ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কি কোরবানি করা ওয়াজিব?
প্রকাশ: ১১ জুন, ২০২৪, ০৫:৪৪ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মত্যাগ। কোরবানি শুরু হয়েছিল হযরত আদম আ.-এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিল থেকে। পরবর্তীকালে কোরবানির জন্য হযরত ইবরাহিম আ. ও তার শিশুপুত্র ইসমাইল আ.-এর আত্মবিসর্জন কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মুমিনের জন্য অনন্য শিক্ষা ও প্রভুপ্রেমের পাথেয়।

আল্লাহ তায়ালা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন’ (সুরা কাউসার: ২)

যার উপর কোরবানি ওয়াজিব নয় তার জন্য কোরবানি করার চেয়ে ঋণ পরিশোধ করাই উত্তম। কেননা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কোরবানির দিনগুলোতে ঋণগ্রস্ত থাকে, যা পরিশোধ করে দিলে তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে না, তাহলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।

আর যদি ঋণ পরিশোধের পরও কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯২)

তবে ঋণ থাকা অবস্থায় কেউ কোরবানি দিলে তার কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। 

আসলে ঋণ পরিশোধ করা ও কোরবানি করা দুটি আলাদা হুকুম। একটির কারণে অন্যটি আটকে থাকবে না‌। ঋণ করে নফল কোরবানি করা উচিত হবে না।

কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর যদি প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঋণ করে হলেও কোরবানি দিতে হবে। পরে তা পরিশোধ করে দেবে। অন্যথায় কোরবানির দিন চলে গেলে পরবর্তীতে একটি মধ্যম মানের বকরির মূল্য কোরবানির নিয়তে সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৪৫৩-৯/৪৫২; দুররুল মুখতার: ৯/৪৬৩)

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন স্বাধীন মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব। যদি সে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। (দুররুল মুখতার: ৫/২১৯)

নেসাব

স্বর্ণের ক্ষেত্রে নেসাব হলো- সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি আর রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। অর্থাৎ কারো মালিকানায় ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ থাকলে অথবা সড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো- মূল্য সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্রের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (মাবসুতে সারাখসি: ১২/৮, রদ্দুল মুহতার: ৬/৬৫)

ওয়াজিব কোরবানি না করা কঠিন গুনাহের কাজ। রাসুলুল্লাহ স. তাদের অভিসম্পাত করেছেন। নবীজি বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমদ: ৮২৭৩; ইবনে মাজাহ: ৩১২৩; হাকেম: ৭৫৬৫-৭৫৬৬)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন

এনএ/