সমুদ্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান: চবি উপাচার্য
প্রকাশ: ০৮ জুন, ২০২৪, ০৬:৩১ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট শনিবার (৮ জুন ২০২৪) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের মাধ্যমে বিশ্ব সমুদ্র দিবস উৎযাপন করে। অনুষ্ঠান শুরু করার আগে বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষে একটি র‍্যালী শহরের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।

৭০০ কোটি মানুষের বসবাসের এই ছোট্ট সবুজ পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশই সমুদ্র। সভ্যতার এই অত্যাধুনিক যুগে বিশাল এই সমুদ্রকে জানতে, সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতিকে বেগবান করতে বহুবছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স। এরই ধারাবাহিকতায়, অত্র ইনস্টিটিউটের তরুণ সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে সমুদ্র বিষয়ক জ্ঞান, সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ এবং সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এই আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে গুণগত শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রগতির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

পাশাপাশি, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে যথাক্রমে মায়ানমার এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সমুদ্র বিজয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে, সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে মেরিন সায়েন্স এবং সমুদ্র নিয়ে কাজ করে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন ও লক্ষমাত্রা অর্জনে কাজ করতে বলেছেন তিনি।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক, অধ্যাপক ড. শেখ আফতাব উদ্দিন, উপস্থিত অতিথিদের বিশ্ব সমুদ্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সুনীল আর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ সরকারের অবদানগুলো তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে জলবায়ুর পরিবর্তন, সামুদ্রিক পরিবেশ,  সমুদ্র ও সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এছাড়াও অত্র ইনসটিটিউটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সমুদ্র স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।

প্রফেসর সাইদুর রহমান চৌধুরী, তার 'এওয়েকেন নিউ ডেপ্থ, নো ইউর সি' বিষয়ক বক্তব্যে, সমুদ্রের গঠন, আয়তন, সমুদ্রের বিভিন্ন উপাদান, জলবায়ুর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সমুদ্রের ভূমিকা, সমুদ্র দূষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়াও তিনি সমুদ্র বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা করেন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন, তার 'ওশেন ফর ফুড, এমপ্লয়েমেন্ট এন্ড ইকোনমি' বিষয়ক বক্তব্যে, বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স এর অর্জনগুলো তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে আগামি দিনে বাংলাদেশ সরকার ও অত্র ইনস্টিটিউটের ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলো উল্লেখ করেন। এছাড়াও, সমুদ্র বিষয়ক বিভিন্ন সেক্টরকে সম্মিলিত হয়ে কাজ করতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, তার 'ওশান বেড ২০৩০, এ চ্যালেঞ্জ ফর দা ওশেন ম্যাপার' বিষয়ক বক্তব্যে, সমুদ্র তলদেশের গঠন, এবং গেবকো ফাউন্ডেশনের সমুদ্রের তলদেশ সূক্ষ্ম পরিমাচক যন্ত্রাংশ আবিষ্কার এবং তার প্রায়োগিক দিকগুলো তুলে ধরেন। এছাড়াও তরুণ সমুদ্র বিজ্ঞানীদেরকে, সি বেড ম্যাপিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তুলার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষ অতিথির ব্যক্তব্যে, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সমুদ্রের জীব বৈচিত্রের পরিবর্তন এবং এই পরির্বতন সম্পর্কে কার্যকর গবেষণার জন্য সংশ্লিস্ট গবেষকদের আহ্বান জানান। সামুদ্রিক ও উপকলীয় বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে করণীয় বিষয়াদি নিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য পেশ করেন তিনি। পাশাপাশি, সমুদ্র গবেষণাকে অনেকদূর এগিয়ে নিতে ইনস্টিটিউটের পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য যে, সুনীল অর্থনীতির এই একুশ শতকে সমুদ্র সম্পর্কিত জ্ঞানকে পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছে দিতে, বিশাল সমুদ্রের মৎস সম্পদ আহরণ,  সমুদ্রের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান, সমুদ্রের পরিবেশ ও আবহাওয়া বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা, উপকূলীয় জনসাধারণের উপর জলবায়ুর প্রভাব নিরুপণ এবং সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার  উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সাল থেকে সমুদ্র বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উপর পাঠদান করে আসছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।

হাআমা/