর্যোগের সময় অল্প সময়ে দুর্গত এলাকার জনগণ যাতে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পারে, সহজে চিকিৎসা সেবা পেতে পারে, গবাদিপশু দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকল্পে গ্রামীণ রাস্তায় পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারের মাধ্যমে ৫০০০ কিলোমিটার হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসতবাড়ির ভিটি উঁচুকরণের মাধ্যমে দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরিতে সহায়তা করাসহ দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে দেশের অধিক বন্যাপ্রবণ ৫টি জেলার বসতবাড়ির ভিটি উঁচুকরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

অধিক বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলায় সৃষ্ট বজ্রপাত থেকে মানুষ এবং প্রাণিসম্পদকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ৬৭৯৩টি বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে বিপদাপন্ন মানুষ ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এবং প্রাণিসম্পদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য আরও ১২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বন্যার সময় বিপদাপন্ন মানুষ ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এবং প্রাণিসম্পদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য ৫০০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় সেল ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য ১০০টি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র কাম ত্রাণ গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

এনএ/