যেভাবে চলছে কওমি মাদরাসার ছাত্র কাফেলাগুলো-৩
প্রকাশ: ২৮ মে, ২০২৪, ০৬:০৮ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

কওমি শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে মাদরাসাগুলোতে ‘ছাত্র কাফেলা  বা ছাত্র সংসদ’ নামে  স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। কাফেলার উদ্যোগে বছর জুড়ে বক্তৃতা, বিতর্ক, প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রণয়নসহ নানা শিল্প-সংস্কৃতিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়ে থাকে।

মাদরাসার মুহতামিম বা পরিচালকের অনুমোদনে কোথাও শিক্ষকদের থেকে একজনকে বানানো হয় দায়িত্বশীল সভাপতি, কোথাও ছাত্রদের থেকে সভাপতি-সেক্রেটারি নির্ধারণ করে কমিটি গঠন করে পরিচালিত হয়ে থাকে ছাত্র কাফেলা।

বছর জুড়ে কী কী আয়োজন করে থাকে, কীভাবে নানা আয়োজন বাস্তবায়ন করে থাকে সেসব জানতে ছাত্র কাফেলা বা মাদরাসা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। আজ থাকছে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ‘জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা'র ছাত্র কাফেলা ‘ছাত্র জমিয়ত বারিধারা ক্যাম্পাস শাখা’র গল্প।

প্রথম পর্বের লিংক:
যেভাবে চলছে কওমি মাদরাসার ছাত্র কাফেলাগুলো-১

দ্বিতীয় পর্বের লিংক:
যেভাবে চলছে কওমি মাদরাসার ছাত্র কাফেলাগুলো-২

গল্প জানাচ্ছেন মাদরাসাটির শিক্ষক মুফতি গোলাম রাজ্জাক কাসেমী

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, গুলশান, ঢাকা, ১২১২। রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ডিপ্লোমেটিক জোনে অবস্থিত। যার প্রতিষ্ঠা রাহবারে মিল্লাত আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.। তিলে তিলে গড়ে তোলা কাঁদা মাটিকে তিনি বানিয়েছেন সোনার খনি। দীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষা, মুজাহাদা ও শ্রমের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের রূপধারণ করেছে আল্লামা কাসেমী প্রতিষ্ঠিত এ জামিয়া।

এ জামিয়ায় উপমহাদেশের শতবছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সংগঠন 'জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ'-এর ছাত্র সংগঠন 'ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ' এর কার্যাবলী চালু রয়েছে। প্রতি শিক্ষার্বষের সূচনাতেই চিন্তাশীল, মেধাবী ও কর্মঠ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তৈরি করা হয় একটি কমিটি। যার সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানের কোনো উস্তাদ দায়িত্ব পালন করেনন। এছাড়া সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য ছাত্ররাই দায়িত্ব পালন করেন।

বারিধারার মুহতামিম, শায়খুল হাদিস ও ছাত্র জমিয়ত ক্যাম্পাস শাখার উপদেষ্টা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর পরামর্শে বছর জুড়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে বারিধারা ক্যাম্পাস শাখা। বছরের শুরুতেই সবকের ইফতিতাহ ও আরবি-বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়। আদব বিভাগের মাধ্যমে আরবি দেয়ালিকা ও জালালাইন জামাতের মাধ্যমে বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশিত হয়। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সীরাত অধ্যয়ন ও রচনা প্রতিযোগিতা, হামদ-নাত ও সীরাত কুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ মুগ্ধকর বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এছাড়াও আদব বিভাগের সৌজন্যে বছরব্যাপী আরবি বক্তৃতা, উপস্থাপনা ও শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষ করে তুলতে বিশেষ আয়োজন থাকছে।

ছাত্র জমিয়ত ক্যাম্পাস শাখার সভাপতি মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী জানান, লেখালেখির ক্ষেত্রে ছাত্রদের দক্ষ করে তুলতে বছরের প্রতি মাসেই লেখালেখির বুনিয়াদি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।  ছাত্রদের আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও ক্যাম্পাস শাখার সমন্বয়ে তরবিয়তি মজলিস, মাসে একবার ইসলাহী মজলিসের আয়োজন করা হয়।

বারিধারা ক্যাম্পাস শাখার উদ্যোগে ছাত্রদের বক্তৃতার ময়দানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বৃহৎ বাজেটে বড় পরিসরে বার্ষিক বাংলা, আরবি বক্তৃতা সেমিনারের  আয়োজন করা হয়। সেমিনারে আরবি ও বাংলা বিভাগে বর্ষসেরা বক্তা নির্বাচন করে মানসম্পন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। আলাদা আয়োজনে হিফজুল কোরআন ও বিষয়ভিত্তিক হিফজুল হাদীস প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।

মাদরাসার বিভিন্ন সেক্টরের জিম্মাদারদের সারাবছর ঐ সেক্টরগুলোতে অবদান রাখায় বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। মাদরাসা ক্যাম্পাস পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজসজ্জার বিষয়েও ছাত্র জমিয়ত ক্যাম্পাস শাখা দায়িত্ব পালন করে। মাদরাসার বাগান পরিচর্যা করে। রয়েছে সমৃদ্ধ পাঠাগার। যা প্রাচীন ও আনুখা কিতাবাদিতে ভরপুর। যা থেকে ছাত্ররা সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ ও অধ্যয়ন করতে পারে। ছাত্র জমিয়ত ক্যাম্পাস শাখার বাৎসরিক ব্যয় প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা। যা বছরের বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান উপলক্ষে উস্তাদ, ছাত্র ও হিতাকাঙ্ক্ষীদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যবস্থা হয়।

সর্বোপরি সঠিক ধারায় শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে ছাত্র জমিয়ত বারিধারা ক্যাম্পাস শাখার রয়েছে আরো অনেক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।

হাআমা/