আল্লাহর শুকরিয়ায় নেয়ামত বাড়ে
প্রকাশ: ০৯ জুন, ২০২৪, ০৫:৫৫ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

দয়ালু আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের বিন্দুমাত্র শুকরিয়াও আদায় সম্ভব নয় সমুদ্র সমান কালি-কলমের মাধ্যমে। তারপরও সম্ভবপর সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা মুমিনের কর্তব্য।

আল্লাহ তায়ালা অমুখাপেক্ষী আর আমরা তাঁরই দয়ার মুখাপেক্ষী। আমাদের জীবন-মরণ, দুনিয়া-আখেরাত তাঁরই দয়ায় আবর্তিত। আমাদের স্বার্থেই আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ডাকি।

মহান প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা মানুষের দীনতা-হীনতা প্রকাশ করাকে পছন্দ করেন ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ বান্দাদের ভালোবাসেন এবং শোকরকারীদের নিয়ামত বাড়িয়ে দেন।

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেছেন,
(স্মরণ করাে,) যখন তোমাদের মালিক ঘোষণা  দিলেন, যদি তােমরা (আমার অনুগ্রহের) শােকর আদায় করো তাহলে আমি অবশ্যই তােমাদের জন্য (এ অনুগ্রহ) আরাে বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তােমরা (একে) অস্বীকার করো (তাহলে জেনে রেখো), আমার আজাব বড়ই কঠিন।( সূরা ইবরাহিম-৭)

আল্লাহ জাল্লা শানহু কখনো জুলুম করেন না। আমরা নিজেরাই আমাদের ওপর জুলুম করি।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
(এ শাস্তি তাদের জন্য) যারা পার্থিব জীবনকে পরকালীন জীবনের ওপর প্রাধান্য দেয়, (মানুষকে) আল্লাহর (সহজ সরল) পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়, (সর্বোপরি) এ পথকে (নিজেদের খেয়াল খুশিমতাে) বাঁকা করতে চায়, এরাই হচ্ছে সেসব লােক যারা মারাত্মক গােমরাহিতে নিমজ্জিত রয়েছে। (সূরা ইবরাহিম-৩)

রাহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ রাহবার-পথপ্রদর্শক হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে আল্লাহ তায়ালার দাস মনে করে ইবাদতে মশগুল হতেন।

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে এত দীর্ঘ সালাত আদায় করতেন যে, তার দুই পা ফুলে যেত। একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন এত কষ্ট করছেন? তিনি বললেন, এত নিয়ামতের পরও আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে আগ্রহী হবো না? (বুখারি)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ আমাদের চলার পথে পরম পাথেয়। তার প্রদর্শিত সিরাতুল মুস্তাকিম-সরল পথে চলার সময় ইবলিস শয়তান সবসময় ধোঁকা দিতে থাকে। তাই আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে এর সাথে ফাইট  করতে হবে। মুমিনের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হলো আল্লাহ তায়ালার জিকির। আল্লাহর স্মরণে শয়তান পালায়। তাই শয়তানকে কোনোরকম সুযোগ ও ছাড় দেয়া যাবে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেছেন,
যখন বিচার ফয়সালা হয়ে যাবে তখন শয়তান জাহান্নামিদের বলবে, আল্লাহ তায়ালা তােমাদের সাথে (যে) ওয়াদা করেছেন তা (ছিল) সত্য ওয়াদা, আমিও তােমাদের সাথে (একটি) ওয়াদা করেছিলাম; কিন্তু আমি তােমাদের সাথে ওয়াদার বরখেলাপ করেছি; (আসলে) তােমাদের ওপর আমার তো কোনো আধিপত্য ছিল না, আমি তাে শুধু এটুকুই করেছি, তােমাদের (আমার দিকে) ডেকেছি, অতঃপর আমার ডাকে তােমরা সাড়া দিয়েছো, তাই (আজ) আমার প্রতি তােমরা (কোনাে রকম) দোষারোপ করো না, বরং তােমরা তােমাদের নিজেদের ওপরই দোষারােপ করাে; (আজ) আমি (যেমন) তােমাদের উদ্ধারে (কোনাে রকম) সাহায্য করতে পারব না, (তেমনি) তােমরাও আমার উদ্ধারে কোনাে সাহায্য করতে পারবে না; তােমরা যে (আগে) আমাকে আল্লাহর শরিক বানিয়েছো, আমি তাও আজ অস্বীকার করছি (এমন সময় আল্লাহর ঘােষণা আসবে); অবশ্যই জালেমদের জন্য রয়েছে কঠিন আজাব।(সূরা ইবরাহিম-২২)

আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ অনুকরণ-অনুসরণে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে লিপ্ত হ‌ওয়ার বিকল্প নেই।  দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির সেই স‌ওগাত  দেয়া হয়েছে কুরআন মাজিদে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, (অপর দিকে) যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে এবং (সে অনুযায়ী) নেক কাজ করে, তাদের এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করানাে হবে, যার পাদদেশে প্রবাহিত হবে (রঙ-বেরঙের) ঝর্ণাধারা, সেখানে তারা তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে অনন্তকাল অবস্থান করবে; সেখানে (চার দিক থেকে) সালাম সালাম বলে তাদের অভিবাদন জানানো হবে। (সূরা ইব্রাহিম-২৩)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার কতটা কাছে তা তিনি কুর‌আনুল কারিমের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। আর‌ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই মুমিনের জীবনের মুক্তির মূল সোপান।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর (হে রাসূল) আমার বান্দা যখন তোমার কাছে আমার কথা জিজ্ঞেস করে তখন (তাদেরকে তুমি বলে দাও) অবশ্যই আমি তাদের অতি কাছে; তারা যখন আমাকে ডাকে তখনই আমি তাদের ডাকে সাড়া দিই। অতএব তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়, আমার ওপর যেন দৃঢ় ঈমান (পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা) রাখে, তাহলেই আশা করা যায় তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে। (সূরা বাকারাহ-১৮৬)

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

এনএ/